মহাদেব সাহা
জীবনসূত্র
জীবন এ রকমই—সুখ–দুঃখ, ভালো–মন্দ,
কেন চোখের জলে বুক
ভাসাবে!
সুখে–দুঃখে স্থির থাকো,
মেনে নাও,
অন্য পথ নেই,
ভালো–মন্দে সুখ–দুঃখে নির্মোহ হও;
এই হচ্ছে পাঠ, জীবনসূত্র,
অভ্যাস করো;
কেন কেঁদে বুক ভাসাবে!
তোমাকে নীরবে বইতে হবে
সুখ–দুঃখের
ভার
এই হচ্ছে পৃথিবী, এই হচ্ছে জীবন তোমার।
আলতাফ হোসেন
দাঁড়াও আমার কথা আগে বলে নিই
দাঁড়াও আমার কথা আগে বলে নিই
তারপর যা বলার তা বলব নাহয় পরে
অক্ষর না বসিয়ে
চিহ্ন নয়
ভাড়া করে আনব বিদূষক
সবুজ বোর্ডের একটু ওপরে–ওপরে
সে হলুদ চকটি বুনোবে
নৈঃশব্দ্যের
আবিদ আনোয়ার
বৃত্রাসুরবধ কাব্য
যদিও দধীচি নই, মহাশক্তি আছে এই হাড়ে—
এটাও লাগাও কাজে স্বর্গরাজ্য পুরোটা উদ্ধারে,
না হলে সোনার স্বপ্ন থেকে যাবে মেটে ও তামাটে,
হতাশ্বাসে ম্রিয়মাণ কেউ-কেউ আগাবে না মাঠে;
বাতাসে পতাকাগুলো বেঁকে-চুরে প্রশ্নচিহ্ন হয়ে
উড়বে আরও বহুকাল অবিরত খণ্ড-পরাজয়ে।
আমি এক মুক্তিযোদ্ধা করে যাচ্ছি এই অসিয়ত:
কথা রাখলে পেয়ে যাবে আকাঙ্ক্ষিত নব যাত্রাপথ।
পতাকাশোভিত লাশ দৈবক্রমে নড়ে ওঠে যদি,
নিয়ে যেয়ো হাসপাতালে, যেন কোনো অভিজ্ঞ ডাক্তার
আমার শরীর থেকে একে-একে খুলে নেয় হাড়:
এখানেই জেগে ছিল একাত্তর মরণ অবধি।
এই হাড়ে সুপ্ত এক বজ্ররূপী টুকরো মুজিবুর—
যার নামে কেঁপে ওঠে দনুপুত্র যতেক অসুর।
ফারুক মাহমুদ
থাকা এবং না-থাকা
সকল থাকার মধ্যে নিরঙ্কুশ স্থায়িত্ব খুঁজো না
খেদ হতে পারে—
আত্মজীবনীর শেষ পৃষ্ঠা চিরকাল অলিখিত থাকে
অন্ধ, যে-ভিক্ষুকটিকে দেখি
ফুটো পাত্র, শীর্ণ গা, কোণঠাসা ভিড়ে...
একদিন তাকে আর কোথাও দেখি না
থাকার মধ্যে না-থাক, না-থাকার মধ্যে থাকাগুলো
সঙ্গমের উর্বর ভঙ্গির মতো এক হয়ে যায়
রূপান্তর আছে, আছে বিলুপ্তির শাখা–উপশাখা
না-থাকা থাকুক । মন, তুমি কিন্তু পালাতে চেয়ো না
সোহরাব পাশা
রাজনীতি
স্বপ্নের পরিমার্জনা মুখর
শুধু মানুষ ভালো থাকার কোনো রাজনীতি নেই,
দুর্দান্ত সুন্দর ভাঙে
তীব্র জল ডাকে চোখের পাতায়
ডেকে ওঠে কালের বিষাদ—নষ্টধূলি
আগুনসন্ধ্যায়
ঘরমুখী দ্রুত ছোটে নিঃস্ব হাটুরিয়া
অন্ধকাঁটা বিঁধে যায় পায়ের তলায়
শঙ্কিত আঙুলগুচ্ছ নুয়ে পড়ে
অপ্রাপ্তির নিঃস্বতায়;
কথার কুহক আজ বড় রাজনীতি।
শুভাশিস সিনহা
ছায়া-কায়া
আমি যে ছায়ার ধারে যাই
তুমি থাকো সেই কিনারায়?
কার ঢেউয়ে কার কূল ভাঙে
অশরীর শরীরে মিলায়!
আমি তো ছায়ার কাছে ফিরি
কবে তার মুছে গেছে রেখা
তুমি কোন তুলিতে এঁকেছ
আমাদের চিরভেদলেখা।
আমি সে ছায়ার ঠোঁটে ঠোঁট
তারই হাসি আগুনে রাঙাই,
তুমি জলে ডুবলে অতলে
ভাসি আমি মায়াবী ডাঙায়।
আমি যে ছায়ার হাত ধরি
তারই চুলে বেণি করো তুমি,
আকাশের ওপারে আকাশ
ভূমির ভেতরে আনভূমি...
তুষার কবির
ছাতিম বনের পাশে
ছাতিমবনের পাশ ঘেঁষে হেঁটে যাই এ বিকেলে—জগতের যুদ্ধ, মুদ্রা, মোহ চিরে!
ছাতিমবনের মাঝে কুহক ছড়ানো ঘ্রাণ; হাওয়ায় উড়ছে দেখি ভেজা ভেজা নীল খাম, ময়ূরীর গান থেকে ঝরে পড়ছে পেখম! ইউক্রেন–রূপসীর শেষ চিঠি থেকে আছড়ে পড়ছে শুধু মাতম!
গোধূলির লালাভ আলোয় হেঁটে যাই ছাতিমবনের সরু পথে। গাজার কিশোরী রক্তখামে পাঠিয়েছে ভাই হারানোর কান্না—কাফনে মোড়ানো দুঃখলিপি!
জগতের রণ, রক্ত, ত্রাস চিরে হেঁটে যাই এ বিকেলে—ছাতিমবনের পাশ ঘেঁষে!