[ইউভাল নোয়া হারারি হচ্ছেন 'স্যাপিয়েন্স: আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব হিউম্যানকাইন্ড, হোমো দিউস' এবং 'টোয়েন্টি ওয়ান লেসনস ফর দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি' বইয়ের লেখক।]
একটি সংকট একটি সমাজের জন্য ক্রান্তিকাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। কোন পথে যাব এবার আমরা? অধ্যাপক ইউভাল নোয়া হারারি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ব্যাখা করেছেন কীভাবে কোভিড-১৯ নিয়ে আমাদের আজকের সিদ্ধান্তগুলো ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করবে।
প্রফেসর হারারি, আমরা একটি বিশ্বব্যাপী সংকটের মাঝে রয়েছি। আপনার দৃষ্টিতে এই বৈশ্বিক পরিবর্তনের কোন অংশটি সবচেয়ে বেশি চিন্তা উদ্রেককারী?
ইউভাল নোয়া হারারি: আমার ধারণা, সবচেয়ে বড় বিপদটি ভাইরাস নিজে নয়। মানবজাতির কাছে এই ভাইরাসকে পরাস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় সব বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো হচ্ছে আমাদের নিজেদের ভেতরের অন্তর্দ্বন্দ্ব, নিজেদের মাঝে লালিত ঘৃণা, লোভ ও অজ্ঞানতা। পরিতাপের সঙ্গে বলছি যে মানুষ এই সংকটে বৈশ্বিক একাত্মতা প্রকাশ না করে বরং ঘৃণা প্রকাশ করছে, এবং অন্যান্য দেশ ও ধর্ম-আচারভিত্তিক সংখ্যালঘুদের দোষারোপ করছে।
কিন্তু আমি আশাবাদী যে আমরা ঘৃণার পরিবর্তে পারস্পরিক সহানুভূতি গড়ে তুলতে পারব, যার মাধ্যমে আমরা বৈশ্বিক সংহতি তৈরি করে ঔদার্যের সঙ্গে বিপদগ্রস্থ মানুষকে সাহায্য করার সক্ষমতা অর্জন করব। এ ছাড়া এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে আমরা যেন সত্যকে মিথ্যা থেকে আলাদা করা, এবং সব ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বিশ্বাস না করার ক্ষমতাও অর্জন করতে পারি। আমরা এই কাজগুলো করতে পারলে আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা খুবই সহজ হবে।
আপনার ভাষ্যমতে, আমরা সর্বগ্রাসী নজরদারি এবং নাগরিক ক্ষমতায়নের মাঝে একটিকে বেছে নেওয়ার দ্বিধায় ভুগি। আমরা যদি সতর্ক না হই, তাহলে এই মহামারি পরিস্থিতিটি হয়ে উঠতে পারে সরকারি নজরদারির ইতিহাসে একটি সন্ধিক্ষণ। কিন্তু কীভাবে আমি এমন কিছু নিয়ে সাবধান হব, যা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে?
এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়, অন্তত গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে। আপনি সুনির্দিষ্ট কিছু রাজনীতিবিদ এবং দলকে ভোট দিয়ে থাকেন, যারা এই নীতিমালাগুলো প্রণয়ন করে থাকে। সুতরাং রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আপনার কিছু পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এই মুহূর্তে কোনো নির্বাচন আসন্ন না হলেও রাজনীতিবিদগণ জনগণের চাহিদাগুলোকে আমলে নিতে বাধ্য।
যদি সাধারণ জনগণ এই মহামারির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে প্রত্যাশা করে যে একজন শক্তিশালী নেতা দায়িত্ব বুঝে নেবেন, তাহলে একনায়কদের জন্য সহসা ক্ষমতা দখলের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যায়। অন্যদিকে যদি একজন রাজনীতিবিদ সীমা ছাড়িয়ে যান, তাহলে জনগণ বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের মাধ্যমে এ ধরনের অঘটনকে প্রতিহত করতে পারে।
তাহলে আমি কীভাবে জানব, কাকে অথবা কোন তথ্যগুলোর ওপর ভরসা রাখা যাবে?
প্রথমত, আপনার রয়েছে পূর্ব অভিজ্ঞতা। রাজনীতিবিদেরা যদি এ রকম হয় যে তারা বছরের পর বছর আপনাদের সঙ্গে মিথ্যাচার করে আসছে, তাহলে এই সংকটের মুহূর্তে তাদের ওপর ভরসা রাখার তেমন কোনো কারণ নেই। দ্বিতীয়ত, আপনাকে মানুষ যেসব তত্ত্বের কথা বলছে, সেগুলোর ব্যাপারে আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন। যদি আপনাকে কেউ করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল এবং বিস্তার নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব শোনাতে আসে, তাহলে তাকে ভাইরাস কী এবং তা কীভাবে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়, সেটা জিজ্ঞাসা করবেন? যদি সে কিছুই বলতে না পারে, তাহলে বুঝতে পারবেন যে তার প্রাথমিক বৈজ্ঞানিক জ্ঞানটিও নেই, এবং সে ক্ষেত্রে এই ব্যক্তি করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে আপনাকে যা-ই বলুক না কেন, তা বিশ্বাস করবেন না। এসব বোঝার জন্য আপনার জীববিজ্ঞানে পিএইচডির দরকার নেই, শুধু কিছু প্রাথমিক পর্যায়ের বৈজ্ঞানিক বোধশক্তি থাকলেই চলবে।
সাম্প্রতিক কালে আমরা কিছু মানবতাবাদী রাজনীতিবিদদের দেখছি বিজ্ঞানের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে; তাঁরা বলছেন যে বিজ্ঞানীরা নিভৃতচারী, অভিজাত এবং বিচ্ছিন্ন একটি জনগোষ্ঠী, তাঁরা সাধারণ মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলেন। এই রাজনীতিবিদেরা সঙ্গে এটাও বলছেন যে জলবায়ু পরিবর্তন একটি ভাঁওতা, এবং আপনাদের উচিত হবে না বিজ্ঞানীদের কথাকে বিশ্বাস করা। কিন্তু এই সংকটের মুহূর্তে আমরা দেখছি, বিশ্বজুড়ে মানুষ অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে বিজ্ঞানের ওপরই বেশি ভরসা রাখছে।
আমি আশা করব যে এই ব্যাপারগুলো আমরা সর্বদাই মনে রাখব, এমনকি এই সংকট থেকে উত্তরণের পরও। আমাদের উচিত হবে স্কুলের ছাত্রদের ভাইরাস ও তাদের বিবর্তনের তত্ত্বগুলো যত্ন সহকারে ও বিশদভাবে শিখিয়ে দেওয়া। এ ছাড়া যখন বিজ্ঞানীরা আমাদের মহামারি ছাড়াও অন্যান্য বিষয়, যেমন জলবায়ু পরিবর্তন কিংবা বিবিধ পরিবেশগত বিপর্যয়ের ব্যাপারে সতর্ক করবেন, সেই সতর্কবাণীকেও যেন আমরা করোনাভাইরাস মহামারির মতোই গুরুত্ব সহকারে আমলে নেই।
বিভিন্ন দেশে ডিজিটাল নজরদারির ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে ভাইরাসের বিস্তার রোধ করার জন্য। কীভাবে এই প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
যখনই আপনি জনগণের ওপর নজরদারি বাড়াবেন, সঙ্গে সঙ্গে সরকারের ওপরও একইভাবে নজরদারি বাড়াতে হবে। এই সংকটের মুহূর্তে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো পানির মতো টাকা খরচ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুই ট্রিলিয়ন ডলার এবং জার্মানিতে হাজার হাজার বিলিয়ন ইউরো খরচ হয়েছে, এবং অন্যরাও পিছিয়ে নেই। আমি একজন নাগরিক হিসেবে জানতে চাই, কারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হবে? এই টাকার মাধ্যমে কি বড় বড় করপোরেশনগুলোকে প্রণোদনার মাধ্যমে উদ্ধার করা হচ্ছে, যারা প্রকৃতপক্ষে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটার আগে থেকেই তাদের ব্যবস্থাপকদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে অর্থনৈতিক সংকটে ছিল? নাকি এই টাকা দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা, রেস্তোরাঁ ও ছোট ছোট দোকানগুলো এবং অনুরূপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করা হচ্ছে?
যদি কোনো সরকার নজরদারি বাড়ানোর ব্যাপারে দৃঢ়সংকল্প হয়ে থাকে, তাহলে উভয় পক্ষেই তা কার্যকর করতে হবে। যদি সরকার বলে, 'অসম্ভব, আমরা চাইলেও সব অর্থনৈতিক লেনদেনের হিসাব সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারব না। এতে জটিলতা অনেক বেড়ে যাবে', তখন আপনারা বলবেন, 'না, এটা মোটেও জটিল নয়। যেভাবে এ রকম সর্বগ্রাসী নজরদারির ব্যবস্থা করছেন, যাতে আপনারা জানতে পারেন প্রতিদিন আমি কোথায় যাই, ঠিক সেভাবেই এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা উচিত, যাতে সহজেই আমার প্রদানকৃত করের টাকা দিয়ে আপনারা কী করছেন, সেটা আমি জানতে পারি।'
এটা কীভাবে কার্যকর হবে? ক্ষমতার সুষম বণ্টনের মাধ্যমে এবং কোনো একজন মানুষ কিংবা কর্তৃপক্ষের হাতে অত্যধিক ক্ষমতা না দেওয়ার মাধ্যমে?
অবিকল এভাবেই করতে হবে। একটি মতবাদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে, যেখানে বলা হয়েছে যে আপনি যদি করোনা রোগীর সংস্পর্শে এসেছে এমন কাউকে সতর্ক করতে চান, তাহলে দুটি উপায় রয়েছে: একটি উপায় হচ্ছে একটি কেন্দ্রীয় তথ্যাগার তৈরি করা, যেখানে সবার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হবে, এবং যদি কেউ কোনো কোভিড-১৯ রোগীর সংস্পর্শে আসে, তাহলে তাকে সতর্ক করে দেওয়া হবে। আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে সরাসরি ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ; যেখানে কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ থাকবে না এবং পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করা হবে। অর্থাৎ কেউ যদি কোনো কোভিড-১৯-আক্রান্ত মানুষের কাছাকাছি আসে, তাহলে সে নিজ দায়িত্বে প্রথম ব্যক্তিকে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেবে—ফোনের মাধ্যমে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দৈনিক ভিত্তিতে তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না এবং ফলোআপও করতে পারছে না।
জার্মানির কথা বলতে পারি, জার্মান ফেডারেল ডিজিজ এজেন্সি (আরকেআই) স্বেচ্ছায় একটি ট্র্যাকিং অ্যাপের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের ডেটা সরবরাহ করার সক্ষমতা রাখে।
বর্তমান সংকট মোকাবিলার জন্য সম্ভাব্য নজরদারি-ব্যবস্থা আরও এক ধাপ এগিয়ে যেতে পারে, যাকে বলা যেতে পারে অন্তর্ভেদী প্রযুক্তি। দেখা যাচ্ছে যে আমাদের শরীরের চামড়া, যা এত দিন ছিল অস্পৃশ্য, সেটাকেও ভেদ করে নজরদারি করা সম্ভবপর হচ্ছে। এ ব্যাপারগুলোকে আমরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?
এ ব্যাপারে আমাদের অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। অন্তর্ভেদী নজরদারি-ব্যবস্থা হছে এমন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে আপনি বাইরে কী করছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কার সঙ্গে দেখা করছেন, এমনকি টিভিতে কী দেখছেন কিংবা অনলাইনে কোন কোন ওয়েবসাইটে যাচ্ছেন, তার সবকিছুর ওপরই নজর রাখা হচ্ছে। এই অন্তর্ভেদী নজরদারি-ব্যবস্থায় আপনার শরীরের ভেতরে কিছু প্রবেশ না করিয়েও জানা যায় ভেতরে কী ঘটছে। শুরুতে শরীরের তাপমাত্রার মতো সহজ ব্যপার দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী ধাপে রক্তচাপ, হৃদ্কম্পন, মস্তিষ্কের কার্যকলাপ ইত্যাদিও নজরে রাখা যায়। আর একবার এটা শুরু করলে আপনি যেকোনো মানুষের ব্যাপারে অনেক বেশি তথ্য জানতে পারবেন, যা এর আগে জানার কোনো উপায় ছিল না।
আপনি চাইলে একটি একদলীয় শাসনতন্ত্র তৈরি করতে পারেন, যা নজিরবিহীন। আপনি যদি আমি কী পড়ছি বা টিভিতে কী দেখছি, সেটা জানতে পারেন, তাহলে আমার শৈল্পিক পছন্দ, রাজনৈতিক চিন্তাধারা এবং ব্যক্তিসত্তা সম্পর্কে আপনার মনে একটি ধারণা তৈরি হবে। তবে এই জ্ঞান সীমিত পর্যায়ের। আবার চিন্তা করুন যে আপনি চাইলে আমি যখন একটি প্রবন্ধ পড়ছি বা কোনো একটি অনুষ্ঠান দেখছি অনলাইনে বা টিভিতে, ঠিক সেই মুহূর্তে আমার শরীরের তাপমাত্রা কিংবা রক্তচাপ কী রকম, সেটা জেনে নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে আপনি জেনে যেতে পারবেন প্রতিমুহূর্তে আমার কেমন বোধ হচ্ছে। এ ধরনের প্রবণতা খুব সহজেই একটি নরকতুল্য এবং সর্বগ্রাসী শাসনব্যবস্থার জন্ম দিতে পারে।
এটি অনিবার্য কোনো নিয়তি নয়। আমরা চাইলেই এটাকে প্রতিহত করতে পারি। কিন্তু প্রতিহত করার আগে প্রথমে আমাদের অনুধাবন করতে হবে যে এটি একটি বিপদ, এবং দ্বিতীয়ত, এই সংকটের মুহূর্তে কী কী জিনিস বরদাশত করব আর কী কী করব না, সেটা নিয়েও আমাদের সাবধান হতে হবে।
একবিংশ শতাব্দীর মানবজাতির যে ভাবমূর্তি আপনার মনে ছিল, এই সংকটের কারণে কী সেটাকে পুনর্বিন্যাস করা অনিবার্য হয়ে উঠেছে?
আমরা এখনো জানি না, কারণ, সেটা নির্ভর করবে আমরা এখন কী কী সিদ্ধান্ত নেব, সেটার ওপর। বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের কারণে বৃহৎ একটি কর্মহীন মানবগোষ্ঠী তৈরি হবার বিপদ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। আমরা সামনে দেখতে পাচ্ছি স্বয়ংক্রিয়করণের বৃদ্ধি, যার ফলে এত দিন ধরে যেসব কাজ মানুষ নিজের হাতে করে এসেছে, তা ধাপে ধাপে কম্পিউটার ও রোবটের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে, এবং আরও বেশি বেশি মানুষ চাকরি হারাবে। এর পেছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে যে মানুষ এখন তাদের নিজ নিজ বাসায় অন্তরীণ অবস্থায় আছে, এবং তারা সহজেই ভাইরাস-আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু রোবট ভাইরাস-আক্রান্ত হবে না কখনোই। সামনে এ রকম একটা প্রবণতা দেখা দিতে পারে যে বাইরের দেশের কলকারখানার ওপর নির্ভরতা কমানোর উদ্দেশ্যে কোনো কোনো দেশ কিছু শিল্পকারখানাকে আবার নিজেদের কাছে ফিরিয়ে আনতে পারে। সে ক্ষেত্রে হয়তো বিশ্বায়নের বিনির্মাণ শুরু হবে এবং একটি বিশাল জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়বে, কারণ, তাদের কাজগুলো স্বয়ংক্রিয়করণ হয়ে গিয়েছে কিংবা অন্য কোথাও সরে গিয়েছে।
এবং এই ব্যাপারটি ধনী রাষ্ট্রেও ঘটতে পারে। এই সংকট চাকরির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আনছে। মানুষ বাসায় থেকে কাজ করছে। মানুষ অনলাইনে কাজ করছে। আমরা যদি সতর্ক না হই, তাহলে পরিণামস্বরূপ কিছু কিছু শিল্প খাতের সুসংহত শ্রমবাজারে একটি বড় ধরনের ধস নামতে পারে; কিন্তু এই পরিণতি অনিবার্য নয়। এটি বরং একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমরা চাইলে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে কিংবা বিশ্বজুড়ে কর্মীদের অধিকার রক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারি । সরকারগুলো বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দিচ্ছে। সেসব ক্ষেত্রে সরকার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের অধিকার রক্ষাকে একটি মূল শর্ত হিসেবে কার্যকর করতে পারে। এসবই আমাদের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।
একজন ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদ আমাদের বর্তমান অবস্থাকে কীভাবে বর্ণনা করবেন?
আমার ধারণা, ভবিষ্যৎ ইতিহাসবিদগণ এই সময়টাকে একবিংশ শতাব্দীর একটি ঘুরে দাঁড়ানোর মুহূর্ত হিসেবে অভিহিত করবেন। কিন্তু আমাদের পরিণতি কী হবে, তার পুরোটাই নির্ভর করছে আমাদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর ওপর। এ ক্ষেত্রে অনিবার্য পরিণতি বলে কিছু নেই।
সূত্র: ডয়েচে ভেলে, ২২ এপ্রিল ২০২০