বৃষ্টি: মনোমুগ্ধকর খুনি

বৃষ্টিবিষয়ক নিবেদন শুরু হওয়ার আগে আগে আমাদের সমাবেশে ফিরলেন একা একা নীল অধ্যাপিকা। বাতাস তখন আগুন আগুন, পলকে পলকে তার রমণীয় শিখা। বৃষ্টি নামের যে ছাত্রী পরে এসেছিল নীল, যাকে ভেবেছিলাম সুদূরের মেঘে এক ফোঁটা তিল, তার দিকে তাকানোর পর, অধ্যাপিকা—উঠে এসে একা একা, বললেন, বের হয়ে যাও তুমি ফেলে রেখে এই সব অধ্যয়ন। তার চেয়ে ভালো তোমার নিকট বনের ভেতরে বন। সেই কুহরণ কণ্ঠে যেন দৃষ্টিবিদ্যুৎ, আসছে উঠে নীলাভ সাঁতার বেয়ে। আমাদের পুরো ক্লাস সেই আলেয়াতে গেল ছেয়ে।

মেয়েটি রাস্তায় নেমে পথ ও ছাত্র-পথের উপপথ বেয়ে অদৃশ্যই হয়ে গেল। ভুলে অথবা না-ভুলে রেখে গেল তার উড়ন্ত ওড়না—যার ভেতরে আমরা দেখি শুধু উচ্ছল বেষ্টনী, গোপন উষ্ণতা, গোলাপি নীলাভ ছায়া অথবা ঢেউখোলা তিনি

বৃষ্টি নামের মেয়েটি অথবা অধ্যাপিকার দৃষ্টিবিদ্যুৎ কিংবা নীল নীলাভ সাঁতারের কথা ভুলে আমরা তাকিয়ে থাকি ছড়িয়ে যাওয়া সে ওড়নার দিকে। দুরন্ত উড়ন্ত ভাসমান সে ওড়নার চিত্রগুলো কী ঢেউ ঢেউ! মেঘ মেঘ! তার ভেতরে ছায়াঘন কদম ফুল, তার ভেতরে হলুদাভ পাপড়ির মনোরম ছায়া, তার ভেতরে ভেজা ভেজা দমকা হওয়া, তার ভেতরে উড়াল পানির মৃদু ঝাপটানি

অধ্যাপিকা ক্লাস নিলেন না। চলে গেলেন বৃষ্টি নামের সেই বর্ণহীন অথচ বহুবর্ণিল নিসর্গের দিকে—এক মনোমুগ্ধকর খুনির পথে। আমরা তখন কেন যে ভাবছিলাম, তাঁরাও কি বরষা ছিলেন নিজে!

তবে কেন আমরা সেদিন উঠেছিলাম ভিজে!