গ্যালারি কায়া: ১৬ বছরের নস্টালজিয়া
আজ থেকে ১৬ বছর আগে প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় আমার একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। শুক্রবার, ২৮ মে, ২০০৪। শিরোনাম ছিল, গ্যালারি কায়ার ‘উদ্বোধন’ আজ। ১৬ বছর আগে আমার চুলগুলো কি কালো ছিল? ১৬ বছর আগে আমাদের ছেলেমেয়েগুলো গ্যালারি কায়ার প্রাঙ্গণে শিউলিতলায় ছোটাছুটি করে লুকোচুরি খেলত! উদ্বোধনী প্রদর্শনীটা ছিল ৫২ জন শিল্পীর ৫২টা শিল্পকর্ম নিয়ে। শিল্পীতালিকায় ছিলেন শফিউদ্দিন আহমেদ, মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী আর গ্যালারি কায়ার উদ্যোক্তা গৌতম চক্রবর্তীর বাবা দেবদাস চক্রবর্তী।
আজ, ১৬ বছর পরে, পৃথিবী যখন প্যানডেমিকে এলোমেলো, তখন বর্ষপূর্তি প্রদর্শনী চলেছে কায়ায়, ৪২ জন শিল্পগুরু এবং সমকালীন শিল্পীর। যে মাস্টারদের নাম বললাম একটু আগে, তাঁরা আর কেউ বেঁচে নেই। তাঁদের অনেকের ছবি থাকছে চলতি প্রদর্শনীতেও। যেমন থাকছে মুর্তাজা বশীর, রফিকুন নবী, শাহাবুদ্দীন আহমদ, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, চন্দ্রশেখরসহ অগ্রগণ্য শিল্পীদের কাজ। প্রদর্শনী চলবে ২২ আগস্ট ২০২০ পর্যন্ত।
গ্যালারি কায়া যখন শুরু করেন গৌতম চক্রবর্তী, তখন সবাই তাঁকে উৎসাহিত করেছিলেন, বলেছিলেন, উত্তরায় এমন একটা গ্যালারি খুব দরকার, তা হবে মরূদ্যানের মতো। শুধু গ্যালারি তো নয়, শিল্প-সংস্কৃতির মানুষদের একত্র হওয়ার একটা কেন্দ্রও তো চাই উত্তরায়। কিন্তু প্রায় সবারই মনে শঙ্কা ছিল, ওই গ্যালারি চালানো যাবে তো! পৃথিবীর কত সৎ উদ্যোগ, সুন্দর ভাবনা শুরু হয়, এরপর মুকুলেই ঝরে যায়।
গ্যালারি কায়া ১৬ বছর পূর্ণ করে ফেলল। করোনার নিদানকালেও চলছে তার বড় প্রদর্শনী। শুরুতে গৌতম চক্রবর্তী বলেছিলেন, তিনি নতুন শিল্পীদেরও পাদপ্রদীপে আনবেন। কথা তিনি রেখেছেন। অনেক নবীন শিল্পীকে তুলে ধরেছে কায়া। তাঁদের অনেকেই আজ প্রতিষ্ঠিতও। দেশে-বিদেশে শিল্পের শিবির করেছে, প্রিন্টের কর্মশালা করেছে, ছবির বাইরে ছবি-সংক্রান্ত নানা সৃজনশীল আয়োজন করেছে কায়া।
কায়া তার শিল্পের শিখাটা জ্বালিয়ে রেখেছে, বাতাস আসে, কোনো বাতাস এক ফুৎকারে শিখাটিকে নিভিয়ে দিতে চায়, কোনো বাতাস তাকে উসকে দিতে চায়। গ্যালারি কায়া আছে। এখন অনলাইনে, টেলিফোনে, ঘরে বসে ছবি কেনার ব্যবস্থাও রাখা আছে। কোয়ারেন্টিনের কালে ফোন করতে পারেন ০১৭৫২৬৮৪৯০০ কিংবা ঘুরে আসা যেতে পারে গ্যালারি কায়ার ফেসবুক পেজে। অনলাইন প্রদর্শনী দেখতে http://artitude.com.bd/
গ্যালারি কায়ার ৩২ বছর বয়স হবে যখন, আমার তখন হবে ৭১। বেঁচে থাকব কি? কিন্তু থেকে যাবে শিল্প, থেকে যাবে শিল্পের জন্য মানুষের ভালোবাসা!