ইসমাইল কাদারের সাক্ষাৎকার

লেখালেখি সুখের বা দুঃখের কোনো পেশা নয়

ইসমাইল কাদারেকে বলা হয় ‘আধুনিক হোমার’। ১ জুলাই প্রয়াত হয়েছেন আলবেনিয়ার এই খ্যাতিমান কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও রাজনীতিবিদ। বিশ্বসাহিত্যে তিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন মূলত উপন্যাসের কারণেই। তবে তাঁর কবিতাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। তাঁর অন্তত এক কপি বই নেই, এমন বাড়ি আলবেনিয়ায় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এই লেখক ১৯৯৭ সালে প্যারিস রিভিউকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দেন। ইরানি লেখক, সম্পাদক শুশা গাপ্পির নেওয়া সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয় ১৯৯৮ সালে, পত্রিকাটির ১৪৭তম সংখ্যায়। বিশদ এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ইসমাইল কাদারের বেড়ে ওঠা ও সাহিত্যদর্শন। সাক্ষাৎকারটি সংক্ষিপ্ত আকারে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন
রনক জামান। সঙ্গে থাকল ইসমাইল কাদারের কবিতা।

প্রশ্ন:

আলবেনীয় সাহিত্য সম্পর্কে জানতে চাই। এর উৎস কী? আলবেনীয়দেরও কি দান্তে, শেক্‌সপিয়ার বা গ্যেটে আছে?

ইসমাইল কাদারে: আলবেনিয়ার সাহিত্যের উত্স মূলত মৌখিক। আলবেনীয় ভাষায় লেখা প্রথম সাহিত্যগ্রন্থ প্রকাশ পায় ষোড়শ শতাব্দীতে। বাইবেলের অনুবাদ। তখন আলবেনিয়া ছিল ক্যাথলিক ভূখণ্ড। এরপর লেখকদের আবির্ভাব লক্ষ করা যায়। উনিশ শতকের লেখক নাইম ফ্রাশেরি হচ্ছেন আলবেনিয়ার সাহিত্যের জনক। অবশ্য তিনি দান্তে বা শেক্‌সপিয়ারের মতো মহৎ লেখক নন। দেশাত্মবোধক মহাকাব্য ও গীতিকবিতা লিখে গেছেন ফ্রাশেরি। এরপর এসেছেন গ্যের্জ ফিস্তা। এই দুজন আলবেনিয়ার সাহিত্যের মূল স্তম্ভ, যাঁদের শিশুরা স্কুলে পড়ে। এরপর অনেকেই আসেন, তাঁদের চেয়ে ভালো সাহিত্যও রচনা করেন। কিন্তু জাতির স্মৃতিতে এতটা স্থান নিতে পারেননি।

প্রশ্ন:

১৪৫৪ সালে তুর্কিরা কনস্টান্টিনোপল দখল করে নেয়, তারপর বলকান অঞ্চলের বাকি অংশ ও গ্রিস। আলবেনীয় ভাষার ওপর তুর্কিদের প্রভাব কেমন?

ইসমাইল কাদারে: নেই-ই বলতে গেলে। শুধু প্রশাসনিক শব্দ বা রান্নাবান্নায় ব্যবহৃত কেবাব, ক্যাফে, বাজারের মতো কিছু শব্দ রয়ে গেছে। তবে ভাষার কাঠামোতে কোনো প্রভাব পড়েনি। কারণটা খুব সাধারণ। দুটো ভাষার গঠনপ্রকৃতি ছিল একদমই আলাদা, মূল ব্যাকরণে প্রভাব ফেলতে পারেনি। তা ছাড়া তুর্কি ভাষা তুরস্কের বাইরে কোথাও পরিচিত ছিল না। আধুনিক তুর্কি ভাষা মূলত নির্মাণ করেছেন ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীর তুর্কি লেখকেরা। অন্যদিকে প্রশাসনিকভাবে তুর্কি কোনো জীবন্ত ভাষা ছিল না। ফলে অটোমান সাম্রাজ্যের অন্য সব ভাষার ওপর তুর্কি ভাষা কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। আমি যেসব তুর্কি লেখকের সঙ্গে মিশেছি, তাঁরা বলেন যে তাঁদের ভাষায় সমস্যা রয়েছে।

অন্যদিকে লেখক হিসেবে যদি দেখি, আলবেনীয় ভাষাটা অসাধারণ এক প্রকাশমাধ্যম। এটি সমৃদ্ধ, কোমল ও অভিযোজ্য। আলবেনীয় ভাষার এমন কিছু রূপ আছে, যেগুলো শুধু ধ্রুপদি গ্রিক ভাষায় পাওয়া যায়। তাই গ্রিক ট্র্যাজেডি বা শেক্‌সপিয়ার ও পরবর্তী ইউরোপীয় লেখাগুলো এই ভাষায় নিখুঁতভাবে অনুবাদ করা সহজ। নিটশের মতে, গ্রিক ট্র্যাজেডি এক শ বছর বেঁচে তরুণ অবস্থায় আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু বৈশ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, গ্রিক ট্র্যাজেডি আজও টিকে আছে। বরং মহাকাব্যের যুগ শেষ হয়েছে। উপন্যাস এখনো নতুন ধারা, প্রায় শুরুই হয়নি বলতে গেলে।

প্রশ্ন:

আমার মনে হয়, আপনি গ্রিক ট্র্যাজেডিকে আধুনিক উপন্যাসে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছেন।

ইসমাইল কাদারে: একদম। আমি চেষ্টা করছি মহাকাব্যিক ধারা ও হাস্যরসাত্মক অদ্ভুতুড়ে ধারার সমন্বয় করতে। সেরা উদাহরণ ডন কিহোতে, বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কাজগুলোর একটি।

প্রশ্ন:

এরপর উপন্যাস বিভিন্ন ধারায় ভাগ হয়েছে…

ইসমাইল কাদারে: একদমই নয়! উপন্যাসের ধারা বিভাজনের অস্তিত্ব আমার কাছে নেই। শুনুন, আমি মনে করি, সাহিত্যের ইতিহাসে শুধু একটাই মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে। সেটা হলো, মৌখিক থেকে লিখিত মাধ্যমে আসা। সাহিত্যচর্চা বহুকাল ছিল মুখে মুখে। এরপর হঠাৎ ব্যাবিলনিয়ান ও গ্রিকরা লিখিত আকার আনল। এতেই সব বদলে গেল। এর আগে কবিরা আবৃত্তি করতেন বা গাইতেন। প্রতিবার কবিতা সম্পাদনা করার স্বাধীনতা তাঁদের ছিল। একই সঙ্গে সেগুলো ছিল ক্ষণস্থায়ী। কারণ, কবিতা মুখে মুখে ঘুরে পরের প্রজন্মগুলোয় এসে বদলে যেত। কিন্তু লিখিত মাধ্যমে একবার লেখা হয়ে গেলে সব ওখানেই থিতু। সাহিত্যের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। এর বাইরে ছোট ছোট যে অধ্যায় ও অনুচ্ছেদে ভাগ, বিরামচিহ্নের ব্যবহার ইত্যাদি তুলনামূলক গৌণ পরিবর্তন; ডিটেইলমাত্র।

প্রশ্ন:

আপনার শুরুটা সম্পর্কে বলুন। প্রথমে শৈশব; যখন বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়, তখন আপনি খুব ছোট। এরপর তো আলবেনিয়ার সব বদলে গেল।

ইসমাইল কাদারে: আমার শৈশব ঘটনাবহুল, অনেক কিছু দেখেছি। যুদ্ধ যখন শুরু হলো, তখন আমার বয়স পাঁচ বছর। জিরোকাস্তারে বাস করতাম। শহরটা খুব সুন্দর, বিদেশি সৈন্যরা এর ওপর দিয়ে যেতেন। ইতালীয়, গ্রিক…! জার্মান ও ইংরেজরা বোমা ফেলে এখানে। যেকোনো শিশুর কাছে সময়টা উত্তেজনাপূর্ণ। আমার দাদার পরিবার ছিল শালীন, মধ্যবিত্ত। বাবা ছিলেন আদালতের চিঠিপত্র সরবরাহকারী পিয়ন। কিন্তু নানার পরিবার বেশ ধনী ছিল। মজার ব্যাপার হলো, নানার পরিবারই ছিল সমাজতন্ত্রের পক্ষে। আর বাবা সমাজতন্ত্রের বিপক্ষে। তবে তাদের মধ্যে এ নিয়ে বাধত না, বরং একে অপরের সঙ্গে এসব নিয়ে খোঁচা দিয়ে রসিকতা করত। মধ্যবিত্ত ও ধনী—দুটো দিকই আমি খুব কাছ থেকে ভালো করে দেখেছি। এটা আরও স্বাধীনচেতা করেছে আমাকে।

ইসমাইল কাদারের কবিতা

কবিতা

 কবিতা,

কীভাবে তুমি পৌঁছালে নিকটে আমার?

জননী আমার, আলবেনীয় ভাষাটি জানে না ভালো; দাঁড়ি আর কমাহীন আরাগোন-ভঙ্গিতে পত্র লেখে। এবং বাবা, কত সমুদ্র চষেছে যৌবনে তার।

অথচ কবিতা, তুমি—এলে, এই পাথুরে শহরের ফুটপাত ধরে ঠিকই—

নেমে এলে হেঁটে, ১৬ নম্বর তিনতলা বাড়ি—দরজায় মৃদু কড়া নেড়ে।

বদভ্যাসে আমি—ছিলাম এক ‘অবরোধমুক্ত নগর’। ভালোবেসেছি ও ঘৃণাও তো করেছি কত কিছুকে। তবু যা–ই হোক...

যেন মত্ত যুবক। রাত করে ঘরে ফেরা, ভবঘুরে নৈশচারণে জীর্ণ, ক্লান্ত শরীর, তবু
এই যে আমি—তোমার কাছেই ফিরি, আরেকটি অনিয়ম শরীরে মাখিয়ে...

এবং তখন তুমি, অবাধ্যতার অভিযোগে আঙুল না তুলে বরং নেড়েছ আলতো—

আমারই এলোমেলো চুল, পরম মমতা নিয়ে—

শেষ ঠিকানা আমার, হায়, কবিতা তুমি

 অনুবাদ: রনক জামান

প্রশ্ন:

স্কুল শেষে রাজধানী তিরানায় চলে যান আপনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। এরপর মস্কোর গোর্কি ইনস্টিটিউটে। স্তালিনের অধীনে সেখানকার সাহিত্যের পরিবেশ কেমন ছিল?

ইসমাইল কাদারে: আমাকে গোর্কি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয় সরকারের পূর্ণকালীন লেখক হয়ে ওঠার জন্য। ওখানেও সরকারি লেখকেরা মূলত শাসকের চাকর ছিলেন। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।

প্রশ্ন:

আর আলবেনিয়ায়?

ইসমাইল কাদারে: আলবেনিয়ায় অধিকাংশ বিদেশি সাহিত্য নিষিদ্ধ ছিল। কখনো বিদেশে গেলে আমি সেসব সংগ্রহ করে নিতাম। অরওয়েল, কাফকা পড়া হয় তখন। অরওয়েলের নাইন্টিন এইটি-ফোর ভালো লাগে, তবে অ্যানিমেল ফার্ম-এ প্রাণিজগতের রূপক আমাকে স্পর্শ করেনি। একনায়কতান্ত্রিক দেশে এমন সব ঘটনা ঘটত যা আসলে সাহিত্যে আগে কখনো লেখাই হয়নি।

প্রশ্ন:

১৯৬০ সালে আলবেনিয়ায় ফিরে বিখ্যাত উপন্যাস দ্য জেনারেল অব দ্য ডেড আর্মি রচনা করেন আপনি...

ইসমাইল কাদারে: খ্রুশ্চেভের সঙ্গে যখন আনোয়ার হোজ্জার  সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে, তখন এই উপন্যাস প্রকাশিত হয়। সমালোচকেরা এ নিয়ে নানা অভিযোগ তোলেন। উপন্যাসে আশাবাদী কেন থাকিনি, ইতালির জেনারেলের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ কেন করিনি বা রাষ্ট্রের পক্ষ না নিয়ে সর্বজনীন দৃষ্টিকোণ থেকে কেন লিখেছি ইত্যাদি।

প্রশ্ন:

দ্বিতীয় উপন্যাস দ্য মনস্টার ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে লেখা…

ইসমাইল কাদারে: মনস্টার–এর কাহিনি এ রকম ছিল যে এক শহরে সুন্দর সকালবেলায় হঠাৎ ট্রয়ের ঘোড়ার উদয় হয়। ঘোড়ার ভেতর ইউলিসিসের মতোই চরিত্রগুলো বসে ছিল, দিনের পর দিন অপেক্ষা করছিল নগরের দরজা পতনের। কিন্তু এখানে ঘটে অন্য রকম। ট্রয়ের পতন হয় না; তাই ঘোড়াটাও চিরকাল দাঁড়িয়ে থাকে। মানুষজন স্থায়ী এক অস্থিরতার মধ্যে বাস করতে থাকে। একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আবহাওয়া চিত্রিত হয়। উপন্যাসে আমি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আবহাওয়া তুলে ধরেছি।

প্রশ্ন:

উপন্যাসটি নিষিদ্ধ হলে আপনার উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। কীভাবে চলতেন তখন?

ইসমাইল কাদারে: ওরা উপন্যাস নিষিদ্ধ করলেও রাইটার্স ইউনিয়নের মাসিক বেতন বন্ধ করেনি। বেতন পেতে বাধা ছিল না, তা আপনি মেধাবীই হন বা অপরাধী। কিন্তু এই টাকা আদতে আমার আগে বিক্রীত বইয়ের রয়্যালটির এক হাজার ভাগের এক ভাগের সমান ছিল।

প্রশ্ন:

পশ্চিমে ও আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিলাভের পর কি নিজেকে নিরাপদ মনে হতো?

ইসমাইল কাদারে: হ্যাঁ। তবে আরও নজরদারিতে ছিলাম, কারণ আমাকে হুমকি হিসেবে দেখা হতো।

প্রশ্ন:

১৯৭০ সালে প্রকাশিত দীর্ঘ উপন্যাস দ্য গ্রেট উইন্টার, আপনার দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে, হোজ্জাকে নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করে। এই বই কেন লিখেছিলেন?

ইসমাইল কাদারে: ১৯৬৭ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আমাকে সরাসরি নজরদারিতে রাখা হতো। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে হোজ্জা নিজেকেও কবি ও লেখক বলে দাবি করতেন এবং বলতেন যে তিনি লেখকদের ‘বন্ধু’। কথাটা মাথায় রাখবেন। এ সময় আমি ছিলাম দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত লেখক। আমার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল। এ পরিস্থিতিতে তিনটি পথ খোলা ছিল আমার জন্য। নিজের বিশ্বাসে অটল থাকা, যা সরাসরি আত্মহত্যার শামিল; নীরব থাকা, এ-ও আরেক রকম মৃত্যু এবং হোজ্জার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা। তো তৃতীয় পথটিই আমি বেছে নিই এই উপন্যাস লেখার মাধ্যমে। ভেবেছিলাম যে ডন কিহোতে মতো এই বই হোজ্জাকে উৎসাহিত করবে, ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাবে। এককথায়, সাহিত্য দিয়েই অসম্ভবকে সম্ভব করতে চেয়েছিলাম, স্বৈরাচারীকে সঠিক পথে আনতে চেয়েছিলাম!

প্রশ্ন:

আপনার প্রতি সন্দেহজনক মনোভাব রেখেও কেন হোজ্জা আপনাকে সংসদ সদস্য করেছিলেন?

ইসমাইল কাদারে: সংসদ সদস্য করা বা না–করাটা একদম অর্থহীন বিষয় ছিল। সংসদ সদস্যদের তালিকা তিনি নিজে করতেন, কেউ মানা করলে তাঁকে সরিয়ে দিতেন, অর্থাৎ মেরে ফেলা হতো। তাই কেউ কোনো দিন মানা করেননি; এবং সংসদ সদস্যদের কোনো কাজ ছিল না। সরকার গঠিত হয়ে গেলে হোজ্জার ইচ্ছা ও আদেশ-নির্দেশেই সবকিছু কার্যকর হতো। সেসব নিয়ে আলোচনা বা তর্ক হতো না।

প্রশ্ন:

জনগণ আপনাকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে চেয়েছিল একপর্যায়ে, চেকোস্লোভাকিয়াতে হ্যাভেলের মতো। কিন্তু আপনি ‘না’ করে দেন। কেন?

ইসমাইল কাদারে: ‘না’ বলতে একমুহূর্তও দ্বিধা করিনি আমি। আমার পরিস্থিতি হ্যাভেলের চেয়ে আলাদা ছিল। আমি শুধু স্বাধীন এক লেখক হয়েই থাকতে চেয়েছি।

ইসমাইল কাদারে

কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও চিত্রনাট্যকার

জন্ম: ২৮ জানুয়ারি ১৯৩৬; জিরোকাস্তার, আলবেনিয়া

মৃত্যু: ১ জুলাই, ২০২৪; তিরানা, আলবেনিয়া

জাতীয়তা: আলবেনীয়, ফরাসি

শিক্ষা: ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, তিরানা বিশ্ববিদ্যালয়; ম্যাক্সিম গোর্কি ইনস্টিটিউট, মস্কো

উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: ম্যান বুকার (২০০৫) ; লেজিওঁ দে অনার (২০১৬) ; প্রি মন্ডিয়াল চিনো দেল দুকা (১৯৯২)

উল্লেখযোগ্য উপন্যাস: দ্য জেনারেল অব দ্য ডেড আর্মি, দ্য পিরামিড, দ্য প্যালেস অব ড্রিমস, ব্রোকেন এপ্রিল, দ্য মনস্টার, ক্রনিকল ইন স্টোন

প্রশ্ন:

অর্ধেক আলবেনিয়ান মুসলিম, আপনার পরিবারও তা–ই। আপনি কি ধর্মীয় শিক্ষায় বেড়ে উঠেছিলেন? ধর্মীয় চর্চা এখন মুক্ত হওয়ায় ইসলামি মৌলবাদের পক্ষ থেকে আলবেনিয়ায় কি কোনো ঝামেলা হয়?

ইসমাইল কাদারে: মনে হয় না। আর আমার পরিবার নামেমাত্র মুসলিম ছিল, চর্চা করত না। আমার আশপাশের কেউই ধার্মিক ছিলেন না। তা ছাড়া আলবেনিয়ার ইসলামচর্চা খুব মডারেট। তো মৌলবাদ নিয়ে আমাদের ভাবতে হতো না।

প্রশ্ন:

লেখালেখির প্রসঙ্গে আসি। আপনার জন্য লেখালেখি সহজ না কঠিন? আপনি লেখার সময় আনন্দে থাকেন, নাকি চিন্তিত?

ইসমাইল কাদারে: লেখালেখি সুখের বা দুঃখের কোনো পেশা নয়; মাঝামাঝি কিছু একটা। দ্বিতীয় জীবনের মতো। আমি সহজেই লিখি, কিন্তু লেখাটা ভালো হলো কি না, তা নিয়ে চিন্তিত থাকি। এখানে স্থির মেজাজ প্রয়োজন। সুখ বা দুঃখ দুটোই সাহিত্যের জন্য ক্ষতিকর। সুখে থাকাকালে লেখা হালকা ও চপল হয়ে ওঠে, আর দুঃখে থাকাকালে দৃষ্টিভঙ্গি এলোমেলো থাকে। আগে বাঁচতে হবে, জীবন থেকে অভিজ্ঞতা নিতে হবে, তারপর লিখতে হবে।

প্রশ্ন:

হেমিংওয়ে বলতেন, টেলিফোন কাজের খুব ক্ষতি করে। আপনার কাজে বিঘ্ন ঘটায় কোন জিনিস?

ইসমাইল কাদারে: তিরানায় কেউ সোজাসাপটা কারণ ছাড়া ফোন ব্যবহারের সাহস করেন না। কারণ, ওগুলোয় আড়ি পাতা থাকে। কিন্তু আমি তো দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা লিখি, বিঘ্ন এড়িয়ে সময়টুকু বের করতে সমস্যা হয় না।

প্রশ্ন:

আপনার শেষ উপন্যাস স্পিরিটাস ফ্রান্সে সাড়া ফেলেছে, আশা করি ইংরেজিতেও অনূদিত হবে। আপনি কি নতুন কোনো উপন্যাস লেখা শুরু করেছেন?

ইসমাইল কাদারে: না। তাড়া আছে কোনো?