ঢাকার বারিধারায় প্ল্যাটফর্মস গ্যালারিতে চলছে অন্তরা মেহরুখ আজাদের প্রদর্শনী ‘সোলাস্ট্যালজিয়া: বিবর্ণ দিগন্তের টুকরোগুলি’। তরুণ এই শিল্পীর ছবিগুলোর মধ্যে একধরনের বৈপরীত্য বিদ্যমান। তাঁর কাজে নিয়ন পিংক রঙের ব্যবহার সর্বত্র। দূর থেকে দেখলে একটা সুখানুভূতি হয় বটে, তবে কাছে গেলে বোঝা যায়, মানুষের জীবন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘটতে থাকা চূড়ান্ত দুর্দশা–দুর্ভোগের ছাপমাখা ছবি এসব। এ কারণেই ক্যাভাসে শিল্পী ব্যবহার করেছেন কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা রং। জলবায়ু পরিবর্তনের মতোই এই রংও মানুষেরই তৈরি। বোঝা যায়, কৃত্রিম ও অতিরঞ্জিত রং তিনি ব্যবহার করেছেন সুনির্দিষ্ট একটি ভাবনা থেকে। বিষয়বস্তুর সঙ্গে রঙের এই মেলবন্ধন বেশ উপভোগ্যও বটে।
ক্রমাগত গাছ কেটে ফেলা, কার্বন ডাই–অক্সাইডের আধিক্য ইত্যাদি অন্তরাকে ভাবায়। নিজের শৈশবস্মৃতির সঙ্গে নিজস্ব শিল্পধারা মিলিয়ে ছবি এঁকেছেন তিনি। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায় ‘এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম’, ‘দ্য নিউ নরমাল’ ও ‘আ ভিউ ফ্রম মাই উইন্ডো’র কথা। শিল্পী এখানে তাঁর শৈশবস্মৃতিকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
নিজস্ব শিল্পশৈলী দিয়ে সাধারণ ল্যান্ডস্কেপ এঁকেছেন শিল্পী। ফলে সেগুলো আর নিছক ল্যান্ডস্কেপ থাকেনি, হয়ে উঠেছে বিশেষ। আবার নিসর্গচিত্র আঁকার ক্ষেত্রে অন্তরার মধ্যে আছে জাদুবাস্তবতার প্রভাব, যা প্রকাশ পেয়েছে তাঁর কিছু কম্পোজিশনে।
সাত মহাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে সাতটি ছোট ছোট ছবি এঁকেছেন অন্তরা। দীর্ঘ নিয়ন পিংক রঙে এঁকেছেন পানিতে বন্যায় ডুবে থাকা গ্রাম, সবুজ মেঘ আর আকাশ। দীর্ঘ জলাবদ্ধতার কারণে পানিতে যে তীব্র সবুজাভ রং তৈরি হয়, তা–ও তিনি তুলে এনেছেন একটি পরাবাস্তব কম্পোজিশনে। শেষে বলতে চাই, ছবিগুলো আঁকতে অন্তরা বেছে নিয়েছেন উত্তরাধুনিক এক শিল্পশৈলী, যা অন্যদের চেয়ে তাঁকে আলাদা করে তুলেছে।
১৯ অক্টোবর শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত।
অনিন্দ্য নাহার হাবীব