ব্যক্তিমালিকানার বাইরে
রাজধানীর গুলশানে গ্যালারি ১০১–এ চলছে ‘দ্য কমন্স’ শিরোনামের প্রদর্শনী। গ্যেটে ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সহযোগিতায় এ প্রদর্শনীর আয়োজক ইংরেজি ভাষার শিল্প সাময়িকী লিটেরা ম্যাগাজিন।
প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু সর্বজনীন সম্পত্তি, আইনি ভাষায় যাকে বলা চলে ‘কমন প্রপার্টি’। সর্বসাধারণের অধিকার রয়েছে এমন স্থান, যা রাষ্ট্র কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধীন নয়, তা-ই কমন্সের অন্তর্গত।
প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে কালক্রমে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত জায়গাগুলো একে একে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। ইজারা প্রথা ও রাজনৈতিক শক্তির ভোগদখলের কারণে নদী, খাল, পুকুর ও হাওর-বাঁওড় সাধারণ মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত নেই। খেলার মাঠ বা উন্মুক্ত জায়গাগুলো স্থানীয় অধিবাসীদের খেলাধুলা বা সামাজিক কার্যক্রমে ব্যবহার করতে হলেও অনেক পক্ষকে সন্তুষ্ট করতে হয়।
‘সর্বজনীন সম্পত্তি’র ধারণা এতই ব্যাপক যে ক্ষুদ্র পরিসরে সেটাকে তুলে ধরা সম্ভব নয় বলে মনে করেন প্রদর্শনীর কিউরেটর অনিন্দ্য রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা যে অভিজাত এলাকায় এই আয়োজন করেছি, সেটা এককালে গ্রাম ছিল বলা বাহুল্য। আজকের গুলশান একদা ভোলা ও সামাইর গ্রাম ছিল। সেসব গ্রামবাসীই এখানকার নগরবাসীতে উত্তীর্ণ হয়েছে, এমনটা বলা যাচ্ছে না। গ্রাম সম্পর্কে আমাদের যে রোমান্টিক কল্পনাবিলাস রয়েছে, সেটা যদি স্থগিত রাখা যায়, তাহলে দেখা যাবে, নগরায়ণ প্রধানত প্রাণ ও প্রকৃতি উচ্ছেদের রক্তাক্ত ইতিহাস।’
প্রদর্শনীটির সহকিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন জান্নাতুন নাইম ঐশী। গুলশান এলাকার প্রাচীন মানচিত্রভিত্তিক উপস্থাপনা করেছেন উম্মে আবিহা সায়মা।
কেবল মানুষ নয়, পশুপাখির বিচরণের জায়গাও নানাভাবে হারিয়েছে। প্রদর্শনীতে বিশেষভাবে চোখে পড়বে মাটির তৈরি একটি প্রমাণ আকারের হাড়গিলা পাখি। পাখিটি পরিবেশে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করলেও বনাঞ্চল ধ্বংস করা, জলাভূমি শুকিয়ে যাওয়া ও খাদ্যের অভাবে এটি আজ বিপন্ন। মৃৎশিল্পী প্রদীপ পাল স্মৃতি হাতড়ে বলেন, তিনি তাঁর শৈশবে রায়েরবাজারে এই পাখি দেখেছেন। রায়েরবাজারের মৃৎশিল্পী ও ব্যবসায়ী জনগোষ্ঠীর ওপর কামরুল হাসান মিথুনের আলোকচিত্র ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে।
পশ্চিমা বিজ্ঞান এবং ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি কীভাবে হাত–ধরাধরি করে এগিয়েছে, তার কিছু খণ্ডচিত্র পাওয়া যাবে শিল্পী প্রকৃতি শ্যামলিমার স্থাপনাশিল্পে। লাবিব ইমাম চৌধুরীর লেন্সে ধরা পড়েছে ঢাকার চারপাশের বর্ণিল পাখির জগৎ। নাফিস সবুরের কড়চায় পাওয়া যাবে গ্রামীণ জনপদের খেলাধুলা নিয়ে নাগরিক আদিখ্যেতার সমালোচনা।
প্রদর্শনী মিলনায়তনে প্রবেশমাত্রই পাওয়া যাবে বিশেষ ধরনের সুবাস। নাজিয়া আফরিন ও রাইয়ান সোবহান তালহা সংগ্রহ করে এনেছেন সিনেমা হলে ব্যবহৃত সুগন্ধি। ভাস্কর বুশরা ইসলাম লাবণ্য তৈরি করেছেন বিশ্বজুড়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরে সাধারণের বাঁচার লড়াইয়ের চিত্র। নাট্যগবেষক কামালউদ্দিন কবীরের ফটোস্টাডিতে উঠে এসেছে বাংলাদেশের গীতরঙ্গের কিছু খণ্ডচিত্র, যার পরিসর ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে দলগত কর্মযজ্ঞের পরম্পরায় মূর্ত হয়ে উঠেছে প্রদর্শনীটি।
গুলশানের ১০১ নম্বর রোডে প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। পাশাপাশি সংগ্রহ করা যাবে লিটেরা ম্যাগাজিন-এর প্রথম ছাপা সংস্করণ।
এস মাহাবুব মিথুন