অতীতের ছায়ায়

হার্মাসিস ক্লিওপেট্রা নাটকের দৃশ্য

নাট্যাঙ্গন ক্রমেই সরব হয়ে উঠছে, মঞ্চে ফিরছে নন্দিত প্রযোজনাগুলো। গত ২৫ ও ২৬ অক্টোবর মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে দুই দিনে চারটি মঞ্চায়ন হলো নাট্যদল অনুস্বরে হার্মাসিস ক্লিওপেট্রা নাটকের। রাহমান চৌধুরীর রচনা ও মোহাম্মদ বারীর নির্দেশনায় প্রযোজনাটি ইতিমধ্যেই অভিনয়শৈলী ও উপস্থাপনার সৌন্দর্যে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে।

নাটকের গল্পে দেখা যায়, বিদেশি শক্তির হাত থেকে মিসরকে রক্ষার জন্য দেবতাদের আদেশপ্রাপ্ত হন হার্মাসিস। এই দায়িত্ব নিয়ে কৌশলে ক্লিওপেট্রার প্রাসাদে ঢুকে রাজজ্যোতিষীর কাজ নেন তিনি। ক্লিওপেট্রাকে হত্যার পরিকল্পনা করে ব্যর্থ হন। তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় প্রেম, ছলনা ও বিশ্বাসঘাতকতা।

প্রাচীন মিসরের ঐতিহাসিক চরিত্র ক্লিওপেট্রার নাম বললেই প্রাসঙ্গিকভাবে উঠে আসে জুলিয়াস সিজার আর মার্ক অ্যান্টোনিওর নাম। হার্মাসিস ঐতিহাসিক চরিত্র নন, তবে এ নাটকে হার্মাসিস মুখ্য চরিত্র হয়ে ওঠেন নতুন বয়ানের প্রয়োজনেই। নাটকে ব্যক্তি ক্লিওপেট্রার মনোজগতের নিবিড় চিত্রণ তাঁকে ঘিরে চর্চিত অতিপরিচিত মিথকে নতুন ভাষ্য দেয়। অনুঘটক হিসেবে সেখানে হাজির ক্লিওপেট্রার প্রেমিক হার্মাসিস। অন্যদিকে মুক্তির আশায় হার্মাসিসকে সঙ্গে নিয়ে ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর ছক সাজাচ্ছে চারমিয়ন। মিসরের মুক্তি আর ব্যক্তিগত লোভ-লালসা মিলেছে একই সমীকরণে! হার্মাসিসের দ্বিধা ছুঁয়ে দর্শক দূর অতীতের কাহিনির সঙ্গে চাইলে সমকালের রাজনৈতিক অবস্থাকে পাঠ করতে পারবেন।

সাকিল সিদ্ধার্থের পরিকল্পনায় মঞ্চসজ্জা প্রতীকী ও বাস্তবানুগ। ইউসুফ হাসানের সংগীতায়োজনে নির্মিত দৃশ্যপটে মোহাম্মদ বারী, প্রশান্ত হালদার, পিয়ার মোহাম্মদ, সাইফ সুমনসহ প্রায় সবাই-ই চরিত্রাভিনয়ে অভিজ্ঞতার স্বাক্ষর রেখেছেন। ক্লিওপেট্রা চরিত্রে ফৌজিয়া করিম, চারমিয়ন চরিত্রে মেরিনা মিতু আর হার্মাসিস চরিত্রে এস আর সম্পদ নিজেদের পরিচয়কে স্বকীয় করে তুলেছেন। সাবলীল ও প্রাণবন্ত বাচিক উপস্থাপনার এমন উদাহরণ সাম্প্রতিক ঢাকার মঞ্চের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ প্রাপ্তি বলা চলে।

প্রযোজনার খামতিটুকু বুঝি সমাপ্তি পর্বে বিধৃত। ক্লিওপেট্রার জবানিতে শাসকের যে জবানি, তার বিপরীতে শাসিতের জবানিও শাসকশ্রেণির বয়ানে উপস্থাপিত। হার্মাসিস আর চারমিয়ন প্রান্তজনের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা জাগিয়েও তাই শেষ ভাগে এসে অনেকটাই বেপথু, আত্মসমর্পণ যেখানে অনিবার্য। এ কারণে হার্মাসিস ক্লিওপেট্রা প্রযোজনাটি যেনবা ক্লিওপেট্রাই হয়েই রয়ে গেল।