বৈশাখের পংক্তিমালা
করোনাক্রান্ত বৈশাখ ১৪২৭: মোহাম্মদ হোসাইন
হালখাতা খুলেছে বৈশাখ
সংঘ দিয়েছে লকডাউন
প্রকৃতির লকডাউন নেই
লকডাউন নেই মেঘেদের, মাছেদেরও
পাখিদের কি আছে? বৃক্ষদের?
সভ্যতার স্মারক যারা, তারা বরাবর শৃঙ্খলাপরায়ণ।
আর মানুষ?
ধানের গন্ধ আসছে, গন্ধ আসছে মুকুলেরও—
রোদ ভেজে নিচ্ছে পাটশাক, নিমবড়া প্রাকৃতিক
সর্ষে-ইলিশ চেটে নিচ্ছে শিশুতোষ প্রচ্ছদ
মুখোশে ঢাকা আমাদের মুখ, দূরত্ব তিনফুট; ঝড় যদি আসে এবেলা
লুকাব না, নিয়ে যাক পৃথিবীর জঞ্জাল।
সন্ধিক্ষণে: মোর্জিনা মতিন কবিতা
নামাজে করোনামুক্তির প্রার্থনা, ইয়োগায় ইমিউনিটি বাড়ানোর প্রত্যয়, মেডিটেশনে ‘আমি সুখী, আমি সফল’ জপমালায় প্ররোচনা। এরপর আবার নিয়মমতো প্রাণের কোথাও প্রাত্যহিক বেদনা। এই সব বেদনা এড়াতে কফির মগের কাছে পড়ে থাকা সেলফোনই প্রেরণা। আকুলিবিকুলিকালের প্রিয়তাগুলো সব জড়ো হয়ে আছে সেখানকার ইউটিউবে। করোনা ভুলে থাকতে না-পছন্দ কারিনার বড় বোন ক্যাটসআই কারিশমা, স্মাইলকিলার মাধুরী, হার্টথ্রব শাহরুখকে দেখে নিই এক ঝলক—পলকহীন চোখে, কর্ণকুহরে করে, ‘চাকভুমভুম’ গানের ভেতর। দেখি, কেননা, এই গানে সরলপনা শিশুর আছে একটা জটলা, আর তুমুল বৃষ্টি আছে একপশলা। চৈত্র আর বৈশাখের এই সন্ধিক্ষণে ঘরবন্দী আমি প্রিয়তার সবকিছুতে মিলেমিশে যাই সম্পূর্ণ নিজস্বতায়।
স্পর্শ : রুবাইদ আহমেদ
অল্প দেখায় পারতে না যে থাকতে,
সেই এখন শিখলে দেখা রুখতে।
বলছ শুধু বের না হতে,
সাবান মেখে দুহাত ধুতে।
করছ না আর হাতটা ধরতে বায়না
একলা হৃদয় তোমায় ভেবে,
আকাশ-মেঘে কোথায় যাবে?
স্পর্শ ছাড়া আর তো কিছু চায় না।
শৃঙ্খলিত বৈশাখ : তুহীন বিশ্বাস
বঙ্গীয় উৎসবের স্মৃতিরা বিস্মৃত
আবছায়ারা দিগভ্রান্ত, প্রায় মৃত।
রমনার বটমূল শূন্যতায় নিস্পৃহ
আতঙ্কিত শিল্পীরা, অবরুদ্ধ গৃহ।
কষ্টেরা বিস্তৃত এবং শৃঙ্খলিত বৈশাখ
বাজে না আর রমণীর বরণ শাঁখ।
শঙ্কিত শুষ্ক ওষ্ঠে সংস্কৃতি থমকে
নববর্ষ এক অদৃশ্য শক্তির চমকে।
নষ্টরা উবে যাক বৈশাখী হাওয়ায়
অন্তরীক্ষে সুশৃঙ্খল জীবনধারায়।
বৈশাখ তুমি : শামিম ইশতিয়াক
বৈশাখ তুমি ঝরে পড়ো
গঞ্জের ওই খেয়াঘাটে,
বৈশাখ তুমি ষোড়শীর সাথে
বৈকালের ওই মাঠে।
বৈশাখ তুমি আলপনা যেন
প্রেয়সীর চোখের পাতা,
বৈশাখ তুমি পাঞ্জাবি-শাড়ির
গায়ে মাখা উষ্ণতা।
বৈশাখ তুমি রং ছিটাও
ভাবঘুরে দেহে,
বৈশাখ তুমি প্রেমিক হারানো
প্রেমিকার লোভ মোহে ।
বৈশাখ তুমি এসো এসো
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গান,
বৈশাখ তুমি এসো নিয়ে
সুস্থ অনির্বাণ।