বাংলা ভাষায় দুই বাংলায় যাঁরা কবিতাপ্রেমী, তাঁদের কাছে জয় গোস্বামী খুবই সেলিব্রেটেড কবি; সুখে-দুঃখে, প্রেমে-ব্যর্থতায় যাঁর কবিতার আমরা শরণ নিই। আপনার এই যে তারকাখ্যাতি, এটা আপনি কি উপভোগ করেন, নাকি বিব্রত হন?
উত্তর: আমি প্রথমে বলি, আজ আমি নিজেকে মহাসৌভাগ্যবান মনে করছি যে এখানে কবি ও কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক এসেছেন। এটা আমার পক্ষে মস্ত সম্মানের ব্যাপার। তাঁর অনেক লেখা ও বই আমি পড়েছি।
আমার জন্য আরও সম্মানের বিষয় এই যে বাংলাদেশে আমি এসে যতবার এসেছি, দেখেছি, এ দেশের মানুষ আমার কবিতা পড়েন। এমনকি আমার লেখা গদ্যও তাঁরা পড়েন। এগুলো আমার কাছে দৈবের অনুগ্রহ বলে মনে হয়। আসলে তারকাখ্যাতি আমি বুঝি না, তারকাখ্যাতি কিছু নেই আমার।
সচেতনভাবে যাকে কবিতা বলে, আপনি তা কখন লিখেছিলেন—ছোটবেলায়, বালক বয়সে?
উত্তর: ক্লাস এইটে পড়ার সময় আমার টিবি হলো। এ কারণে সে বছর আমি পরীক্ষা দিতে পারলাম না। ফলে পরের বছরও আমি এইটেই থাকলাম। আর আমার সঙ্গে যারা পড়ত, তারা ওপরের ক্লাসে উঠে গেল। তখন খুব লজ্জা করত। অসুস্থ শরীর বলে খেলাধুলাও করতে পারতাম না। ঘরে বসে বই পড়তাম। এভাবে একদিন খাতা টেনে নিলাম। সে সময় মনের মধ্যে আপনা-আপনি কথা তৈরি হতো। মনে মনে নিজেই কারও সঙ্গে যেন কথা বলে যাচ্ছি—এমন। আজ এত বছর পরেও আমার এমনটা হয়। তখন আমার বয়স ছিল তেরো বছর, আর এখন সত্তর চলছে। তো তেরো বছর বয়সে ওই কথাগুলো আমি আমার খাতার মধ্যে লিখে রাখতে আরম্ভ করলাম। ভাবিনি যে এসব কোনো কবিতা হবে।
তখন কি আপনি ভাবতেন যে বড় হয়ে আপনি কবি হবেন?
উত্তর: না না, তেমনটা আমি ভাবিনি। এসব চিন্তাই করিনি। লিখতে লিখতেই লেখাটা চলে এল। তারপর যখন আমার উনিশ-কুড়ি বছর বয়স, সে সময় একদিন পত্রপত্রিকার ঠিকানা দেখে মনে হলো, একটু পাঠিয়ে দেখি তো, ছাপা হয় কি না। সে সময় আমি পাঁচ-ছয়টা জায়গায় ডাকে কবিতা পাঠালাম খামে করে।
আপনার কবিতায় বিচিত্র ছন্দের ব্যবহার আছে। কবিতার ছন্দ কি আপনার ভেতরে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আসে? এটা কি কবিতা পড়তে পড়তে আপনার ভেতরে এসেছে?
উত্তর: যে সময়ের কথা বলছি, তখন রবীন্দ্রনাথের কবিতা খুব পড়তাম। শুধু রবীন্দ্রনাথ নয়, নজরুল ইসলাম, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত—এঁদের কবিতাও পড়তাম। তারপর আস্তে আস্তে বয়স ষোলো-সতেরো হলো, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে—এঁদের কবিতাও পড়তে শুরু করলাম।
পাঠ্যবইয়ের কবিতার বাইরে যে কবিতাগুলো পড়তে হয়, এই খোঁজটা আপনাকে কে দিল?
উত্তর: ছোটবেলায় আমার বাবা আমাদের রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়ে শোনাতেন। আমার শৈশবেই বাবা মারা গেলেন। আমার সে সময় আট বছর পাঁচ মাস বয়স। আমরা রানাঘাটে থাকতাম, কলকাতা থেকে ষাট কিলোমিটার দূরে। ওই সময় আমার সঙ্গে কারও আলাপ ছিল না। তবে মাঝেমধ্যে আমি কলেজ স্ট্রিটে যেতাম। আস্তে আস্তে হাঁটতাম। আর আমার মা-ও আমাকে অনেক বই কিনে দিতেন। মা ছিলেন একটা স্কুলের হেড মিস্ট্রেস। আমি অসুস্থ...খেলাধুলো করতে পারি না, পড়াশোনায় বছর নষ্ট হয়। এই লজ্জায় আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে পারি না। এসব কারণে আমি চাইলেই মা আমাকে বই কিনে দিতেন। আমি প্রবন্ধের বই পড়ার চেষ্টা করতাম কবিতা বুঝব বলে।
আর আমাদের রানাঘাটে এক ভদ্রলোক থাকতেন—ভৃগুবাবু নাম। তিনি ছিলেন আমাদের ক্রিকেট ক্লাবের প্রশিক্ষক। আমি তো ক্রিকেট খেলতে পারতাম না, কিন্তু খেলা খুব ভালোবাসতাম। আমার শরীর সারবে মনে করে মা-ই আমাকে ওই ক্লাবে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। এরপর দেখা গেল, আমি প্যাড-গ্লাভস পরে ব্যাটটা হাতে তুলতে পারছি না।
এ সময় সেই ভৃগুবাবু আমার হাতে বই তুলে দিলেন। তিনি অনেক বই পড়তেন। ছোটকাগজের প্রদর্শনী করতেন প্রতিবছর পুজোর সময়। এটা আমি বলছি সাতষট্টি, আটষট্টি, উনসত্তর, সত্তর, একাত্তর—এসব সময়ের কথা। সারা বাংলা থেকে ছোটকাগজ সংগ্রহ করে পুজোর সময় একটা বালিকা বিদ্যালয়ের দুটি ঘর নিয়ে প্রদর্শনী করতেন তিনি। আমি আর হিমাংশু নামে একটা ছেলে এ কাজে তাঁকে সাহায্য করতাম। আমরা দড়ি বেঁধে ওই ছোটকাগজগুলো পৌঁছে দিয়ে আসতাম ভৃগুদার বাড়িতে।
একদিন তাঁকে বললাম, ‘এর থেকে দুটো পত্রিকা আমি নিয়ে যাব? একটু পড়ে আবার ফেরত দেব।’ আমার কথায় তিনি খুব অবাক হলেন। এত বছর ধরে ছোটকাগজের প্রদর্শনী করছেন, কিন্তু কেউ তো তাঁর কাছে কোনো দিন বইপত্র চায়নি। তিনি আমাকে বললেন, ‘যাও, তুমি নিয়ে যাও।’
এর পর থেকে আমি চারটা–পাঁচটা করে ছোটকাগজ আর ওই ক্রিকেট খেলার বই তাঁর কাছ থেকে নিয়ে আসতাম। আবার ফেরতও দিতাম।
এভাবে চলতে চলতে ভৃগুদা একদিন বললেন, ‘দেখো, আমার বাড়িতে তো প্রতিবছরই অনেক লিটল ম্যাগাজিন জমে যাচ্ছে। তুমি এই যে বইগুলো নিয়ে যাচ্ছ, এগুলো আর ফেরত দিয়ো না। তোমার কাছে রেখে দাও। তোমার এগুলো পড়তে ভালো লাগে?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ এরপর তাঁকে বললাম, ‘এগুলো কোথায় পাওয়া যায়, ভৃগুদা?’ তিনি বললেন, ‘তুমি কিনবে? ঠিক আছে, আমি তোমায় নিয়ে যাব।’
পরে একদিন তিনি শিয়ালদহে নিয়ে গেলেন আমাকে। তারপর আমার সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে কলেজ স্ট্রিটের পাতিরামের বুক স্টলে এলেন। সেখানে দেখলাম, অনেক সার সার ছোটকাগজ বিছানো রয়েছে। ভৃগুদা কিন্তু কবিতা লিখতেন না। তবে তিনি পড়তে ভালোবাসতেন।
তখন আপনি কোন ক্লাসে পড়তেন?
উত্তর: ক্লাস কী? আমি তো স্কুলই পাস করিনি কখনো...
আপনার কি আঠারো-উনিশ বছর তখন? ছন্দ কি তখন থেকেই মকশো করা শুরু করেছিলেন?
উত্তর: না না। পনেরো, ষোলো, সতেরো...। ওই সময় পড়তে পড়তেই আমার হাতে একটা বই এল—ছন্দের বারান্দা, শঙ্খ ঘোষের লেখা। তো বইটা পড়ে কিচ্ছু বুঝলাম না। ভাবলাম, এ বই যদি আমায় বুঝতে হয়, আগে তবে ছন্দ বুঝতে হবে। এর মধ্যে অবশ্য শঙ্খ ঘোষের কবিতা আমি পড়ে ফেলেছি এবং কবিতাগুলো ভালোও লাগতে শুরু করেছে।
‘বন্ধুর ছন্দের দুর্গে’ বলে বিষ্ণু দের ওপর একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। ওই প্রবন্ধ পড়ে বিষ্ণু দের কবিতা সম্বন্ধে জানলাম। পরে মনে হলো, ‘বন্ধুর ছন্দের দুর্গে’ যদি বুঝতে হয়, তাহলে আমাকে বিষ্ণু দে ভালো করে পড়তে হয়। এভাবেই এক বই থেকে সূত্র পেয়ে আরেক বই, এক লেখা থেকে সূত্র পেয়ে আরেক লেখা—আমার পড়া চলত এমন করে।
পত্রিকায় প্রথম যখন কবিতা পাঠালেন, সেগুলো কি ছন্দে লেখা ছিল?
উত্তর: লেখালেখির শুরুতে একটা জিনিস আমি দেখলাম যে আমি যা লিখছি আর যাঁদের কবিতা আমি পড়ছি, তাঁরা যা লিখছেন, তা এক নয়। তখন অমৃত, দেশ—এই পত্রিকাগুলো বেরোত। অমৃত আমাদের রানাঘাটে আসত। ওখান থেকে অনেক কবিতা পড়তাম। সে কবিতাগুলো আমার মতো নয়। ভাষাটা আলাদা। তখন আমি তাদের নকল করতে শুরু করলাম।
সে সময় বড় বড় বাহাদুর খাতা ছিল। সেই খাতার মধ্যেই সুধীন্দ্রনাথ দত্তের দর্শন কবিতার বইটা লাইব্রেরি থেকে নিয়ে এসে পুরোটা কপি করলাম। তারপরে একটা একটা করে অনেকের বই নিয়ে এসে কপি করলাম।
ওই কপি করতে করতেই আমি দেখলাম, আমি যখন লিখতে যাচ্ছি, তখন ওঁদের ভাষার মতো হচ্ছে আমার লেখাটা। পরে বুঝলাম, জিনিসটা যেহেতু ওঁদের মতো হয়ে যাচ্ছে, তাই এটা ছাপতে দেওয়া উচিত না।
এখন এই বয়সে বুঝি, অগ্রজ কবিদের কাউকে অনুসরণ করে যদি কবিতা লেখা যায়, তাহলে কী হয়?
যে নবীন কবি কেবল লিখতে শুরু করেছে, তার তো ভাষাগত অনেক দুর্বলতা থাকে। সেই দুর্বলতাগুলো ওই প্রতিষ্ঠিত কবিদের কবিতার প্রভাব এসে ভেতর থেকে ঠেলে বের করে দেয়। তখন তাঁদের কবিতার ছাঁচটা ওই নবীনের কবিতার মধ্যে থাকে। আসলে সে সময় অনেক কিছু না বুঝলেও এটা আমি বুঝলাম যে যেহেতু এগুলো আমার মতো হচ্ছে না, তাই এসব ছাপানো যাবে না।
বিভিন্ন ছোটকাগজে আমার পাঁচ শর বেশি কবিতা ছাপা হয়েছে। কিন্তু যদি আমার কবিতাসংগ্রহ দেখা যায়, ওই পাঁচ শর মধ্যে হয়তো সব মিলিয়ে শ দেড়েকের মতো কবিতা পাওয়া যাবে। আমি যা লিখতাম, তা ছাপতাম না। যা ছাপতাম, তা বইতে নিতাম না।
অনেকেই আপনার প্রথম দিকের বেশ কয়েকটি কবিতার বইয়ের খুব প্রশংসা করেন। কেউ কেউ বলেন, ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা?—এই বইয়ের পর থেকে একটু তরল হয়ে গেছে আপনার কবিতা। আর আপনার ইদানীংকার কবিতায় দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান পৃথিবীর সংকট ও রাজনীতি। কবিতার মধ্যে এখানে গদ্যের ভাষা, প্রবন্ধের ভাষাও এসে যাচ্ছে। দু-একজন এ বিষয় সামনে এনে আপনার আগের কবিতার সাপেক্ষে আপনার বর্তমান কবিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। কী বলবেন?
উত্তর: এ বিষয়ে কিছু বলা আমার জন্য শোভন হবে না। আমরা যখন বলি যে একজন আমার প্রিয় কবি, তখন তাঁর নির্দিষ্ট কিছু কবিতার কথাই আমাদের মনে থাকে, জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে বুদ্ধদেব বসুরও যা হয়েছিল।
একজন কবি যখন কারও প্রিয় হন, তিনি কীভাবে প্রিয় হন? তাঁর একটা বইয়ের কবিতা পড়ে আমরা মুগ্ধ হই। তারপরেই না তিনি প্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর ওই কবির পরের বইটা যখন পড়তে যাচ্ছি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবচেতন থেকে আমরা এমন আশা করি যে আগে তিনি যেমন কবিতা লিখেছেন, ওই রকম কবিতাই পাব। কিন্তু যখন দেখলাম, ‘হাইড্র্যান্ট খুলে দিয়ে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল’ অথবা ‘তাজা ন্যাকড়ার ফালি সহসা ঢুকেছে নালি ঘায়ে।’ তখন মনে হলো, আরে, কোথায় সেই লোক যিনি লিখেছিলেন, ‘আমরা হেঁটেছি যারা নির্জন ঘরের মাঠে পউষসন্ধ্যায়,/ দেখেছি মাঠের পারে নরম নদীর নারী ছড়াতেছে ফুল/ কুয়াশার; কবেকার পাড়াগাঁর মেয়েদের মতো তারা সব যেন হায়।’
এগুলো পড়ার পর পাঠক হয়তো খানিকটা ধাক্কা খেয়ে যাচ্ছেন। এমন হয় আসলে। আর একজন কবি তো সব সময় এক রকম লিখবেন না।
কিছুদিন আগে আপনার একটা কবিতা পড়েছিলাম দেশ পত্রিকায়। ওই কবিতার মধ্যে একটা বর্ণনা আছে এমন, আপনার একজন প্রেমিকা আছে, যার বাড়িতে ঘরে আপনি একা একা যান। তার সেফটিপিন বিছানার মধ্যে পড়ে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কথা হলো, আপনি তো সমাজ, পরিবার, অর্থাৎ সংসারের মধ্যে বসবাস করেন। পরিবার-সমাজ-সংসারে আপনার অসুবিধা হয় না?
উত্তর: সংসার তো একরকমের প্রতিষ্ঠানই। সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, যিনি আমাদের পশ্চিমবঙ্গের একজন খুব বড় লেখক, শেষ বয়সে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, পরিবার হচ্ছে একটা কারাগার। সমাজও তাই।
একটা কথা বলি, লিও তলস্তয়কে রাশিয়ার লোকজন যখন তাঁদের দেশের সবচেয়ে বড় লেখক হিসেবে চিহ্নিত করছেন, তাঁকে ডাকছেন ‘ঋষি তলস্টয়’ নামে, তখনো তিনি বলছেন, তিনি আসলে কিছুই লিখতে পারেননি।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তলস্তয় যে লেখা লিখেছেন, সেখানে তিনি কনফেশন করেছেন। তাহলে আমি একটা ক্ষুদ্র, ছাপোষা, মধ্যবিত্ত হয়ে কেন কনফেশন করব না? আমি আমার লেখার মধ্য দিয়ে কনফেস করেছি।
করার পরে কী হলো? একদা যাঁর উদ্দেশে লিখেছিলেন ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে’, এখন তো তাঁর সঙ্গে সংসার করছেন। তো এতে কি সেই পাগলির সঙ্গে ঠোকাঠুকি লাগেনি?
উত্তর: লেগেছে। ভেঙে যাওয়ার পরে নামে আমার একটা উপন্যাস আছে, ২০১৮ সালে বেরিয়েছিল শারদীয়া দেশ-এ। সেটা যদি পড়েন, দেখবেন, আমি সরাসরি আমার স্ত্রী–কন্যার সঙ্গে যে বিরোধ, এখানে সেটাও লিখে দিয়েছি। মানে, কী করব? জীবনে কেউ এসে গেলে, তাকে তো আটকানো যায় না।
আজকে সমাজে যে অন্যায়গুলো হচ্ছে, তার কোনো প্রতিকার কি আমি করতে পেরেছি? অথচ আমার কবি হিসেবে নাম হয়েছে। লোকে জানে, এই লোক কবি। কিন্তু সত্যিই কি আমি কিছু করতে পেরেছি? হয়তো কয়েকটা লাইন লিখেছি, লিখে হয়তো আমার একটু নাম-টাম ছাপা হয়েছে ঘটনাচক্রে। কিছু মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, এই পর্যন্ত। কিন্তু কবি কাকে বলে? আত্মাকে প্রজ্বলিত করে যে অগ্নি উত্থিত হন, তাঁর নাম কবি। কবি আসলে একটা আগুনের নাম। আমি কি আগুনের নাম? আমি কি এইটুকু বুঝব না? আমি সেটুকু বুঝি।
আপনার বেশ কিছু প্রেমের কবিতা আছে, দুই বাংলাতেই যা খুবই জনপ্রিয়। এসব কবিতায় শরীর একটি বড় অনুষঙ্গ। প্রেমের ক্ষেত্রে শরীরকে কি অনেক বড় বলে মনে করেন আপনি?
উত্তর: এই যে আপনাদের সামনে আমি বসে আছি আর আপনারা আমার সঙ্গে কথা বলছেন। আপনারা তো আমার শরীরের সঙ্গেই কথা বলছেন, তাই না? আমার শরীর আর আমার মন—দুটো কি আলাদা? আমার শরীর ও মন—দুটোকে নিয়েই আমি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি। আবার দুদিন আগে যখন আপনাদের সঙ্গে রাত্রিবেলা ওই হোটেলে (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল) দেখা হয়েছিল, আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি ওখানে একদম নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমার মুখ দিয়ে একটা বাক্যও বেরোচ্ছিল না। আমি যে এত কথা বলতে পারি, ওখানে দেখে কিন্তু আমাকে বোঝাই যাবে না। আসলে তখন আমার শরীরটাই শুধু উপস্থিত ছিল সেখানে, মনটা উপস্থিত ছিল না। মন সম্পূর্ণ স্তব্ধ, নীরব ও অবুদ্ধ হয়ে ছিল তখন। শরীরের সঙ্গে মনের সম্পর্ক তো এমনই, তাই না!