মানুষ ও প্রযুক্তি

‘করাপ্টেড কালারস: পোর্ট্রেইট থ্রু গ্লিচ আর্ট’, শিল্পী: রীই

কলাকেন্দ্র আয়োজিত দলগত প্রদর্শনী ‘ডিসকোয়েটাস’ বিশেষ; কারণ, এটি জেন্ডার, প্রযুক্তি, নারীবাদ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে এই বিষয়গুলোর মধ্যেকার সম্পর্ক ও প্রভাব নিয়ে এক বছরের অনুসন্ধানের ফলাফল। 

ব্যক্তি ও সমষ্টি হিসেবে মানুষ ও প্রযুক্তিগত সব মাধ্যমের যে মিথস্ক্রিয়া, তার ফলে সৃষ্ট যে টানাপোড়েন এবং নিত্যনতুন ব্যঞ্জনা, তা প্রকাশের জন্যই এ প্রদর্শনী। কিউরেশন করেছেন পারসা সানজানা সাজিদ ও ইফাত রেজোয়ানা রিয়া৷ 

এখানে শিল্পীরা লিঙ্গপরিচয় আর প্রযুক্তিকে বিচ্ছিন্ন দুটি বিষয় হিসেবে দেখেনি, বরং দুইয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক ও যান্ত্রিকতার বাইরে গিয়েও মানু্ষের অতি ব্যক্তিগত যাপনে প্রযুক্তির প্রবেশ ও প্রভাবের সুরতহাল করতে চেয়েছেন। 

প্রদর্শনীতে আছে তানভীরের স্থাপনাশিল্প ও জাইন-বই, যেখানে আছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের গভীরতার চর্চার একটি নিদর্শন। রয়েছে নূপুর পোদ্দারের তৈরি মুখোশ। মানুষের নিজস্ব সত্তা ও পরিচয়বিষয়ক দর্শনের শিল্প বলা যায় একে। আছে সুমনা আক্তারের শিল্প, যেখানে তিনি বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তুলে আনতে চেয়েছেন নারীত্বের প্রতি পুরুষতান্তিক সমাজের অবদমনের আখ্যান। রয়েছে রীইয়ের তোলা স্থিরচিত্র। তাতে তিনি করেছেন ফোটো ম্যানুপুলেশন। ছবিকে বদলেছেন, দুর্বোধ্যতা এনেছেন, জটিল করেছেন। ঠিক যেভাবে মানুষ তাঁর সৌন্দর্যবোধ, সমাজের সঙ্গে সম্পর্কের সংঘাত প্রভৃতির জালে জড়িয়ে পড়ে। ডিস্ক জকি দূর্দানা ফরিদ তাঁর দর্শকদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন একটি গানের ঝুলি বা প্লে লিস্ট। এখানে তিনি রেখেছেন বাদামি আর কালো চামড়ার মানুষদের দ্বারা তৈরি ইডিএম বা যান্ত্রিক সংগীত। যে মানুষদের সংগীত বহু ক্ষেত্রেই পুঁজিবাদ ও শেতাঙ্গদের হাত ঘুরে বাজারে প্রসিধ্য, অথচ অবহেলিত সেই মূল শিল্পীরাই। আবার রুক্সমিনির তৈরি করা ইন্টারঅ্যাকটিভ আর্টবুকে দেখা যায় জীবনবোধের একটি দিক—মানুষ ও নারী হিসেবে বেঁচে থাকার মধ্যে প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকা সংঘাত ও সহিংসতা শিল্পীকে কীভাবে আন্দোলিত করে, এটি তাঁর নথি। আরও ভাবনার প্রকাশ তিনি করেছেন আরেকটি ভিডিও আর্টের মাধ্যমে।

এই প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলোয় নানান নিরীক্ষাসমেত দর্শকের ভাবনা উসকে দিতে চেয়েছেন শিল্পীরা। পাশাপাশি লিঙ্গপরিচয়, আত্মপরিচয় ও প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেদের ভাবনা ও ধারণাকে পুনর্গঠিত করার যে প্রয়াস তাঁরা নিয়েছেন, তা প্রশংসাযোগ্য। তবে তাঁদের সেই ভাবনার দিন শেষে কতটা সফল শিল্প হয়েছে, তা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েই যায়। 

ঢাকার লালমাটিয়ায় ২২ নভেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলেছে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

অনিন্দ্য নাহার হাবীব