গৌরীর ভালোবাসা পেতে যা করেছিলেন উত্তম কুমার
আজ ৩ সেপ্টেম্বর বাংলা চলচ্চিত্রের অন্যতম রোমান্টিক নায়ক উত্তম কুমারের জন্মদিন। তাঁর প্রকৃত নাম ছিল অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায়। ব্যক্তিজীবনে এই মহানায়ক ভালোবেসেছিলেন গৌরী দেবীকে। পরে তাঁকে বিয়েও করেছিলেন। গৌরীকে নিজের করে পাওয়ার জন্য কী করেছিলেন উত্তম, তাঁর ব্যক্তিজীবনের ভালোবাসার গল্পটি কেমন ছিল? উত্তম কুমারের বই ‘আমার আমি’র সূত্রে জানা যাক সেই কাহিনি।
মা–বাবা চেয়েছিলেন, লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করবেন তিনি। ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান, তাঁর ওপর সবার অনেক আশা। কিন্তু পড়ালেখায় মন বসত না; স্কুলজীবন থেকেই গল্প, কবিতা লিখতে শুরু করেন। ম্যাগাজিনে ছাপাও হতে থাকে। কিন্তু তাতেও মন ভরে না, মন ছুটে যায় যাত্রাপালায়। অভিনয় বড় ভালো লাগে। শিশুকাল থেকেই অভিনয় করার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন তিনি। সবাইকে লুকিয়ে পাড়ার ক্লাব ঘরে// যাত্রার মহড়া দেখতে ছুটে যেতেন। কীভাবে পার্ট বলতে হয়, তা ক্লাব ঘরের যাত্রা ও থিয়েটারের মহড়ায় লুকিয়ে দেখেই রপ্ত করেছিলেন। বাড়িতেও নাটক, থিয়েটারের যথেষ্ট চর্চা ছিল। জ্যাঠামশাই নাটক-থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপরও মনের সুপ্ত ইচ্ছার কথা মুখ ফুটে বলার সাহস করে বলে উঠতে পারতেন না। তবে মনে মনে ঠিকই স্বপ্ন বুনতেন যে একদিন না একদিন সুযোগ আসবে, তিনি অভিনয় করবেন, অভিনেতা হবেন। অনেক অপেক্ষার পর নাটকীয়ভাবে প্রথম সুযোগ আসে।
তখন স্কুলের ছাত্র তিনি। স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে ‘গয়াসুর’ নাটক মঞ্চস্থ হবে। কিন্তু অনেক দেনদরবার করেও শুরুতে নাটকের দলে জায়গা হলো না। যখনকার কথা বলছি, সে সময় তিনি ছিলেন নিচের ছোট ক্লাসের ছাত্র। বেশির ভাগ চরিত্রই সিনিয়রদের দখলে থাকায় কোনো চরিত্র পেলেন না। মন খারাপ, খুবই হতাশ হলেন। পরদিন বিষণ্ন মনে গেলেন স্কুলে। দ্বিতীয় কি তৃতীয় পিরিয়ডে পুনরায় আশার প্রদীপে আলো জ্বলে উঠল। ছোট গয়াসুর চরিত্রে যাঁর অভিনয় করার কথা ছিল, উচ্চারণে ত্রুটির কারণে তিনি বাদ পড়ায় হেডমাস্টার মহাশয় সবার জন্য সুযোগটা উন্মুক্ত করে দিলেন। বললেন, শুদ্ধ উচ্চারণে সবার সামনে যে পার্টটা পড়তে পারবে, ছোট গয়াসুর চরিত্রে সে–ই অভিনয় করবে। কিন্তু সাহস নিয়ে কেউ এগিয়ে গেল না। অবশেষে মনের সুপ্ত বাসনার তাড়নায় ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেলেন উত্তম কুমার। সাফল্যের সঙ্গে পার্ট পড়ায় উত্তীর্ণ হয়ে অভিনয় করলেন ছোট গয়াসুর চরিত্রে। নাটক মঞ্চস্থ হতেই তাঁর সুন্দর অভিনয়ের খবরটা চারদিকে চাউর হয়ে বাড়িতেও পৌঁছাল।
কিন্তু জ্যাঠামশাই ছাড়া কেউ তেমন খুশি হলেন না। বাড়ির সবাই–ই চাইতেন, লেখাপড়া শিখে চাকরি করবেন তিনি। বাড়িতে অভাব-অনটন, টানাটানি। সবকিছু ভেবে ওই ছোট বয়সেই উত্তম শপথ করেছিলেন, অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে পড়ালেখাটাও ভালো করে করবেন। আর ঠিক তখন থেকেই স্কুলের অনুষ্ঠান হোক কিংবা হোক পাড়ার ক্লাব—যেখানেই অভিনয়ের সুযোগ মিলেছে, সেখানেই অভিনয় করতে শুরু করেন। দিনে দিনে স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর সময় ঘনিয়ে আসে তাঁর। ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ১৯৪৩ সালে ডালহাউসির গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল কলেজে রাত্রিকালীন শাখায় ভর্তি হন। পাশাপাশি চাকরি খুঁজতে শুরু করেন। একই সঙ্গে চলে থিয়েটারে অভিনয়। ১৯৪৫ সালে বড় মামার সুবাদে প্রথম চাকরি পান। পরিবারের অর্থকষ্ট কিছুটা দূর হয়। সেই সঙ্গে রুপালি পর্দায় অভিনয়ের চেষ্টাও শুরু করেন।
মানুষটি আর কেউ নন, বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম রোমান্টিক নায়ক উত্তম কুমার। যাপিত জীবনের দুঃখ, কষ্ট, অভাব-অনটন, অপমান, উপেক্ষা ও ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে যিনি জিতে নিয়েছেন মহানায়কের আসন। আজ ৩ সেপ্টেম্বর তাঁর জন্মদিন। ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ধরণিকে বাধিত করতে পৃথিবীতে এসেছিলেন তিনি। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির রোমান্টিক এই নায়কের অভিনয়ে মুগ্ধ হননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু কেমন ছিল উত্তম কুমারের ব্যক্তিজীবনের ভালোবাসার গল্প? আজ তাঁর জন্মদিনে সেই গল্পই জানা যাক।
তবে উত্তম কুমারের ভালোবাসা বা প্রেমের গল্পে যাওয়ার আগে কখনো তিনি গান শিখেছিলেন কি না, সে প্রশ্নের উত্তর বলে নেওয়া দরকার। না, শিশুকাল থেকে অভিনয়ের প্রতি তীব্র ঝোঁক থাকলেও গানের প্রতি মানুষটার তেমন ঝোঁক ছিল না। তবে গান ভালোবাসতেন। আর ভালো লাগা থেকেই শুনে শুনে পছন্দের গান আত্মস্থও করতেন—এ পর্যন্তই। এর বাইরে গান শিখবেন, গান গাইবেন শৈশবে এমন কোনো পরিকল্পনা তাঁর ছিল না। তবে প্রকৃত সত্য এই যে হাতে–কলমে গান শিখেছিলেন তিনি। তাও বেশ খানিকটা বড় হয়ে; আর এই গান শেখার নেপথ্যে ছিল অভিনয়।
ঘটনাটা বলি, তখন রুপালি পর্দায় অভিনয় করার জন্য মরিয়া তিনি। একটা সুযোগের আশায় এ হাউস–ও হাউসে ছুটে চলেছেন। কিন্তু সুযোগ মিলছে না। তখনো প্লেব্যাক সিঙ্গিং ওইভাবে চালু হয়নি। নায়ক-নায়িকার চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেন, তাঁরা প্রায় সবাই–ই গান জানতেন। তাই পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে উত্তম কুমার গান শেখার প্রয়োজন বোধ করলেন। কারণ আর কিছুই নয়, গান জানলে সহজে অভিনয়ে সুযোগ মিলবে। যে ভাবা সেই কাজ। কিন্তু কার কাছে শিখবেন গান, কে তাঁকে শেখাবেন? ভাবতে ভাবতে নিদান বাবুর নাম মাথায় আসে। ভদ্রলোক গানের শিক্ষক। আর অপেক্ষা করেন না উত্তম, নিদান বাবুর কাছে গিয়ে গান শেখার আবদার করেন। নিদান বাবুও খুশিমনে তাঁকে গ্রহণ করেন। আর গান শিখে অভিনয়ে সুযোগ খোঁজার চেষ্টার পাশাপাশি বিভিন্ন বিচিত্রা অনুষ্ঠানে গান শোনাতে শুরু করেন তিনি। তবে সিনেমার মতো গান গাওয়ার সুযোগ লাভের জন্যও তাঁকে কম মানুষকে অনুরোধ করতে হয়নি। আত্মজীবনীতে উত্তম কুমার লিখেছেন, ‘বিচিত্রা অনুষ্ঠানে সব গণ্যমান্য কণ্ঠশিল্পী পরপর প্রোগ্রাম সেরে চলে যেতেন, আর আমি গান শোনাবার একরাশ আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নেপথ্যে প্রতীক্ষা করতাম। এসব আমার তখন অপমান বলে মনে হতো। আজ মনে হয়, সেটাই ছিল আমার প্রতি তাঁদের শুভেচ্ছা–অনুপ্রেরণা। এই সব ভেবেই সেদিন নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম। তখন ভাবতাম, নতুনের জীবনে এসব ঘটনা ঘটেই, তাতে আর ব্যথিত হলে চলে না। ভেঙে পড়া উচিত নয়, নিরাশ হওয়া অন্যায়।’
এবার মূল গল্পে ফেরা যাক। তখন সদ্য জীবনের প্রথম চাকরি পেয়েছেন উত্তম কুমার। পোর্ট কমিশনার্স অফিসের ক্যাশ ডিপার্টমেন্টে। সময়মতো অফিসে যান আর ছুটি হলে বাড়িতে এসে বিশ্রাম নেন। বাকিটা সময় অভিনয়ের স্বপ্নে বিভোর থাকেন। তেমনই একদিন অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে বিশ্রাম নিচ্ছেন। হঠাৎ চোখ ছুটে যায় সদর দরজার দিকে। জ্যাঠাতো বোন অন্নপূর্ণার সঙ্গে একজন মেয়েকে দেখতে পান। মেয়েটা দেখতে সুশ্রী। তার চেয়ে মিষ্টি তাঁর হাসি। মেয়েটিকে দেখে মুগ্ধ হন উত্তম কুমার। একেবারে লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট যাকে বলে।
এরপর অতিবাহিত হলো কয়েকটা দিন। কিন্তু অনেক চেষ্টা-চরিত্র করেও মেয়েটার মুখ ভুলতে পারলেন না তিনি। অগত্যা অফিস ছুটি হলে যথাসম্ভব দ্রুত বাড়িতে ফিরে অপেক্ষা করতে শুরু করলেন। আবার যদি মেয়েটা আসে, এই আশা নিয়ে। একদিন সত্যি সত্যি মেয়েটি আবার তাঁদের বাড়িতে এল। অন্নপূর্ণাও সঙ্গে ছিল। তার সঙ্গে কথা বলতে ব্যর্থ হয়ে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না উত্তম। সে চলে যেতেই অন্নপূর্ণাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোকে কে পৌঁছে দিয়ে গেল রে?’ দুষ্টুমির স্বরে বোন পাল্টা প্রশ্ন করল, ‘কে বল দিকিনি?’ ‘ওই যে এখুনি এসেছিল তোর সঙ্গে?’ বললেন উত্তম। ‘ও তো গৌরী...গৌরী রানী গাঙ্গুলি। অ্যার্স্টন আর ল্যঅন্সডাউন রোডের মুখে থাকে।’
ঠিকানা শুনেই উত্তম বুঝে নিলেন, অভিজাত পরিবারের মেয়ে গৌরী। ভাবলেন, তাঁর সঙ্গে গৌরীর কোনো কিছু হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু মন বড় বেসামাল, মনের সঙ্গে কে পারে! তাই পরবর্তীকালে গৌরী আবার যখন তাঁদের বাড়িতে এলেন, অন্নপূর্ণার বলা কথাগুলো মনে পড়ল, ‘গৌরীর সঙ্গে একটি গানের স্কুলে আমার পরিচয়। সে গান ভালোবাসে।’ আর কালক্ষেপণ করলেন না তিনি। নিজের ঘরে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে পড়লেন। উদ্দেশ্য গৌরীকে গান শোনানো। গলা খুলে গান করছেন। হৃদয় আকুল হয়ে আছে গৌরীর জন্য। মন বলছে, এই বুঝি গান শুনতে শুনতে গৌরী এসে দাঁড়াবেন দরজার সামনে। কিন্তু তেমন কিছুই ঘটল না। অন্যান্য দিনের মতো অন্নপূর্ণার সঙ্গে আলাপ সেরেই গৌরী চলে গেলেন। কষ্ট পেলেন উত্তম। তাই কিছু সময় পর যখন অন্নপূর্ণা তাঁর কাছে এল, কিছুটা রাগী স্বরেই তিনি বললেন, ‘কী চাই?’ ‘গৌরী বলল, “তোর দাদার গানের গলাটা তো বেশ।” ও তোমার সঙ্গে দেখা করবে, আলাপ করবে বলেছে।’ অন্নপূর্ণার কণ্ঠে কথাটা শুনে হৃদয় নেচে উঠল তাঁর।
শুরু হলো অপেক্ষা। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হলেও গৌরী আর তাঁদের বাড়িতে এলেন না। রুপালি পর্দায় অভিনয়ের সুযোগ না পাওয়ার কষ্টের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হলো গৌরীকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা। মন নানা কথা বলে। গৌরী ধনীর দুলালি, তাঁকে কাছে পাওয়া দুরাশা ইত্যাদি। ভেবে আবারও ভুলে যেতে চেষ্টা করলেন তিনি। কিন্তু পারলেন না। কিছুদিন যেতেই মন ও জ্ঞান-বুদ্ধির সঙ্গে একপ্রকার দ্বন্দ্ব করেই গৌরীর সঙ্গে দেখা করতে স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। কিন্তু লাভ হলো না। গৌরীকে তাদের দারোয়ান স্কুলে পৌঁছে দিতেন, তাই আর কথা বলতে পারলেন না। ছুটির পর কথা বলার সুযোগ মিলতে পারে ভেবে গৌরীর বাড়ি ফেরার পথে গিয়ে দাঁড়ালেন। কিন্তু তখনো দারোয়ানকে সঙ্গে দেখে হতাশ হলেন উত্তম। তবে গৌরী তাঁকে নিরাশ করলেন না। দারোয়ানকে লুকিয়ে চুপি চুপি বললেন, ‘তুমি বাড়ি যাও, আমি দেখা করব তোমাদের বাড়িতে।’ উত্তম-গৌরীর মন দেওয়া–নেওয়া শুরু হলো।
সেই সঙ্গে ভাগ্যলক্ষ্মীও প্রসন্ন হলেন। সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পেলেন উত্তম কুমার। কথাটা প্রথমে মাকে জানালেন। তারপর গেলেন গৌরীর কাছে। বললেন, ‘আমি সিনেমায় নামছি, তোমার মত কী গৌরী?’ ‘বেশ তো, এতে আমার আবার মতামত কী?’ বললেন গৌরী। সুযোগ বুঝে ঝটপট কথাটি বলে ফেললেন উত্তম কুমার, ‘গৌরী, বিশ্বাস করো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই তোমার মতামত আমার একান্ত দরকার।’ কথাটা শুনে হাসলেন গৌরী। হাসতে হাসতেই বললেন, ‘তুমি সিনেমায় নামলে আমি খুশি হব বেশি।’
ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে দিনগুলো হাসি–গানে চলতে থাকল। এর মধ্যে ‘দৃষ্টিদান’ মুক্তি পেয়েছে। ইচ্ছা ছিল, গৌরীকে সঙ্গে নিয়ে সিনেমাটা দেখবেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে গৌরীর দেখা নেই। এর মধ্যে খবর এল, ঠাকুমার সঙ্গে ‘দৃষ্টিদান’ দেখতে গিয়ে অঘটন ঘটিয়েছেন গৌরী। ছবি দেখার একপর্যায়ে ঠাকুমা পর্দার শিল্পীদের কয়েকজনকে দেখিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ রে, দেখ তো ওদের মধ্যে তোর কাউকে মনে ধরে কি না, কাকে তোর পছন্দ?’ গৌরী অপেক্ষা করে না, আঙুল দিয়ে পর্দায় উত্তম কুমারকে দেখিয়ে বলেন, ‘ওকে।’ ঠাকুমা ভাবলেন, গৌরী বোধ হয় ঠাট্টা করছেন। তিনি রীতিমতো বিস্ময়ের সুরে বললেন, ‘এত ছেলে থাকতে ওই রোগা ছেলেটা?’ সরলমনে গৌরী সব সত্য খুলে বললে, বাড়ি থেকে বেরোনোর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলো।
কেটে গেল কয়েকটি বছর। উত্তম কুমার এর মধ্যে কাজ করেছেন কয়েকটি মুভিতে। একটাও সফলতার মুখ দেখেনি। সেই সঙ্গে রয়েছে গৌরীর জন্য বেদনা। এর মধ্যেই একদিন খবর এসে পৌঁছল, গৌরীর বিয়ে ঠিক হয়েছে, কিন্তু গৌরী রাজি নন। ভেঙে পড়লেন উত্তম। ওদিকে গৌরীও নাছোড়বান্দা। ভালোবাসার মানুষকে হারাতে পারবেন না। একদিন সব ভাবনাচিন্তা ছেড়ে ছুটে এলেন উত্তমদের বাড়িতে। উত্তম তখন বাড়িতেই ছিলেন। মায়াজড়ানো কণ্ঠে তাঁর কাছে গিয়ে গৌরী বললেন, ‘এই তো সুযোগ, কথা দাও, এবার তুমি আমাকে তোমার মতো করে আনতে পারবে।’ নানা চিন্তাভাবনা মাথায় এলেও গৌরীর জোরের কাছে হার মানলেন উত্তম কুমার। গৌরীর হাত ধরে তাঁদের বাড়িতে গেলেন। গৌরীর বাবার সামনে দাঁড়ালেন। অনেক বাক্বিতণ্ডার পর ভদ্রলোক রাজি হলেন। স্বপ্ন সত্যি হলো গৌরী ও উত্তমের। ১৯৪৮ সালের ১ জুন তাঁদের শুভ পরিণয় সম্পন্ন হয়।