প্রশ্নের মুখে সত্য

‘সিনথেটিক রিয়েলিটি’ছবি: জাভেদ জলিল

শিল্পকলার সঙ্গে দর্শন ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক বহুদিনের। বিশেষত আধুনিক শিল্পকলায় বিশ্বজুড়ে দৃশ্যকলায় এর প্রভাব অনস্বীকার্য। তবে বাংলাদেশের শিল্পকলায় কোথাও কোথাও দর্শনের যৎকিঞ্চিৎ প্রভাব থাকলেও নির্দিষ্ট একটি শিল্পভাবনাকে কেন্দ্র করে কোনো আন্দোলন কখনো হয়নি। বিজ্ঞানের বা বিজ্ঞান–ভাবনার সংবেদনাও আমাদের শিল্পকলায় সেভাবে নেই।

জাভেদ জলিল নিজেকে ‘ভিজ্যুয়াল অথর’ বলে দাবি করেন। লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্র গ্যালারিতে চলছে তাঁর একক প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর নাম ‘সিনথেটিক রিয়েলিটি’। তাঁর কাজে আছে মনঃসমীক্ষণ ও মনস্তত্ত্বের সঙ্গে বিজ্ঞান, দর্শন ও শিল্পের সংযোগ ঘটিয়ে নতুন এক শিল্পপ্রয়াস। বাংলাদেশের বর্তমান শিল্পকলায় মনঃসমীক্ষণ এবং দার্শনিক ভাবনার সন্ধানী শিল্প খুব একটা দেখা যায় না। এ কারণে জাভেদ জলিলের প্রদর্শনীটির বিশেষত্ব রয়েছে।

বড়–ছোট ক্যানভাস ও ভিডিও আর্টের সমন্বয়ে এই প্রদর্শনীতে জাভেদ জলিলের সত্যানুসন্ধানের একটি প্রচেষ্টা আছে। প্রদর্শনীতে জাভেদ জলিল প্রশ্নটি তুলেছেন যে আমাদের ভাবনা আদতে কতটা কৃত্রিমতা–বর্জিত? সভ্যতার আদি থেকে মানুষ চিন্তার যে বিবর্তন পেরিয়ে এই জটিল ও গ্রন্থিল সময়ের জীবনে এসে পৌঁছেছেন, তার মূলে কী?

নানা পর্যায়ের দার্শনিক–শিল্পী-বিজ্ঞানীসহ নানা মহারথীর ভাবনার একটি তদন্ত করতে চেয়েছেন জাভেদ জলিল। বিভিন্ন ছবিতে অসংখ্য বিষয় তিনি এঁকেছেন। রেখা আর রঙের সমন্বয় করেছেন গঠন আর আকারের সঙ্গে। তাঁর কাজে মানুষ আছে, আছে বিমূর্ততাও। কম্পোজিশন ও রঙের ব্যবহারে রয়েছে সাম্প্রতিক শিল্পকলার প্রভাব।

জাভেদ জলিলের ছবির দিকে তাকালে প্রথমে চোখে পড়ে দৈত্যের মতো দেখতে কোনো বস্তু, অথচ গভীরভাবে নিরীক্ষণ করলে বোঝা যায় সেসব নিরীহ পতঙ্গের অতিকায় রূপ। আমরা যা দেখি আর ভাবি, প্রকৃতিতে তার রূপের কতই না প্রহেলিকা! কোনটা আসল, আর কোনটা নানা পূর্বশর্তে নিমজ্জিত আমাদের মস্তিষ্কের পুনরুৎপাদন, দর্শকের দিকে এসব প্রশ্নই যেন শিল্পী ছুড়ে দিতে চান।

১২ জুলাই শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ২৭ জুলাই পর্যন্ত।

অনিন্দ্য নাহার হাবিব