কোভিড-১৯ অতিমারি বিষয়ে দেশের শিশু–কিশোরদের অনুভূতি জানতে চেয়েছিল সেভ দ্য চিলড্রেন। শিশু–কিশোরেরা লেখা ও আঁকায় তাদের কথা বলেছে। সেখান থেকে বাছাই করা আরও ৫টি লেখা ও ৫টি আঁকা ছাপা হলো। লেখা ও আঁকাগুলো সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের হিউম্যানিটেরিয়ান সেক্টরের অন্তর্গত প্রয়াস-২ প্রকল্প, শিশুকেন্দ্রিক জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প ও নগর দুর্যোগ সহনশীলতা বৃদ্ধি প্রকল্প-২–এর মাধ্যমে সংগৃহীত হয়েছে।
ঘরেই নিরাপদ
মাইশা হোসেন
নবম শ্রেণি, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা
আমাদের পৃথিবী এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই মানুষ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হচ্ছেন, দ্রুত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সবার মতো আমিও বাড়িতে বন্দী। প্রতিটি চ্যানেলেই খারাপ খবর, তাই টিভি দেখতেও ভালো লাগে না। তবু তো আমি বাসায় আছি, তিন বেলা খেতে পারছি; কিন্তু লাখ লাখ মানুষ খাবার পাচ্ছে না, এক টুকরো রুটির আশায় দিন কাটাচ্ছে—বিষয়টা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে। মানুষজন চাকরি হারাচ্ছে, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে, আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
আমার দৈনন্দিন জীবনটাও বদলে গেছে, আগের মতো নেই। যেহেতু স্কুলে যেতে পারছি না, তাই অনলাইনে ক্লাস করছি, পরীক্ষা দিচ্ছি। তবে এই সময়ের একটা প্রাপ্তি হলো মা-বাবার সঙ্গে আমি অনেক সময় কাটাতে পারছি। যদিও স্কুল ক্যাম্পাস, বন্ধু আর সহপাঠীদের অভাবটা অনুভব করছি। এর মধ্যে পবিত্র রমজান মাস এবং ঈদ চলে গেল, তবে তা অন্য সব রমজান বা ঈদের মতো ছিল না। এটাই যেন প্রথম আর শেষবারের মতো এমন ঈদ হয়। কেবল মা-বাবার সঙ্গে দিনটি কাটাতে হয়েছে। গ্রামের বাড়ি যেতে পারিনি, কোনো আত্মীয়ের বাড়িতেও না। খুব মন খারাপ হয়েছে। দিনরাত বাসায় থাকতে থাকতে একঘেয়ে লাগে, যদিও অন্য কোনো উপায় নেই। তবে বাড়িতে আটকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত আমরা অন্তত নিরাপদে আছি।
জীবন ও প্রকৃতির পুনরুজ্জীবন
লামইয়া আক্তার
দ্বিতীয় বর্ষ (সম্মান), বিএল কলেজ, দৌলতপুর, খুলনা
আমি মুক্তি, এই কঠিন পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে আমি আমার পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। বাবার ব্যবসা বন্ধ, আয় কমে গেছে। বাবা বাইরে কাজে যাওয়ার আগে আমি তাঁকে মাস্ক পরে বের হতে বলি এবং মনে করিয়ে দিই সবার সঙ্গে যেন নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলাফেরা করেন। ঘরে মা-ও যেন সুরক্ষিত থাকেন, তার জন্য বারবার সবাইকে সাবান দিয়ে হাত ধুতে মনে করিয়ে দিই। কলেজ ছুটি, তাই পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাই, পাশাপাশি আমার শখের ছাদবাগানের পরিচর্যা করি।
আমার বাড়ির সামনেই কাঁচাবাজার, তাই প্রতিদিন সকালে প্রচুর লোকসমাগম হয় সেখানে। মাস্ক না পরে আসা অগণিত মানুষের ভিড় থাকে সেখানে, থাকে না কোনো নিরাপদ দূরত্ব; অথচ তারা সবাই সব বোঝে, নিয়মিত টিভিতে আক্রান্ত হওয়া এবং মারা যাওয়ার সংবাদ শোনে। আমাদের এলাকায় মোড়ে মোড়ে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমিও প্রতিবেশীদের সবাইকে হাত ধোয়ার কার্যকারিতা সম্পর্কে জানাচ্ছি এবং সঠিকভাবে হাত পরিষ্কার করার জন্য তাদের উৎসাহিত করছি।
এই কঠিন পরিস্থিতিতেও আমি প্রকৃতির কথা ভেবে আনন্দিত যে ঘরে থাকলেও অন্তত প্রাণভরে নিশ্বাস নিতে পারছি, বাতাসে কালো ধোঁয়া বা কার্বনের পরিমাণ কমেছে নিশ্চয়ই, প্রকৃতি যেন সেজে উঠছে তার নিজস্ব ঢঙে। চারপাশে গাছপালা আরও সজীব সবুজে পরিণত হচ্ছে, যেখানে নেই কোনো শব্দদূষণ আর বায়ুদূষণ।
তারপরও যেন সবকিছুতে ছন্দ নেই, মানুষের জীবন থমকে গেছে, কর্মহীন হয়ে পড়েছে, খাদ্যহীন হয়ে পড়েছে। জানি না এর শেষ কোথায় আর মানুষ এবং প্রকৃতি কবে ফিরবে তার স্বাভাবিক নিয়মে! যারা এই মহামারিতে প্রিয় পরিজন হারিয়েছে, কবে তারা শোক কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে? আরও কত প্রিয়জনকে হারাতে হবে আমাদের? কীভাবে দেশ আর এই পৃথিবী তার অপূরণীয় ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে! জীবন ও প্রকৃতিকে বাঁচাতে আসুন আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে সচেতন হই।
পৃথিবীর জন্য শুভকামনা
শাহিনুর ইয়াসমিন
দশম শ্রেণি, মেট্রো পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয়, খালিশপুর, খুলনা
লকডাউনের প্রথম দিকে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। স্কুল বন্ধ থাকার কারণে আমি আমার বান্ধবীর বাসায় গিয়ে গল্প করতাম আর খেলাধুলা করতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে এই করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়তে থাকায় আমি বুঝতে পারলাম আমার আর বাইরে যাওয়া উচিত নয়। এরপর ঘরে বসেই বিভিন্ন গল্পের বই পড়া, প্রচুর ছবি আঁকা ও টেলিভিশন দেখে সময় কাটাতে লাগলাম। টেলিভিশনে অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়ার পর নিয়মিত ক্লাস করার পাশাপাশি বাড়ির রকমারি কাজে মাকে সাহায্য করে সময় ভালোভাবেই কাটছিল।
হঠাৎ অনুভব করতে শুরু করি, এই লকডাউনই আমার কষ্টের কারণ হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিবারেও একধরনের ছন্দপতন ঘটল, যা ঘটতে পারে বলে কখনোই ভাবিনি। আমার দুই ভাই কলেজে পড়ে। লকডাউনের এই করুণ পরিস্থিতিতে বাবার চাকরিটাও চলে গেল। আমার বাবা ছিলেন খালিশপুর জুট মিলের একজন দিনমজুর এবং আমাদের নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক দায়ভার বাবার আয়ের ওপরই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ছিল। এরই মধ্যে অভাব যেন কঠোরভাবে দরজায় কড়া নাড়তে লাগল। ডিশ লাইনের বিল পরিশোধ না করতে পারায় সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন ডিশ লাইনের মালিকেরা। ধীরে ধীরে সময় কাটানো আমার জন্য কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল।
এখন আর গল্পের বইয়ের পৃষ্ঠাও যেন ওলটাতে ইচ্ছা করে না। ছবি আঁকাও আগের মতো ভালো লাগে না। মুঠোফোনে টাকা না থাকায় বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজন কারোর সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগও নেই।
আগে কখনোই এত দীর্ঘ সময় ঘরে বসে থাকিনি বা থাকতেও হয়নি। এখন আমি অনুভব করতে পারি বনের পাখিরা কীভাবে খাঁচায় বন্দী থাকে আর প্রাণীরা চিড়িয়াখানায় কীভাবেই-বা আটকে থাকে। পাখিদেরও কি আমাদের মতো তার বন্ধুদের কাছে ছুটে যেতে মন চায়?
বর্তমানে পরিস্থিতি যা-ই হোক, আমি মায়ের সঙ্গে ঘরের কাজ করি, মাকে কাজে সাহায্য করি, রান্না শিখি। আমার গড়া ছাদবাগানে এখন অনেক গাছপালা। প্রতিদিন বেশ খানিকটা সময় সেই ছাদবাগানে গাছের পরিচর্যা করি আর যত্ন নিই। আর এভাবেই কেটে যাচ্ছে আমার লকডাউনের সময়। এখন শুধু এটাই চাই যে পৃথিবী আবার সুস্থ হয়ে উঠুক আগের মতো, যেখানে আমরা পাখিদের মতো মুক্ত হয়ে ঘুরে বেড়াতাম।
করোনাকালীন সংগ্রামের গল্প
সাবিনা খাতুন
এসএসসি পরীক্ষার্থী, কেজুরী উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ, পূর্বচর কেজুরী, সিরাজগঞ্জ
আমার পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ হলেন আমার মা। বাবা মারা গেছেন আট বছর হলো। আমরা দুই ভাই-বোন। মা ক্ষুদ্র তাঁতের কাজ, যেমন চরকা দেওয়া ও সুতা বুনন, এসব কাজ করেন। ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশে প্রথম যখন লকডাউন শুরু হলো, তখন থেকে আমরা মায়ের কাজ কমে যেতে লাগল। তাঁত কারখানাগুলো কেন যেন একে একে বন্ধ হতে লাগল।
নিম্নবিত্ত পরিবার হলেও অন্যের কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করতে লজ্জা পাই, তাই কারও কাছে সাহায্যও চাইতে পারিনি। সত্যি বলতে কি, আগে কখনো আমি এ রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হইনি। পরিবারের জমানো কিছু টাকা দিয়ে কোনোভাবে চলে গেল এক মাস। এরই মধ্যে আমার মা খুব আর্থিক সমস্যার মধ্য দিয়ে সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন এবং দিন দিন তা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ছে।
অতি শখে পালা আমার কিছু মুরগি ও হাঁস ছিল, প্রয়োজনের তাগিদেই তার কিছু খেয়ে ফেলেছি এবং কিছু মা বিক্রি করে দিয়েছেন সংসার চালানোর জন্য। এই কষ্ট পাওয়ার পাশাপাশি মায়ের জন্য কিছু করতে পেরে মনের অজান্তেই ভালো লাগার একটা অনুভূতি তৈরি হলো।
মাকে সাহায্য করার জন্য আমিও কাপড় সেলাইয়ের কাজ শুরু করেছি। গত বছর এসএসসি পাস করেও কলেজে ভর্তি হতে পারিনি শুধু অর্থের অভাবে। ভেবেছিলাম এবার ভর্তি হব, কিন্তু করোনার এই পরিস্থিতি দিন দিন আমাদের লাগামহীন পরিস্থিতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। জানি না ঠিক কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে, আবার আমার মায়ের মুখে হাসি দেখতে পাব, সেই চিন্তা করি।
এই ক্রান্তিকালে বাসায় আমি আমার মাকে কাজে সাহায্য করি, গাছের পরিচর্যা করি, কাপড় সেলাইয়ের কাজ এবং নামাজ পড়ে আমার সময়টা কোনোভাবে কেটে যাচ্ছে। ভয় হয়! মাঝেমধ্যে খুব কষ্ট লাগে এই গৃহবন্দী জীবন, আমার বন্ধুদের জন্য, স্কুলের জন্য। আমার খুব ইচ্ছা করে বান্ধবীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে। আমাদের ঘরে টিভিও নেই যে টিভি দেখে সময়টা কাটাতে পারব।
এ অবস্থায় সরকারি নির্দেশ পালনের জন্য গৃহবন্দী জীবনই মেনে নিলাম আমরা, যা এখনকার জন্য সর্বোত্তম। যখন শুনি পুলিশ, সাংবাদিক, সেনাবাহিনী, স্বেচ্ছাসেবক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষের সেবায় নিরলস কাজ করছেন, তখন আমার তাঁদের জন্য গর্ববোধ হয়। বড় হয়ে আমিও তাঁদের মতো মানুষের সেবা করতে চাই এবং আমার মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। ভাবছি, এই মহামারি হয়তো এত তাড়াতাড়ি শেষ হবে না। হয়তো শেষ হতে বছর কয়েক লেগে যাবে। তবু এর জন্য আমরা লড়াই করে যাব, দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে সচেতনতা গড়ে তুলব।
ফিরে যেতে চাই না
সানজিদা
এসএসসি পরীক্ষার্থী, শাহীন তিতুমীর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খালিশপুর, খুলনা
ছুটি যে এত ভয়ংকর হবে, কে জানত? ভেবেছিলাম মাধ্যমিক পরীক্ষার ছুটির পর সুন্দরবন বেড়াতে যাব। কিন্তু তা আর হলো কই? বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ল অচেনা এক রোগ কোভিড-১৯, যার কারণে থমকে গেল পুরো পৃথিবীর জনজীবন। সব মানুষ খাঁচায় বন্দী পাখির মতো আটকা পড়ল ঘরে। তাই ছুটির আনন্দটা ভয়ানক হয়ে উঠল আমার কাছে। বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করা, বাসার ছাদে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুড়ি ওড়ানো, পার্কে বসে ফুচকা খাওয়া—সবই যেন বন্ধ হয়ে গেল এই করোনার দাপটে।
পৃথিবীর এই দুর্দিনে যেসব মানুষ তাঁদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থদের সুস্থ করতে দৃঢ়প্রত্যয়ী ও নতুন দিনের খবর আমাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন, তাঁদের জানাই স্যালুট আর অভিনন্দন। এ সময় অনেক দিনমজুর, রিকশাচালক, হকারের কথা ভাবলেই বিষণ্ন হয়ে ওঠে মনটা—যাঁরা হয়তো এক বেলার খাবারও ঠিকমতো পাচ্ছেন না। আর মানুষের এই গৃহবন্দী থাকার তাড়নায় প্রকৃতি আর মুক্ত—নিজেকে যেন প্রকাশ করেছে স্বাধীনভাবে। শহরের বড় বড় কলকারখানা, ইটভাটা, যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে সংগত কারণেই। শব্দদূষণ, পানিদূষণের হার কমেছে। ৫ জুন গৃহবন্দী অবস্থাতেই উদ্যাপন করেছি বিশ্ব পরিবেশ দিবস। তবে এটিই আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ পরিবেশ দিবস ছিল।
প্রকৃতির এই স্বাধীনতা দেখে ঘরবন্দী জীবনটাকেও তাই ভালো লাগে। আর বাসার সময়টাও একেবারে খারাপ যাচ্ছে না। বাবার সঙ্গে ক্যারম খেলা, টিভি দেখা, মায়ের সঙ্গে নতুন নতুন রান্না শেখা, মজার মজার বই পড়া বেশ ভালোই লাগছে। পাশাপাশি ছোট ভাইকে হাত ধোয়ার কৌশল শেখাতেও ভালো লাগে।
করোনার জন্য কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক টিকা এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকাই এখন পর্যন্ত সমাধান! বাসায় যখন বন্ধুদের কথা মনে পড়ে, তখন জানালার পাশে দাঁড়াই। জানালার পাশে একটি পেয়ারাগাছ আছে, যেখানে সকাল-সন্ধ্যা অনেক পাখি বসে। কিচিরমিচির শব্দে মাতিয়ে তোলে পরিবেশ। সুদূর নীল আকাশটাও দেখা যায় ওখান থেকে। পরিবেশের এই স্বাধীনতা দেখে নিজের স্বাধীনতার কথা ভুলে যাই তখন। তখন আর ফিরে যেতে মন চায় না বন্ধুদের মধ্যে। ফিরে যেতে মন চায় না ঘুড়ি ওড়াতে।