মার্চ মাস। হঠাৎ করে আমাদের স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। স্কুল বন্ধ হলো কেন? আমাদের শহরে ঢুকেছে এক ভয়াবহ দৈত্য। খালি চোখে দেখা যায় না এই দৈত্যকে। চিকিৎসকেরা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখে বলেছেন, এটার লাল শরীর কাঁটা দিয়ে ভরা। ভীষণ পাজি দৈত্যটা। হাজার হাজার মানুষকে মেরে ফেলছে ও।
আমার ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। স্কুল বন্ধ হলে কার না মন খারাপ হয়! বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয় না। শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা হয় না। খেলতে পারি না। দৌড়াতে পারি না। এই পচা পাজি দৈত্যটার জন্য আমরা ঘর থেকেও বের হতে পারি না। সারা দিন বাসায় বসে বসে আমার শুধু মন খারাপ হতে থাকে। আমার সব গল্পের বই শেষ হয়ে যায়। বাবা নতুন গল্পের বই কিনতে বাইরেও যেতে পারেন না। বাবার অফিসটাও বন্ধ হয়ে গেল।
এভাবে অনেক দিন চলে গেল। আমরা ঘরে বন্দী। একদিন আমার শিক্ষকেরা জানালেন, আমাদের ক্লাস হবে অনলাইনে। বাবার ল্যাপটপে একদিন সত্যি সত্যি সব বন্ধুকে দেখতে পেলাম। সঙ্গে আমার স্কুলের শিক্ষকদেরও।
কী যে মজা! কী যে আনন্দ হলো সেদিন! শ্রেণিশিক্ষক আমাদের বললেন, ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। কেউ জরুরি কাজে বাইরে গেলে মুখে মাস্ক পরতে হবে।
একদিন অনলাইন ক্লাসে শ্রেণিশিক্ষক আমাদের ক্লাসওয়ার্ক করতে দিলেন। আমরা সবাই ক্লাসওয়ার্ক শেষ করে বন্ধুদের নিয়ে একটা বুদ্ধি করলাম। এই লাল দৈত্যকে কীভাবে তাড়ানো যায় আমাদের শহর থেকে। শ্রেয়সী, সামিয়া, সিলমি, চিত্রাও আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। টিচার বলেছিলেন, এই লাল দৈত্য একটা ভাইরাস। কিন্তু তার অনেক শক্তি। সচেতন হয়ে নিয়ম মানলে এই ভাইরাস দূর হবে।
এই দৈত্যই আমাদের ঘরবন্দী করে রেখেছে। আমরা আবার স্কুলে যেতে চাই। আমরা আবার খেলতে চাই।
আমরা আবার বাইরে যেতে চাই। এই দৈত্যকে হার মানাতে হবেই হবে। আমরা ঠিক সবাই মিলে এই খবর সবাইকে জানালাম।
শ্রেয়সী জানাল তার বন্ধুদের, বন্ধুরা জানাল তাদের বন্ধুদের। সামিয়া জানাল তার বন্ধুদের, বন্ধুরা জানাল তাদের বন্ধুদের।
সিলমি জানাল তার বন্ধুদের, বন্ধুরা জানাল তাদের বন্ধুদের।
চিত্রা জানাল তার বন্ধুদের, বন্ধুরা জানাল তাদের বন্ধুদের।
একদিন হলো কী কাণ্ড! আমাদের কথা পুরো শহরের মানুষের কাছে ছড়িয়ে পড়ল। ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে হবে। কেউ জরুরি কাজে বাইরে গেলে মুখে মাস্ক পরতে হবে।
আমাদের শহরে লকডাউন শুরু হলো। কেউ ঘর থেকে বের হলো না। সবাই সাবান দিয়ে ঘন ঘন হাত ধুতে লাগল। সবাই মাস্ক পরতে লাগল। যাদের অসুখ হলো, তারা নিয়ম মেনে ওষুধ খেতে লাগল।
শেষমেশ লাল দৈত্য ভাইরাস আর সুবিধা করতে পারল না। দৈত্যটা দেখল, রাস্তাঘাটে লোক নেই। অফিসে মানুষ নেই। স্কুলে শিশুরা নেই। সবাই হাত ধুচ্ছে, সবাই মাস্ক পরছে। তাই সে কাউকে আর আক্রমণ করে মারতে পারছে না। তার খিদে বেড়ে গেল।
একদিন লাল দৈত্য ভাইরাসরা সবাই মিলে সভা করল, ‘নাহ্, এত খিদে নিয়ে আর এই শহরে থাকা যাবে না। চলো, অন্য গ্রহে চলে যাই।’
একদিন সত্যি সত্যি লাল দৈত্য ভাইরাস আমাদের শহর ছেড়ে পালাল। তারপর আমাদের স্কুল খুলে গেল। আমরা অনেক দিন পর বাইরে এলাম। অনেক দিন পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলো।
আমাদের আজ আনন্দের দিন।