তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে যা বলেছিলেন সমরেশ মজুমদার
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশে এসেছিলেন সদ্য প্রয়াত কথাসাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। তখন প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশের কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে অকপটে কিছু কথা বলেছিলেন তিনি। আবুল বাসারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলা সেই কথাগুলো থাকল এখানে।
প্রত্যেক মানুষের কিছু ব্যক্তিগত ব্যাপার থাকে, যা থেকে তাকে বেশ ভালোভাবে চেনা যায়। তসলিমা নাসরিন, যিনি আমাকে অত্যন্ত অপছন্দ করতেন, তাঁকে কিন্তু আমি চিনতামই না।
বাংলাদেশের ঢাকা ক্লাবে একদিন রাত নয়টায় তিনি এলেন। সবার সামনেই আমাকে তাঁর বাসায় চা খাওয়ার দাওয়াত দিলেন। তত দিনে তাঁর সম্পর্কে আমি জানতে শুরু করেছি। তাঁর নির্বাচিত কলাম পড়লাম। তাঁর বিষয়ে লিখতে গেলে আমার সঙ্গে তাঁর প্রথম আলাপ নিয়ে লিখতে হয়। তখন তিনি কী অবস্থায় ছিলেন, তাঁর গলার স্বর কেমন ছিল এবং ঢাকা ক্লাব থেকে বেরিয়ে তিনি যখন গাড়িতে উঠছেন, তখন তাঁর সঙ্গে কেউ ছিলেন কি না—সবকিছু তো আমাকে পাঠকদের বলতে হবে। আমার এই লেখাগুলো দেখে তসলিমার ঠিক পছন্দ হলো না।
বাংলাদেশের বইমেলায় একবার পার্ল পাবলিকেশনস থেকে আমার বই বের হলো। একই প্রকাশনা থেকে তসলিমারও বই বের হয়েছিল। কিন্তু মেলায় এসে দেখি, কোনো এক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাঁর ওপর খেপে আছে। ওদের ভেতরে একজন এসে আমাকে হাতজোড় করে বলল, ‘আপনি এখান থেকে বের হয়ে যান। সমস্যা হবে।’ আমি বুঝতে পারছিলাম, কিছু একটা গন্ডগোল হতে চলেছে। তসলিমাকে বললাম, ‘ছেলেরা আমাকে বের হয়ে যেতে বলেছে। বোধ হয় কিছু সমস্যা হবে। আপনিও চলুন।’ তিনি উত্তর করলেন, ‘আমার ভয় নেই। আপনার ভয় থাকলে আপনি বের হয়ে যান।’
তসলিমা আমাকে বলেছিল, ‘আমার সাহসটা দেখেছেন আপনি? জাতীয় সব পত্রিকা এ খবর প্রচার করেছে।’ তাঁকে আমি নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললাম, ‘প্রচারের জন্য তাহলে আপনি এসব করলেন?’
বেরিয়ে আসার পর আমি শুনলাম বোমা ফাটার আওয়াজ। সন্ধের আলো নিভে গেল। একটু পর দেখলাম, পুলিশ তসলিমাকে প্রতিরক্ষা দিয়ে নিয়ে গেল। ওঁর জামাকাপড় প্রায় ছিঁড়ে যাওয়ার জোগাড়।
আমি সেটা নিয়ে লিখলাম। তসলিমা আমাকে বলেছিল, ‘আমার সাহসটা দেখেছেন আপনি? জাতীয় সব পত্রিকা এ খবর প্রচার করেছে।’ তাঁকে আমি নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললাম, ‘প্রচারের জন্য তাহলে আপনি এসব করলেন?’ এগুলো লেখা ঠিক না বেঠিক, সেটা নিয়ে আপনারা আমাকে প্রশ্ন করতেই পারেন। কিন্তু আমি যা দেখেছি, তা–ই লিখেছি।