অন্তর্মুখী ও বহির্মুখী

শিল্পী: জাফরিন গুলশান

লালমাটিয়ার কলাকেন্দ্রে ‘আলিঙ্গনে মিলছুট’ নামে যে প্রদর্শনী চলছে, তা বেশ কিছু কারণে কৌতূহলোদ্দীপক। মাসুদা খাতুন জুঁই ও জাফরিন গুলশানের দ্বৈত এই প্রদর্শনীতে দেখতে পাই দুই শিল্পীর জীবনবোধের ভিন্ন দুই ভাবনার প্রকাশ।   

জাফরিন গুলশান এঁকেছেন নিজের যাপন ও ভাবনার নানা দিক। তিনি অ্যাক্রিলিক, জলরং ও স্থাপনাশিল্প—তিন মাধ্যম তিনি ব্যবহার করেছেন কাজে। তাঁর ছবিতে নারীত্ব ও মাতৃত্বের প্রকাশ যেমন প্রবল, একই সঙ্গে একান্ত ব্যক্তিগত ভাবনার ছোঁয়াও স্পষ্ট। তিনি জাদুবাস্তবতাবাদ পছন্দ করেন। তাই নিজের জীবনের প্রাত্যহিক ঘটনাবলি এঁকেছেন নিজস্ব রং ও ঢঙে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর কাজ ‘নাইভ আর্ট’ থেকেই উৎসারিত। জাফরিনের রেখাচিত্রে শিল্পীর স্বতঃস্ফূর্ত ছটফটে স্বভাব স্পষ্ট। নিজের জীবন, ঘটে যাওয়া ঘটনা, এসে যাওয়া ভাবনা, অস্বস্তি, ভালো লাগা ইত্যাদি বিষয় তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে শিল্প তৈরিতে। অন্তর্মুখিতার পুষ্পকরথে চড়ে যেন তিনি গড়ে তোলেন নিজের শিল্পকে। প্রদর্শনীতে আছে জাফরিনের কিছু অলংকরণধর্মী চিত্রকর্ম, যা তাঁর নারীত্ব ও ব্যক্তিগত জীবনভাবনাকে ঘিরেই আঁকা। তাঁর এই শিল্পবোধ অবধারিতভাবেই রাজনৈতিক তথা সামষ্টিক। 

শিল্পী: মাসুদা খাতুন জুঁইয়ের স্থাপনাশিল্প

মাসুদা খাতুন জুঁই শিল্প তৈরি করেছেন বহির্মুখী ভাবনা থেকে। তিনি খুঁটিয়ে দেখেন আশপাশের মানুষের হেঁটে যাওয়া, খেটে খাওয়া জনতার সংগ্রাম ও জীবনধারণের ভঙ্গি। নারী–পুরুষ সম্পর্কের বোঝাপড়া, পুরুষতন্ত্রের প্রস্তাবনা ও নারীশক্তির বিকাশ এবং সমাজে এর প্রভাব—এসব নিয়েই তিনি গড়েছেন নিজস্ব শিল্পভাবনা; প্রস্তুত করেছেন স্থাপনাশিল্প। শ্রমজীবী মানুষের পরিধেয় কাপড় ও যাপনের মিলমিশে তৈরি তাঁর স্থাপনাশিল্পটি নজর কাড়ে। রেডিমেড আর্টের দর্শনকে ব্যবহার করে তিনি তুলে এনেছেন শ্রমজীবী মানুষের ব্যবহার্য আসবাব—টেবিল, চেয়ার, মশারি, আলনা, কাপড়ের থলে ইত্যাদি। জুঁইয়ের দেখার ভঙ্গিতে মনোযোগ এবং একটা নৃতাত্ত্বিক বোঝাপড়ার আভাস স্পষ্ট। প্রদর্শনীতে আছে তাঁর আঁকা কিছু জলরং—এঁকেছেন মানুষের মুখ, নারীত্ব। এই শিল্পীর স্থাপনাশিল্প ও জলরং—দুই জায়গাতেই বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে জীবনের বৈচিত্র্যময়তা এবং সেগুলোর সঙ্গে শিল্পী হিসেবে তাঁর বোঝাপড়া। 

লালা রুখ সেলিমের কিউরেশনে ২৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত। 

অনিন্দ্য নাহার হাবীব