গ্রাম ও শহরের দ্বৈরথ

নীল আকাশের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ঘন সবুজ গাছগুলোও দিনের আলো–আঁধারে বিমূর্ত বনের রূপ নেয়। অমিতাভ সরকার চিরপরিচিত সেই বনের উপলব্ধি প্রকাশ করেছেন ক্যানভাসে।

সুন্দরবনের ছায়ায় বেড়ে ওঠা অমিতাভ যাত্রা করেছেন নদীমাতৃক কাদামাটির বদ্বীপ থেকে লাদাখের শুষ্ক পাহাড় পর্যন্ত। নানা ভূগোলে পরিবর্তিত প্রকৃতির রূপসুষমা ফুটে উঠেছে তরুণ এ শিল্পীর কাজে।

‘অ/প্রাসঙ্গিক’ শিরোনামে তাঁর চিত্রপ্রদর্শনীতে বিকেলের হলুদ আলো আর বনের অন্ধকারময় কালোরই প্রাধান্য। এ যেন প্রকৃতির নানান সময়ের নানান রঙের মধ্য দিয়ে একান্ত নিজের সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা। কাদা, মাটি, সবুজ, নীল, পানির গতি, মাটির ফাটল, মাটিলেপা ঘরে গৃহিণীর হাতের স্পর্শ, শহরের জমকালো বাস্তবতা আর বনের অন্ধকার—এসব প্রতীক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে শিল্পী দর্শকের উপস্থিত–অনুপস্থিত অনুভূতি ও স্মৃতিগুলো জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। প্রদর্শিত প্রতিটি ছবিই শিরোনামহীন। ছবিগুলোর সঙ্গে দর্শক নিজের মতো করেই যোগাযোগ ঘটাবেন। তাই আলাদাভাবে ছবির কোনো নাম দেননি শিল্পী।

প্রদর্শনীটি উত্তেজনাপূর্ণ জীবনের গতিকে প্রশ্ন করে। বরিশালের হলদে রঙের এঁটেল মাটির ব্যবহার আর নদীর গতির মতো গড়িয়ে পড়া রং শিল্পী হিসেবে অমিতাভকে যেমন আলাদা করে তোলে, তেমনি দর্শকের চোখেও জাগায় প্রশান্তির ছোঁয়া।

মাটির ব্যবহারে প্রকাশ পেয়েছে অমিতাভের সারল্য ও আত্মবিশ্বাস। আবার শহুরে জীবনের প্রতিযোগিতা, দক্ষতা, টিকে থাকার বাস্তবতা—এসব দেখা যায় তাঁর অ্যাক্রিলিকের কাজগুলোয়। সব মিলিয়ে গ্রাম ও শহরের দ্বৈরথ আছে এখানে।

অ্যাক্রিলিকে করা কাজগুলোয় প্রথাগত শিক্ষার প্রভাব মিললেও মাটি দিয়ে করা কাজগুলোয় শিল্পীর নিজস্ব উদ্ভাবনা লক্ষণীয়। এসব তাঁর অঞ্চলের গল্পকে ধারণও করে।

কলাকেন্দ্রে চলমান প্রদর্শনীটি কিউরেট করেছেন শার্মিলি রহমান। চলবে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।