জীবনের এই পর্যায়ে এসে আপনার নিজের লেখালেখি সম্পর্কে মূল্যায়নটা কেমন? যা চেয়েছেন, তা কতটা লিখতে পেরেছেন?
গোলাম মুরশিদ: যা লক্ষ্য ছিল, তার অনেকগুলোই লিখে ফেলেছি। নতুন করে গবেষণা করা আমার পক্ষে আর খুব সহজ নয়। করার ইচ্ছা নেই, তা নয়। ধরা যাক, এখন যদি আমি ব্রিটিশ মিউজিয়ামের লাইব্রেরিতে যেতে চাই, আমাকে যেতে হবে টিউবে করে। সেখানে যেতে গেলে যে পরিমাণ ধুলা আমায় পেরোতে হবে, আন্ডারগ্রাউন্ডের যে ধুলা আমার ভেতরে ঢুকবে, সেটা আমার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। আমার অ্যাজমা ধরা পড়েছে। কাজেই সেই ধকল এখন আমার পক্ষে সহ্য করা কঠিন, যদি না খুবই জরুরি কোনো জিনিস খোঁজার জন্য যেতে হয়। তবে বাংলা গান (২০২২ সালে বাংলা গানের ইতিহাস নামের বইটি প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়) ও সমগ্র বাংলার স্থাপত্যের একটা ইতিহাস আমি লিখতে চাই। আমি ওই সব স্থাপত্য নিয়ে লিখতে চাই না, যেসব বই এখন বাজারে পাওয়া যায়—অমুক স্থাপত্যকীর্তিটা এত ফুট লম্বা, এর দেয়াল এত দীর্ঘ, এর পুরুত্ব এত—এগুলো মাপজোখের ব্যাপার। এর মধ্য দিয়ে স্থাপত্যরীতির কী প্রকাশ পাচ্ছে? তার ইতিহাস ঠিকমতো পাওয়া যায় না। কিন্তু আমি ভালো করে লক্ষ করে দেখেছি, স্থাপত্য বারবার তার স্টাইল পরিবর্তন করেছে। আমি স্টাইলগুলোর বিবর্তনটা তুলে ধরতে চাই। আর বিবর্তনটাই হলো ইতিহাস, বর্ণনাটা ইতিহাস নয়। সেটা সব ক্ষেত্রেই সত্য। সেটা গানের বেলায় সত্য, সংস্কৃতির বেলায় সত্য, নাচের ব্যাপারেও সত্য।
এ দুটি কাজ ছাড়া আর কোনো কাজের পরিকল্পনা আছে?
গোলাম মুরশিদ: আরেকটা ইচ্ছা আছে—আমার দৃষ্টিতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। ভাষা নিয়ে আমার নিজস্ব কিছু চিন্তা আছে। এবারের একুশের বইমেলায় বাংলা ভাষার উদ্ভব ও অন্যান্য নামে একটা বই বেরোলেন প্রথমা থেকে। এর মধ্যে আমি সেই কথা বলেছি। এ বিষয়েও পণ্ডিতেরা মুখস্থ কথা বলেন। সুকুমার সেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ও তা-ই বলেছেন যে আর্যদের মৌখিক ভাষা থেকে বাংলা ভাষার উদ্ভব হয়েছে। তাঁরা এটা বিবেচনা করেন না, আর্যরা একটা ফাঁকা দেশে আসেনি। এখানে অনেক ভাষা প্রচলিত ছিল। সেই ভাষার সঙ্গে তাদের মিথস্ক্রিয়া হয়েছে। মিথস্ক্রিয়া হয়ে তবে কিনা একটা নতুন ভাষা গড়ে উঠেছে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই আর্যদের ভাষার উপাদান। যেহেতু তারা বিজয়ী শক্তি হিসেবে এসেছিল, তাই তারা ছিল প্রভাবশালী। কিন্তু এ দেশে যেসব ভাষা প্রচলিত ছিল, হয়তো সাঁওতালদের, কোলদের, মুন্ডাদের ভাষা। এসব ভাষার উপাদান আর্যদের ভাষার সঙ্গে মিশে থাকবে। মিশেছে বলেই এসব ভাষার যে বৈশিষ্ট্য, তার ব্যাখ্যা দিতে পারেননি সুনীতিবাবু। যেমন ‘গেলো’। এই ‘লো’ দিয়ে অতীত কাল হয়। কেন হয় ‘লো’? এটা তো কেউ বলতে পারেননি। হিন্দিতে বলে ‘গিয়াথা’, মানে গিয়া। কিন্তু ‘লো’ তো বলে না। ওটাও তো সংস্কৃত থেকে এসেছে। তাহলে বাংলায় ‘লো’ বলে কেন? কিংবা ‘করব’। হিন্দিতে বলে ‘করেগা’। বাংলায় আরও বলে, ‘করবে’। এই বৈশিষ্ট্য কেন? সেই ভাষা আমরা আজ চিনি না। কিন্তু সেই ভাষার ছাপটা রয়ে গেছে। আমি বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশটা মোটামুটি লিখেছি। এর সঙ্গে আমি বাংলা সাহিত্য সম্পর্কেও একটু লিখতে চাই।
আপনি শুরু করেছিলেন গদ্য দিয়ে। নিজের গদ্যভাষার ব্যবহার নিয়ে আপনি অত্যন্ত সচেতন। আপনার আশার ছলনে ভুলি, বিদ্রোহ রণক্লান্ত: নজরুল–জীবনী বইয়ে ভাষার সাবলীলতা ও গদ্যমাধুর্য উপন্যাসের ভাষাকে মনে করিয়ে দেয়। তাহলে উপন্যাস আর লিখলেন না কেন?
গোলাম মুরশিদ: আশার ছলনে ভুলির রিভিউ করেছিলেন সফি আহমেদ। তিনি বলেছিলেন, ‘গোলাম মুরশিদ একসময় উপন্যাস লেখার চেষ্টা করেছিলেন।’ এই বইতে আমরা উপন্যাসের ঢঙে মধুসূদনের জীবনী পাই। এটা তাঁর চোখ এড়ায়নি। আমি আমার লেখাগুলোয় চেষ্টা করি একটা সূত্র রাখতে। এক অধ্যায় থেকে আরেকটা অধ্যায়ে গেলে আগের অধ্যায়ের সঙ্গে পরের অধ্যায়ের একটা সূত্র রাখার চেষ্টা করি। এটা বিদ্রোহী রণক্লান্ততেও আছে। এটা আশার ছলনে ভুলির চেয়ে পরিপক্ব লেখা। কারণ, আশার ছলনে ভুলি লেখার সময় লেখার স্টাইলটা ঠিক খুঁজে পাইনি। কিন্তু এটার মধ্যে আশার ছলনে ভুলির তুলনায় বিশ্লেষণ করতে পেরেছি অনেক বেশি এবং সেই ভাষায় পরিবেশন করতে পেরেছি। এর মধ্যে বেশ রসিকতাও আছে। নজরুল তো হিন্দুয়ানি রান্না খেতে অভ্যস্ত নন। এটা কিন্তু আমি ঠাট্টা করতে করতে বলেছি। কোনো নজরুলজীবনীকার এ রকম একটা ঠাট্টা বা পর্যবেক্ষণ দিতে পরেছেন কি না সন্দেহ। আশার ছলনে ভুলি আমি এভাবে লিখতে পারিনি। অনেক আগে আমি বলতাম, আমার যেসব লেখা পাইপলাইনে আছে, সেগুলো শেষ হয়ে গেলে উপন্যাস লিখব।
এখনো সেই পরিকল্পনা আছে?
গোলাম মুরশিদ: পরিকল্পনা এখনো আছে। উপন্যাস যখন লেখার চিন্তা করি, তখন আত্মজীবনী লেখার কথা চিন্তা করি না। কারণ, আত্মজীবনীতে সত্যবাদী হতে হবে। আর উপন্যাস আমি লিখতে পারব কল্পনা দিয়ে। এ জন্য উপন্যাসের কথা চিন্তা করেছি। আত্মজীবনী আমি লিখতে পারব কি না, এ বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ, বারবার সত্য আমাকে খোঁচা দেবে। বিশেষ করে আমি সংকোচ বোধ করি, এলিজা (গোলাম মুরশিদের স্ত্রী) জীবিত থাকা অবস্থায় আমার পক্ষে আত্মজীবনী লেখা সম্ভব কি না।
একবার বাংলা একাডেমিতে আপনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের অনেকেই উপন্যাস লেখেন প্রবন্ধের ভাষায়। উপন্যাসের ভাষা তাঁরা রপ্ত করতে পারেননি। আপনি একজন কথাসাহিত্যিকের নামও বলেছিলেন।
গোলাম মুরশিদ: ঠিক, অনেকেই উপন্যাস লেখেন, কিন্তু উপন্যাসের ভাষা হয় না। এটাই আমার সত্যিকারের মন্তব্য। উপন্যাসের ভাষার কাছাকাছি গিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। গল্পের যে আলাদা একটা ভাষা আছে, সেটা আমাদের দেশের অধিকাংশ লেখক জানেন না। সে জন্য অনেকে উপন্যাস লিখেও ঔপন্যাসিক হতে পারেননি।
আপনার বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাংস্কৃতিক পটভূমি বইয়ের লেখাগুলো কোন সময়ের?
গোলাম মুরশিদ: পুরোপুরি একাত্তর সালেই লেখা। কলকাতায় থাকা অবস্থায়। তখন লিখেছি ‘হাসান মুরশিদ’ নামে। এই লেখার জন্য আমাকে এ নামেই বহু জায়গায় লোকে চিনত। আমার এসব লেখার অংশবিশেষ থেকে এখান থেকে একটু, ওখান থেকে একটু উদ্ধৃত করে পরবর্তী সময়ে অনেক লেখা বেরিয়েছে। ‘হাসান মুরশিদ মনে করেন’—এ রকম বলে কিংবা ‘এখন এ বিষয়ে হাসানের উদ্ধৃতি দিচ্ছি’—এই সব বলে আমার লেখার উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হতো। আমার তখন নামই হয়ে গেল হাসান মুরশিদ। এ সময় বীরেন চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বেশ ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল। পরেও অনেকবার দেখা হয়েছে। সুনীলবাবু এক সভায় আমার সামনে এক প্রসঙ্গে আশার ছলনে ভুলি নিয়ে বললেন, ‘এখন মুরশিদ যেমন উপন্যাস লিখছেন মাইকেলকে নিয়ে।’
স্বাধীনতার বহু বছর পার হয়েছে। ষাটের দশকে প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রভাবিত করেছে রাজনৈতিক আন্দোলনকে। আপনার কী মনে হয়, বাঙালির সেই মেজাজ কতটা আছে? এখনকার অবস্থাকে কীভাবে আখ্যায়িত করবেন?
গোলাম মুরশিদ: এখনকার অবস্থা পুরো উল্টো নয়। একদিক থেকে উল্টো এ জন্য যে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিচয়টা ভুলে গেছে মানুষ। কিন্তু ‘বাংলাদেশ’ পরিচয়টা ভোলেনি। বাংলাদেশের মানুষ যে একটা ভিন্ন জাতি, একটা ভিন্ন দেশের অধিবাসী, আমরা পশ্চিম বাংলার সঙ্গে এক নই, সেটা বেশ সচেতনভাবেই ধারণ করে। বাংলা ভাষার প্রতিও দরদ সচেতনভাবেই আছে। নেই যেটা, সেটা ধর্মনিরপেক্ষতা আর অসাম্প্রদায়িকতা।
সংস্কৃতিচর্চার ধরনটা বদলে গেল, সেটা কি সংস্কৃতিকর্মীদের সুবিধাবাদী রাজনীতির সংস্পর্শে যাওয়ার কারণে?
গোলাম মুরশিদ: সংস্কৃতিচর্চাটা একেবারে পাল্টে গেল। রাজনৈতিক কারণ আছে। আরও একটা কারণ আছে। এখন রবীন্দ্রসংগীত গাইতে কোনো বাধা আসে না। রবীন্দ্রসংগীত গাওয়ার উৎসাহ আছে। এভাবে কিন্তু প্রতিবাদের ভাষাটা আমরা হারিয়ে ফেললাম। আমরা যে প্রতিবাদ করতে গিয়ে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চা শুরু করেছিলাম, সেই স্পৃহা আর রইল না।
বিরুদ্ধ-স্রোতে চলতে গিয়ে যে ভালো কিছু হয়...
গোলাম মুরশিদ: ঠিক তা-ই। কারণ, রবীন্দ্রনাথ হয়ে গেলেন সরকারি কবি। নজরুল হয়ে গেলেন সরকারি কবি।
এটা কি ভালো হলো, নাকি মন্দ হলো?
গোলাম মুরশিদ: এটা মন্দ হলো। কারণ, প্রতিবাদের ভাষায় তাঁরা জীবন্ত হয়ে উঠছিলেন। প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে তাঁদের সৃষ্টি প্রভাবিত করছিল জনসাধারণকে। এখন তাঁরা যেন প্রতিবাদী সুর হারিয়ে ফেললেন। তাঁরা সাধারণ হয়ে গেলেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁদের স্মরণ করা হয়। আগে ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র। ফলে সাধারণ মানুষের যে অংশগ্রহণ, সেটা আর থাকল না।
আপনার একটা বই আছে রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া। এটা সত্যি, বর্তমানে নারীদের অগ্রগতি হয়েছে, নানা ক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন বেড়েছে, শিক্ষা-সংস্কৃতি-চিকিৎসায় নারীর অংশগ্রহণ সন্তোষজনক। কিন্তু সমাজে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন সম্পর্কে কী বলবেন?
গোলাম মুরশিদ: এর উত্তরের আগে একটা কথা বলি। যে রোকেয়াকে বর্তমানে হাজির করা হচ্ছে, সেটা নজরুল ইসলামের মতোই। রোকেয়া কখনো নিজের নামের আগে ‘বেগম’ লেখেননি। শুধু তা-ই নয়। রোকেয়া মুসলমানদের শিক্ষাক্ষেত্র ছাড়া কিছু করেননি। এটা তাঁর সীমাবদ্ধতা। এই দিকে কেউ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন না। রোকেয়া স্কুল পরিচালনা করেছেন, বাংলা স্কুল নয়। সে কথা কেউ বলেননি। রোকেয়ার জন্মতারিখ কেউ জানেন না। কিন্তু সেটাকে সম্পূর্ণ ভ্রান্তভাবে ৯ ডিসেম্বর মৃত্যুদিবসের সঙ্গে মিলিয়ে পালন করা হয়। সেটা ঠিক নয়।
তাঁর এই জন্মদিনের তারিখটা কে কবে থেকে চালু করল?
গোলাম মুরশিদ: যাঁরা এখনকার সবকিছু ডিসটর্ট করছেন, তাঁরাই চালু করেছেন। মেয়েদের ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গিগত ব্যাপারে বলতে গেলে প্রথমেই বলি, পরপর দুজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নারী। বহু এমপি হয়েছেন নারী। সুতরাং নারীদের ক্ষমতায়ন যে হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বাড়িতে বাড়িতে নারীদের কণ্ঠ এখন শোনা যায়। নারীদের অগ্রগতিটা এখন পর্যন্ত সঠিক পথেই আছে। কিন্তু নারীদের সম্পর্কে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টায়নি।
আশার ছলনে ভুলি ও হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি—আপনার এই দুটো বইয়ের লেখা ধারাবাহিকভাবে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। পাঠকের প্রতিক্রিয়া কেমন পেয়েছিলেন?
গোলাম মুরশিদ: আশার ছলনে ভুলি একটা ব্যতিক্রম। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিও একটা ব্যতিক্রম। এই বই কুড়ি হাজার কপি বিক্রি হয়েছে। কাজেই এ দুটোকে ব্যতিক্রমই বলতে হবে। এ ছাড়া যখন পলাতকও ধারাবাহিকভাবে বেরিয়েছিল, এটা সংবাদ–এ। এর মধ্য দিয়েই আমি পাঠকের প্রতিক্রিয়া বা পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা বুঝতে পেরেছি। আর আমার পাঠকদের বেশির ভাগই হচ্ছেন সাধারণ পাঠক। এসব পাঠক ইতিহাসের মতো নীরস বই আকারে বেশ বড় এ বই কিনছেন, পড়ছেন; সুতরাং এটা দেখে নিজেকে আমি সফল বলে মনে করি।
এসব বই নিয়ে আপনার সমসাময়িক গবেষকদের প্রতিক্রিয়া কেমন পেয়েছেন?
গোলাম মুরশিদ: না। পাইনি তেমন। বরং হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি বইয়ের অনেক লেখা বা লেখার অংশবিশেষ নিজেদের নামে রচিত বইয়ে নিজের বলে চালিয়ে দিয়েছেন। ইতিহাসের এক লোক বাংলাদেশের সংস্কৃতি বলে প্রবন্ধের বই লিখেছেন, আমার বইয়ের অধ্যায়ের ভাগগুলো পর্যন্ত একই রকম রেখেছেন তাঁর বইয়ে। আমি আরও একটা বইয়ের কথা বলি। সেটা নজরুল–জীবনী বিদ্রোহী রণক্লান্ত। ফেব্রুয়ারিতে (২০১৮) বেরোনোর পর ডিসেম্বরের মধ্যে বইটা চারবার মুদ্রিত হয়েছে। (২০২৪ সাল পর্যন্ত বইটির অষ্টম মুদ্রণ হয়েছে)।
বিবর্তনমূলক অভিধান–এর মতো বড় প্রকল্পের কাজ আপনি শেষ করেছেন। সেটা নিয়ে পাঠক বা পণ্ডিত বা সমালোচকদের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য বা মূল্যায়ন পেয়েছেন কি?
গোলাম মুরশিদ: কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। ইদানীং কেউ কেউ উল্লেখ করেন। কিন্তু পণ্ডিতেরা নাকি বলেন, এটা কিছুই হয়নি। আর পাঠকেরা এখনো এটার প্রতি আগ্রহ দেখাননি। তবে বাড়ি সাজানোর জন্য মোটা তিন খণ্ডের এ বই অনেকেই কিনেছেন। আমি মনে করি, বিবর্তনমূলক অভিধান–এর এই কাজ অসাধারণ। এই কাজের মূল্য হবে বলে আমার বিশ্বাস। এর জন্য পাঠককে আরেকটু শিক্ষিত হতে হবে।
প্রত্যাশা-প্রাপ্তি-স্বীকৃতি আপনার ক্ষেত্রে এর সমীকরণটা কেমন?
গোলাম মুরশিদ: আমি বেশি প্রত্যাশা করিনি। স্বীকৃতি পেয়েছি সীমাবদ্ধভাবে। তবে পাঠকস্বীকৃতি পেয়েছি। আর বই পাঠ্য করার ক্ষেত্রে যাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা যদি নিজেদের বিশেষ অহংয়ের কারণে আমাকে অবজ্ঞা করেন, সেটা তো তাঁদের ব্যাপার। যাঁরা আমাকে স্বীকৃতি দেননি, তাঁদের নিজেদের একটা বই দ্বিতীয় সংস্করণ হয়েছে কি না, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।