‘প্রতারিত সময়ে সত্য বলা একটি বিপ্লবী কাজ’

১৯৬৮ সালে ফ্রান্সে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন ছাত্ররা। সাত সপ্তাহ ধরে চলা আন্দোলনটি ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লব নামে পরিচিত। এই আন্দোলনের সঙ্গে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলনের খুব মিল। সমাজ ও ইতিহাসের আলোকে বিশ্লেষণ

১৯৬৮ সালের ফরাসি ছাত্র আন্দোলনের গ্রাফিতি এবং বাংলাদেশে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনের গ্রাফিতি অবলম্বনে কোলাজ

বাংলাদেশে যখন তারুণ্যোদ্দীপ্ত শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলছে, তখন আমি জ্যঁ জ্যাক রুশোর এমিল বা শিক্ষা বইটি প্রকাশের দুঃখের কাহিনি পড়ছিলাম। অবক্ষয়ের সময়ে শিল্প কিংবা সাহিত্য প্রকাশের ধরন কেমন হয়, বস্তুত সেটা জানার তাগিদেই। সে যাকগে! রুশোর বন্ধুভাগ্য ভালো, সে সময় তাঁর বইটি প্রকাশের ভার নিয়েছিলেন মাদাম দ্য লুক্সেমবার্গ, মানে ফরাসি বুর্জোয়া মার্শাল পরিবার। প্রকাশের পর ফরাসি শাসকশ্রেণির কাণ্ডকীর্তির কথা অনেকেরই হয়তো জানা। প্রকাশের বছরেই—১৭৬২ সালে—বইটি নিষিদ্ধ হয়েছিল ফ্রান্স ও জেনেভায়। অবশ্য রুশো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন তৎকালীন ফরাসি সমাজের দগদগে ঘা, শাসকশ্রেণির এন্তার গলদ, বহু অসামঞ্জস্য, দুর্নীতির পাহাড় আর খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের দুরবস্থার কথা। দেখিয়েছেন বিদ্যমান সমাজব্যবস্থার ক্ষতচিহ্নগুলো কীভাবে উদোম হয়ে আছে। রুশোর দাবি, ‘সমাজে অবক্ষয়ের শুরু মানুষের হাতে।’ তবে এ কথা সত্য, যেকোনো সমাজে অবক্ষয়ের শুরু হয় শাসকশ্রেণির হাত ধরেই। বস্তুত এমিল বইটিকে বলা চলে পচাগলা নষ্ট সমাজে আদর্শ নাগরিক হয়ে বেঁচে থাকার উপায়। তবে এমিল–এর সে পথ সরল নয়, বিস্তর কণ্টকাকীর্ণ। রুশোর এমিল প্রকাশের ২৬২ বছর পর ফরাসি সমাজ অনেক দূর এগিয়েছে। আর বাংলাদেশের দিকে তাকালে প্রশ্ন জাগে, আমাদের গোটা সমাজব্যবস্থা কিংবা শিক্ষাব্যবস্থা সেই এমিল–এর যুগে নয় কি?

  ২.

গত ৫ জুন কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দেন। পরদিন ৬ জুন ছাত্ররা রায়ের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। সে সময় থেকে ভেতরে–ভেতরে ছাত্রদের ক্ষোভ-উত্তাপ দানা বাঁধছিল, সেটা টের পাওয়া গিয়েছিল নানাভাবে। সারা দেশের ছাত্ররা নানাভাবে সংগঠিত হচ্ছিলেন। জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ছাত্র বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পরখ করছিলাম এবারের ছাত্র আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি। আর চলমান ছাত্র আন্দোলনের সময় চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছিল ইতিহাসের কয়েকটি পাতা। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে বিশ্বের অসংখ্য আলোচিত ছাত্র আন্দোলন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১৮৪৮ সালের ফরাসি ছাত্রদের বোহেমিয়ান আন্দোলন। সামন্ততন্ত্রের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের সেই লড়াইকে ইতিহাসে ‘ফরাসি বিপ্লব’ বলে অভিহিত। ইতিহাসের আরেক কিংবদন্তি ঘটনা নাৎসিবিরোধী ‘হোয়াইট রোজ মুভমেন্ট’। মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল ছাত্র অ্যাডলফ হিটলারের বর্বরতার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছিলেন। সেবার খুনি নাৎসি সরকারের বিরুদ্ধে লিফলেট বিতরণের দায়ে ছয় ছাত্রকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নির্মম পরিণতি মানুষ দেখেছে। ইতিহাস খলনায়ক হিটলারকে ফ্যাসিস্ট বলে সাব্যস্ত করেছে।

ইতিহাসে আরেক আলোচিত ছাত্র আন্দোলন হয়েছিল জাপানি ঔপনিবেশিক কোরিয়ায়। ১৯১৯ সালের এই আন্দোলন ‘মার্চ মুভমেন্ট’ নামে খ্যাত। উপনিবেশবিরোধী এই আন্দোলন কোরিয়ার স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করেছিল। আর সর্বশেষ বেকারত্ব, বৈষম্য আর অগণতান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে ১৯৬০ সালে নির্বাচনে কারচুপির প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছিলেন কোরিয়ার ছাত্ররা। এখনো ইতিহাসে অনন্য হয়ে আছে জাতিবিদ্বেষবিরোধী আফ্রিকার ছাত্র আন্দোলন। ১৯৭৬ সালে জোহানেসবার্গের সোয়েতোর এক কৃষ্ণাঙ্গ বিদ্যালয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। প্রশ্ন উঠেছিল বান্টুনীতি নিয়ে, রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিকতা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাষা কী হবে? মাত্র তিন দিনের—১৬ থেকে ১৮ জুন—সেই আন্দোলনে নিহত হয়েছিলেন সরকারি হিসাবে ১৭৬ জন। তবে বেসরকারি হিসাবে অনেক বেশি। অবশ্য থেমে থেমে এই আন্দোলন জাতিবিদ্বেষ ও বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। মুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় এই আন্দোলন জন্ম দিয়েছিল কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলাকে। ১৯১৯ সালে চীনে হয়েছিল ‘মে ফোর্থ মুভমেন্ট’। ‘ভার্সাই চুক্তি’ ওরফে ‘জাপান-চীন সামরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি’ ফাঁস হয়ে গেলে ছাত্ররা ক্ষুব্ধ হন। সে সময় চীন সরকারের অবনমিত নীতির বিরুদ্ধে বেইজিংয়ে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল। ইতিহাসে এই আন্দোলন ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ‘সাংস্কৃতিক বিপ্লব’ বলে বিবেচিত। সেই আন্দোলনের ফসল কিংবদন্তি কমিউনিস্ট নেতা মাও সে–তুং। আবার চীনের তিয়েনআনমেন স্কয়ারের গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলন তো খুব বেশি আগের নয়। স্মৃতিতে এমন আরও ঐতিহাসিক আন্দোলনের ঘটনা ভাসছিল। স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে আমি মিল খুঁজছিলাম বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে অতীতের কোন ছাত্র আন্দোলনের মিল। আন্দোলনগুলোর ইস্যু ভিন্ন ভিন্ন হলেও গতিপ্রকৃতির দিক থেকে একসূত্রে গাঁথা। সর্বতোভাবে আন্দোলনগুলো ছিল দুঃশাসন, শোষণনীতি, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, সম–অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আর স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে মুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজের আকাঙ্ক্ষার সুদূর পথ।

‘সব কথা বলা হয় না এখানে, যা বলা হয় তা শুধু ইঙ্গিত, ইশারামাত্র। স্থিতাবস্থার পক্ষে তো নয়ই, উল্টো সমূহ ধ্বংসের বাণী বেশি শোনা যায়।’

  ৩.

প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন (জুলাই ২০২৪) দুনিয়ার কোন ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তুলনীয়? গতিপ্রকৃতি, হত্যাযজ্ঞ আর ধ্বংসযজ্ঞের বিবেচনায় বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকে দুটো ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। একটি হচ্ছে সোয়েতো মুভমেন্ট, আরেকটি হচ্ছে ১৯৬৮ সালের ফরাসি ছাত্রবিপ্লব। কেন? সময় বিবেচনায় ফরাসি ছাত্রবিপ্লব ছিল সাত সপ্তাহের; আমার মতে, বাংলাদেশেও তা–ই (চলতি বছরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৬ জুন ছাত্রদের বিক্ষোভ বিবেচনায় নিয়ে)। চরিত্রগত দিক থেকে তিনটি আন্দোলনই প্রথমে ছিল শান্তিপূর্ণ, পরে সহিংসতায় পর্যবসিত হয়। সোয়েতো মুভমেন্টের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশে আন্দোলনে হতাহতের সংখ্যায় সোয়েতো মুভমেন্টকেও হার মানিয়েছে। সোয়েতো মুভমেন্টে নিহত হয়েছিলেন ১৭৬ জন, আর বাংলাদেশে এ সংখ্যা দুই শতাধিক। জোহানেসবার্গে সেদিন প্রথম পুলিশের সামনে বুক পেতে দিয়েছিলেন নিরস্ত্র ছাত্র আন্দোলনের নেতা হেক্টর পিটারসন। আর বাংলাদেশে সশস্ত্র পুলিশের সামনে বুক টানটান করে পেতেছিলেন নিরস্ত্র মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। অবশ্য আফ্রিকার জনগণ পিটারসনকে কখনো ভোলেনি। তারা তাদের জাদুঘরের নাম দিয়েছে ‘হেক্টর পিটারসন মিউজিয়াম’। জোহানেসবার্গের সেই জাদুঘরের স্লোগান, ‘টু অনার দ্য ইয়ুথ হু গিভস লাইভস ইন দ্য স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম’ (যেসব তরুণ স্বাধীনতাসংগ্রামের জন্য জীবন দিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা।) বাংলাদেশে শহীদ ছাত্রনেতাদের নামে এমন কিছু হবে কি না, জানি না। তবে এ কথা হলফ করে বলা যায়, আবু সাঈদই আমাদের কালের নায়ক হেক্টর পিটারসন। ইতিহাস কখনো তাঁদের ভুলবে না।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি আর সহিংসতার ধ্বংসযজ্ঞের দিক থেকে অনেক মিল। ফরাসি ছাত্র আন্দোলনটি গড়ে উঠেছিল শাসক চার্লস দ্য গলের স্বৈরনীতির বিরুদ্ধে। প্রথম দিকে এটি ছিল সরবন বিশ্ববিদ্যালয়, আর বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে। ফরাসি ছাত্র আন্দোলন যেভাবে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে, কোটা সংস্কার আন্দোলনও একইভাবে দেশে দেশে ছড়িয়ে যায়। সে সময় গল সরকারের দমননীতির কারণে পুরো ফ্রান্স অগ্নিকুণ্ড হয়ে ওঠে। ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয় মজুরিবঞ্চিত নির্যাতিত শ্রমিকসহ খেটে খাওয়া জনগণ। দুর্নীতিবাজ সরকারের তরফ থেকে বলা হতো, ফ্রান্সে ‘উন্নয়নের নহর’ বইছে! বিক্ষোভকারীরা পুড়িয়ে দেয় গল সরকারের ‘উন্নয়নের ম্যাজিক’ প্রতিষ্ঠানগুলো। বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের বিস্তৃতির ভেতর একই কাণ্ড ঘটেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনও বিপুল জনসমর্থন পায়। কারণ, অচিন্তনীয় দুর্নীতি, লুটপাটজনিত বৈষম্য, লাগামহীন দ্রব্যমূল্য, ভোটাধিকার হরণ আর অগণতান্ত্রিকতা নিয়ে জনক্ষোভ বিক্ষোভে রূপান্তর হয়। তদুপরি আন্দোলনে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করে সরকারসমর্থক ও বাহিনীগুলো। ফলে ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সরকার ছাত্রদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ততক্ষণে দেশ ধ্বংসযজ্ঞের শেষ সীমানায়। ইতিহাসে দেখা যায়, দুনিয়ার বড় বড় ছাত্র আন্দোলন কখনোই অহিংস ছিল না। এ বিষয়ে কিংবদন্তি ব্রিটিশ সমালোচক ও ঔপন্যাসিক জর্জ অরওয়েল সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অরওয়েল বলেছেন, ‘সব স্বৈরশাসকই জালিয়াতি এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমে শাসন করে, কিন্তু একবার জালিয়াতি ফাঁস হয়ে গেলে তাদের ব্যাপকভাবে শক্তির ওপর নির্ভর করতে হয়।’ বস্তুত, শাসকশ্রেণির অপরিণামদর্শী বলপ্রয়োগের কারণে যেকোনো আন্দোলন সহিংস হয়ে উঠতে বাধ্য।

৪.

ষাটের দশকের ফরাসি ছাত্রবিপ্লব গোটা দুনিয়ায় বুদ্ধিবৃত্তিক জগৎ, শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতিতে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। সেই আন্দোলনে লক্ষণীয় দুটো বিষয় ছিল—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে সরকারপন্থী অধ্যাপকদের ভূমিকা আর সত্য খবর প্রচারে বেতার-টিভির অবিমৃষ্যকারিতা! বিপরীতে ফরাসি দার্শনিক ও বুদ্ধিজীবী জ্যঁ পল সার্ত্রে, চলচ্চিত্রকার জ্যঁ-লুক গদারসহ অসংখ্য বুদ্ধিজীবী-বামপন্থী অধ্যাপক আন্দোলনের সমর্থনে রাজপথে নেমেছিলেন। আটক করা হয়েছিল জ্যঁ পল সার্ত্রেসহ অনেককেই। আন্দোলন এমন তুঙ্গে উঠেছিল যে বেতার-টিভি বন্ধ করে শ্রমিকেরাও ছাত্র ধর্মঘটে যোগ দেন। কয়েকটি সংবাদপত্রের ব্যতিক্রম ভূমিকা বাদ দিলে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কিংবা সত্য খবর প্রকাশে সরকার–সমর্থিত গণমাধ্যমগুলো একই রকম অবিমৃষ্যকারিতা করেছে। অবশ্য ফরাসি ছাত্ররা সে সময় এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব সাধন করেন। পারির দেয়ালে দেয়ালে ছেয়ে গিয়েছিল গ্রাফিতির নতুন ইশতেহার। দার্শনিক হেরোক্লিটাস, মার্ক্স, বাকুনিনের বাণীসহ দেয়ালে দেয়ালে তাঁরা এঁকেছিলেন গ্রাফিতি আর স্লোগান। যেমন ‘সংঘর্ষ থেকে সবকিছুর সৃষ্টি’, ‘বস্তু, তুমি লুকিয়ে পড়ো’, ‘কবিতা এখন রাস্তায়’, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহায়াগণ, জাগো’, ‘দেয়ালে লিখতে আমার ভালো লাগে না’, ‘দূর, যেখানে খুশি লেখো’, ‘বিমূর্ততা নিপাত যাক, জয় হোক ক্ষণিকের’, ‘বাঁচার অধিকার চাইতে যেয়ো না হে, ছিনিয়ে নাও’—এমন শত শত ইশতেহার। গ্রাফিতির ইশতেহারের মর্মমূল হচ্ছে, ‘সব কথা বলা হয় না এখানে, যা বলা হয় তা শুধু ইঙ্গিত, ইশারামাত্র। স্থিতাবস্থার পক্ষে তো নয়ই, উল্টো সমূহ ধ্বংসের বাণী বেশি শোনা যায়।’

বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলন এর মধ্যেই বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এটি যে অনন্য উচ্চতায় উঠবে, এতে কোনো সংশয় নেই। কেননা, সব মিলিয়েই বাংলাদেশে এ আন্দোলনের পরিসর এতই বৃহৎ যে পৃথিবীর ইতিহাসের অতীতের সব আন্দোলনকে ছাপিয়ে গেছে। অবিস্মরণীয় ছাত্র আন্দোলনের সাংস্কৃতিক ফলাফল অনেক সুদূর। যেখানে মানুষ জীবনপণ করেছে, সেখানে ভয়ের সংস্কৃতি তুচ্ছ। কলম অবারিত। জীবনের স্পন্দন আলোড়িত। হৃদয় অনেক প্রশস্ত। জীবন যখন সত্যকে ধারণ করে, তখনই তো লেখক, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিকদের জেগে ওঠার সময়। অরওয়েলের ভাষায় বললে, ‘প্রতারিত সময়ে সত্য বলাটাই একটি বিপ্লবী কাজ।’ লেখক কিংবা শিল্পী হওয়া মানে শুধু সত্যের বয়ান দেওয়া নয়, সত্যকেও আবিষ্কার করা। শেষে এটুকুই বলব, অবক্ষয়ের সময়ে আপনি নীরব থাকা মানে নিজের ইতিহাস থেকে নিজেকেই মুছে ফেলা।