ভাষার কাব্যিক নির্যাতনকক্ষ

১৯৪৯ সালের ২১ মার্চ স্লোভেনিয়ায় জন্ম নেওয়া স্লাভয় জিজেক বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান এবং বহু জার্নাল ও ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ছবি: সংগৃহীত
১৯৪৯ সালের ২১ মার্চ স্লোভেনিয়ায় জন্ম নেওয়া স্লাভয় জিজেক বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান এবং বহু জার্নাল ও ম্যাগাজিনের সম্পাদক হিসেবে কাজ করেন। ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান দুনিয়ার প্রভাববিস্তারী চিন্তক স্লাভয় জিজেকের জন্ম স্লোভেনিয়ায়। তাঁর বক্তৃতা ও ভিডিও জনপ্রিয়তা তাঁকে ‘রকস্টার দার্শনিক’ খেতাব এনে দিয়েছে। হেগেল, মার্ক্স ও লাকা ঘরানার এই দার্শনিক নিজের নতুন চিন্তা, বক্তৃতা, তির্যক মন্তব্য ও রসবোধের কারণে বিদ্বৎসমাজে এখন খুবই জনপ্রিয়। ২০১৪ সালে পোয়েট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে তিনি লিখেছিলেন, কবিতার ভাষা কীভাবে জাতিগত নির্মূলে ভূমিকা রাখতে পারে। ইংরেজি থেকে সেই প্রবন্ধের ভাষান্তরসহ তাঁর কয়েকটি কৌতুকের অনুবাদ করেছেন শাফিনূর শাফিন

প্লেটোকে বেশ ভুগতে হয়েছিল যখন তিনি বললেন, কবিদের নগর থেকে খেদিয়ে বের করে দেওয়া উচিত। যুদ্ধ-পরবর্তী যুগোস্লাভিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে প্লেটোর এই বক্তব্যকে আমার কাছে যথার্থই মনে হয়েছে। কারণ, জাতিগত নির্মূল বা জাতিশুদ্ধি অভিযানের (এথনিক ক্লিনজিং) মতো ভয়াবহ ঘটনার প্রস্তুতি কবিদের বিপজ্জনক স্বপ্নেই প্রোথিত ছিল। এটাও সত্য, স্লবোডান মিলোশেভিচ জাতীয়তাবাদী আবেগকে ভুল দিকে পরিচালিত করেছিলেন, কিন্তু কবিরা তাঁকে এমন মালমসলা সরবরাহ করেছিলেন, যার জন্য তাঁদেরও দায়ী করা চলে নিশ্চিন্তে। এ ঘটনার মূলে কোনো দূষিত রাজনীতিবিদ নন, বরং ছিলেন তাঁরাই, যাঁদের আমরা দায়িত্বশীল কবি বলে জানি। এঁরা সত্তর বা আশির দশকের প্রথমদিকে কেবল সার্বিয়াতেই নয়, প্রাক্-যুগোস্লাভিয়াতেও উগ্র জাতীয়তাবাদের বীজ বোনা শুরু করেছিলেন। ইয়ার্দোভান কারাদাজিক ও রতেকা মালাদিকের যৌথরূপে প্রকাশ পেয়েছিল যে যুদ্ধ-পরবর্তী যুগোস্লাভিয়ায় বাণিজ্যিক-সামরিক জটিলতার বদলে আমাদের জন্য কাব্যিক-সামরিক জটিলতাই বেশি জটিল ছিল। কারাদাজিক শুধুই নিষ্ঠুর রাজনৈতিক ও সামরিক নেতা ছিলেন না, কবিও ছিলেন। তাঁর কবিতা হাস্যকর বলে বাতিল না করে বরং সূক্ষ্ম পাঠ দাবি করে। তাতে একটি জাতিকে নির্মূলের প্রাক্-কথন জানা যাবে। এখানে একটি শিরোনামহীন কবিতার প্রথম লাইন রয়েছে, যা উৎসর্গ করা হয়েছে ইজলেট সারাজলিকের নামে:

‘আমার নতুন বিশ্বাসকে জনগণের

মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে

তোমাদের নিবেদন করি,

যা আগে কেউ করেনি

নিবেদন করি অস্বস্তি এবং মদ,

যার রুটি নেই সে আমার

সূর্যের আলো খেয়ে থাকবে

আমার বিশ্বাস, মানুষের জন্য

কোনো কিছুই নিষিদ্ধ নয়

এখানে আছে প্রেমময়

এবং পানরত আত্মা

তোমরা যতক্ষণ ইচ্ছা সূর্যের দিকে

তাকিয়ে থাকো

এবং এই আমি যে ঈশ্বরের মতো

চিন্তা করি

তোমাদের বারণ করতে আসবে না কিছুতে

হায়, জনগণের ভিড়ে আমার প্রিয় ভাইয়েরা আমাকে অনুসরণ করো’।

নৈতিক বেড়াজালে আটকে পড়া সুপার ইগোর চাপকে আজকালকার ‘উত্তরাধুনিক’ জাতীয়তাবাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বলা যেতে পারে। এখানে চরমভাবাপন্ন জাতিগত পরিচয় আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষ বৈশ্বিক সমাজের বিভ্রান্তিকর, অনিরাপদ যত ক্লিশে মূল্যবোধ আর বিশ্বাসকে জাগিয়ে তোলে এবং তা ভেতরে-ভেতরে গোপন সঞ্চালকের মতো জাতীয়তাবাদী ‘মৌলবাদ’ হিসেবে কাজ করে। আমরা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে মৌলবাদের পেছনে বর্তমান জাতীয়তাবাদে বিকৃত ছদ্ম মুক্তমনার প্রভাব স্বীকার না করে, কীভাবে অস্পষ্ট সুপার ইগো সামাজিক রীতিনীতি তৈরিতে সম্পূরক ভূমিকা রাখে, আলোচনা করি।

হেগেল তাঁর ফেনোমনলজি অব স্পিরিট-এ যে অদম্য নীরব ‘আত্মার বুনন’-এর উল্লেখ করেছেন, তা মূলত পরিবর্তিত মতাদর্শগুলো সমন্বয় করার প্রাথমিক কাজ, প্রায়ই জনসাধারণের যা নজরে পড়ে না, হঠাৎ বিস্ফোরিত হলে সবাই কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে মেনে নেয়। সত্তর ও আশির দশকের দিকে যুগোস্লাভিয়ার অভ্যন্তরীণ ভাঙনের শুরু পুরোনো মতাদর্শিক ঐক্যজোটগুলো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে শুরু হলেও আশির দশকের শেষে তা বৃহদাকারে সামনে চলে আসে। তত দিনে খুব দেরি হয়ে গেছে। সত্তর আর আশির দশকে যুগোস্লাভিয়ার অবস্থা হলো টম অ্যান্ড জেরির টমের মতো, যে কিনা অটল বিশ্বাসে শূন্যে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আবিষ্কার করে পায়ের নিচে শক্ত কোনো মাটি নেই এবং সঙ্গে সঙ্গে ধপাস করে পড়ে যায়। মিলোশেভিক প্রথম ব্যক্তি, যিনি আমাদের সবাইকে নিজেদের পতনের দিকে ঝুঁকে তাকাতে বাধ্য করেন।

যুগোস্লাভিয়ার গণহত্যার নিদর্শন গত শতকের নয়ের দশকের এই আলোকচিত্র
যুগোস্লাভিয়ার গণহত্যার নিদর্শন গত শতকের নয়ের দশকের এই আলোকচিত্র

কারাদাজিক আর তাঁর সঙ্গীসাথিদের খারাপ কবি বলে বাতিল করে দেওয়াই যায়, যদিও সেই সময় অন্যান্য সাবেক যুগোস্লাভ জাতির (এর মধ্যে সার্বিয়াও ছিল) বহু মহান ও শুদ্ধ বলে খ্যাত কবি-সাহিত্যিকেরাও পুরো মাত্রায় যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে।

আর অস্ট্রিয়ান পিটার হান্দ্কেকে নিয়ে কী বলব? ইউরোপের এমন ধ্রুপদি সাহিত্যিকও স্লোবোদান মিলোশেভিকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সরবে উপস্থিত ছিলেন। প্রায় এক শতাব্দী আগে, জার্মানিতে নাজিদের উত্থানকে উল্লেখ করে কার্ল ক্রাউস (অস্ট্রিয়ান লেখক) সরস মন্তব্য করেন যে জার্মানি কবি আর চিন্তাবিদদের দেশ থেকে হয়ে গেছে বিচারক আর জল্লাদের দেশ। এই চরম বৈপরীত্য হয়তো এখন আমাদের আর তেমন অবাক করে না। তা ছাড়া কাব্যিক-সামরিক কূটনামি যে শুধু বলকানদের বৈশিষ্ট্য তা তো নয়, এ ক্ষেত্রে নাম নেওয়া যায় হাসান এনগেজের, যিনি ‘রুয়ান্ডার কারাদাজিক’ বলে পরিচিত। এই ভদ্রলোক তাঁর জার্নাল ‘কাংগুরা’তে বেশ পরিকল্পিতভাবে গুছিয়ে তুতসিবিরোধী ঘৃণা ছড়াচ্ছিলেন; এবং গণহত্যার ডাক দিচ্ছিলেন।

কিন্তু কবিতা ও সহিংসতার মধ্যে এই যোগাযোগ কি নিছক দুর্ঘটনা? কীভাবে এরা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত? ওয়াল্টার বেঞ্জামিন তাঁর ‘ক্রিটিক অব ভায়োলেন্স’ প্রবন্ধে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘সহিংসতার অহিংস সমাধান কি সম্ভব?’ উত্তর হলো, সহিংসতা থেকে বের হওয়া যাবে ‘ব্যক্তিগত সম্পর্ক’, সৌজন্য, সহানুভূতি এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে। মানুষ যখন সমঝোতা করতে চায়, তার এই সমঝোতার ভাষাটা ঠিকঠাক বুঝতে পারলেই বোঝা যায় লোকে সহিংসতা থেকে দূরে থাকতে চায়। সরাসরি সহিংসতা চালানোর পরিবর্তে ভাষার মাধ্যমে আমরা তর্ক-বিতর্ক, কথার আদান-প্রদান করতে করতে যখন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠি, তার অর্থ বিপক্ষের বক্তব্যকে গ্রাহ্য করা হচ্ছে।

কী হবে মানুষ যদি কেবল কথা বলতে পারার ক্ষমতার কারণে হিংস্রতা বা সহিংসতায় অন্য প্রাণীর চেয়ে এগিয়ে থাকে? বোর্দিউ থেকে হাইডেগারসহ বহু দার্শনিক ও সমাজবিজ্ঞানী ভাষার মধ্যেই অনেক সহিংস বৈশিষ্ট্য পেয়েছেন। তবে হাইডেগার ভাষার সহিংস দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োগ এড়িয়ে গেছেন, যা আবার লাকা তাঁর সাংকেতিক ক্রমতত্ত্বে দেখিয়েছেন। লাকার মতে, ভাষার উদ্দেশ্য এর মূল রূপের সঙ্গে কীভাবে বদলায়, তার ওপর জোর দেন হাইডেগার: ভাষা মানুষের সৃষ্ট কোনো যন্ত্রপাতি নয়, বরং মানুষ ভাষার ভেতরে ‘বাস করে’। ফ্রয়েডের মনোবিশ্লেষণের আরও নিকৃষ্ট প্রকাশ ধরা যায় লাকার ‘প্যারানয়াক’ টুইস্টকে। এই ধারণা আসে একটি ঘরকে নির্যাতনকক্ষ হিসেবে বিশেষায়িত করার মাধ্যমে। লাকা বলেন, ফ্রয়েডিয়ান দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষ ভাষার দ্বারা বন্দী ও নির্যাতিত।

১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত আর্জেন্টাইন সামরিক সরকার ভাষার ব্যবহারে অদ্ভুত পরিবর্তন আনে। ক্রিয়াপদগুলোর এক নতুন ভাববাচ্যগত ব্যবহার শুরু হয়। যেসব হাজার হাজার বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মী এবং বুদ্ধিজীবী গুম বা উধাও, সামরিক নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন, তাঁদের হদিস বা পরিণতি নিয়ে যে সেনাবাহিনী কিছু জানে, তা পুরোপুরি অস্বীকার করে। এঁদের সম্পর্কে যেকোনো বয়ান দিতে গিয়ে সক্রিয় ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে সেনাবাহিনী বলত: ‘হারিয়ে যাওয়া’ বা ‘উধাও হওয়া’ মানুষ, কিন্তু এসবের পেছনে সামরিক গোপন বাহিনীর ভূমিকা অনুচ্চারিত থাকত। স্তালিনের শাসনামলেও অনুরূপ একটি কথার প্রচলন ছিল: ‘পদত্যাগ করেছেন’। এই ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হতো যখন সরকারি দলের উচ্চপদস্থ কোনো সদস্য শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে পদত্যাগ করতেন। যদিও সবাই বুঝত, নানা কারণে তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে নিয়ে এটাও বলা হতো, তিনি পদচ্যুত, অদৃশ্য। লাকা এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে: এসব ক্ষেত্রে যেসব শব্দ ব্যবহার করা হয়, তার অন্তরালে অন্য অর্থ নিহিত। যেমন তিনি এজেন্ট ছিলেন, ফলে সরকারের ভেতরের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যরা তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করেছেন এবং গোপন পুলিশ তাঁকে গুম করে ফেলেছে। লাকা যেভাবে ভাষার প্রয়োগের আড়ালে অন্য অর্থ লুকিয়ে থাকার কথা বলেছেন, আমাদের কি বিষয়টি সেভাবে দেখা উচিত? আসলে কোনো বক্তব্যে ‘বলা হয়েছে’ বা ‘কথিত আছে যে’—এ জাতীয় শব্দ থাকলে বুঝে নিতে হবে জোরপূর্বক কিছু ঘটেছে। এখানে শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি যেভাবে নিজেকে ‘অন্যের চেয়ে বড়’ করে দেখায়, একই সঙ্গে নিজস্ব পরিসরে নির্যাতনের কথাও প্রকাশ করে ফেলে।

এই ধরনের বিশেষ বক্তব্যে নানা অসংগতি, মানসিক অশান্তি, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইত্যাদি থাকে। এসব বক্তব্য শুধু মানসিক আঘাতকে প্রকাশ করে না বরং জীবনে এর প্রভাবও বোঝায়। কোনো না কোনোভাবে মানসিক অশান্তির কারণগুলো কথায় কথায় নির্যাতনকক্ষে থাকার মতো করে প্রকাশ পায়।

আলফ্রেড জেলিনেক বলেন, অত্যাচার মনে হলেও মানুষের কাছ থেকে সত্য কথা বের করে আনার জন্য বাক্স্বাধীনতা স্থগিত করাই ভালো। যেকোনো বয়ানকে বানোয়াট, বিকৃত, বর্ধিত, সংকুচিত, কাটাছেঁড়া এবং জোড়াতালি দিয়ে হলেও প্রকাশ করা উচিত, যাতে সে নিজের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হয়। ভাষাকে এত মহান করে না দেখে নিষ্ঠুর উদাসীনতা এবং নির্বুদ্ধিতার জায়গাই দেওয়া উচিত। কবিতা হলো সেই ভাষা, যা আসলে নির্যাতনের বহিঃপ্রকাশ।

(সংক্ষেপিত)

 জিজেকের কৌতুক 

* বিল ক্লিনটন একবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অফিস পরিদর্শনে গিয়ে রহস্যময় এক নীল ফোন দেখতে পান। তিনি জানতে চান, ‘কী এটা?’ নেতানিয়াহু তখন আকাশের দিকে আঙুল তুলে (ঈশ্বরকে নির্দেশ করে) বলেন, এটা তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য।
নিজ দেশে ফিরে আসার পর ঈর্ষাকাতর ক্লিনটন তাঁর গোয়েন্দা বাহিনীকে ডেকে নির্দেশ দেন অমন একটা ফোন যেন তাঁর অফিসের জন্য সরবরাহ করা হয়। দুই সপ্তাহের মধ্যেই ফোন চলে আসে এবং এটা কাজও করে। কিন্তু মাস শেষে দেখা গেল অতিরিক্ত মাত্রাছাড়া ফোন বিল আসছে—প্রতি মিনিটে ২ মিলিয়ন ডলার!

এবার রেগেমেগে নেতানিয়াহুকে ফোন করে জানতে চাইলেন ক্লিনটন, ‘এই আমরাই আপনাদের আর্থিক সাহায্য করে থাকি। কীভাবে আপনি এত টাকা বিল দেন, যা কিনা আমাদের জন্যও জোগানো অসম্ভব। তাহলে এভাবে আমাদের টাকা অপচয় করেন আপনারা?’
উত্তেজিত ক্লিন্টনের প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু শান্তই ছিলেন। শান্তভাবে বললেন, ‘আমাদের মানে ইহুদিদের জন্য তো ভাই এটা লোকাল কল।’

এই একই কৌতুকের আবার সোভিয়েত ইউনিয়ন সংস্করণও আছে। এখানে কেবল ঈশ্বরের পরিবর্তে নরক আর ক্লিনটনের পরিবর্তে নিক্সন এবং নেতানিয়াহুর জায়গায় বসানো হয়েছে ব্রেজনেভকে। নিক্সন যখন নরকে ফোন করলে অতিরিক্ত বিল আসে বলে অভিযোগ জানান, তখন ব্রেজনেভ বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য নরকে ফোন করলে স্থানীয় কলরেটে বিল আসে।’

* কীভাবে আপনি দৃশ্য বা ঘটনাকে দেখছেন তার ওপর নির্ভর করে যেকোনো ঘটনার অর্থ পর্যন্ত পাল্টে যেতে পারে। সোভিয়েত এক ধ্রুপদি কৌতুক এমন: ব্রেজনেভ মারা যাওয়ার পরে তাঁকে নরকে নিয়ে যাওয়া হয়। যেহেতু তিনি জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ভালো নেতা ছিলেন, তাই তাঁকে ঘুরে ঘুরে নিজের জন্য ঘর বেছে নেওয়ার সুবিধা দেওয়া হলো। ঘরগুলো দেখতে দেখতে একটা ঘরে তিনি দেখলেন, মেরিলিন মনরোকে কোলে নিয়ে আদর করছেন ক্রুশ্চেভ। ক্রুশ্চেভকে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে দেখে চরম ঈর্ষান্বিত হয়ে ব্রেজনেভ এই ঘরটিই চাইলেন। তখন নরকের পাহারাদার মুচকি হেসে বলল, ‘এত সহজে উতলা হবেন না কমরেড! নরকে ক্রুশ্চেভের ঘর এটা না, তবে হ্যাঁ, এটা মনরোর ঘর।’ 

* আজকের দিনেও চলে এমন পুরোনো একটা কৌতুকের পুনরাবৃত্তি করা যায় ধনীদের নিয়ে। এক ধনী কাজের লোককে ডেকে হুকুম দিলেন গেটের বাইরে দাঁড়ানো ভিখারিকে তাড়িয়ে দিতে। কারণ হিসেবে তিনি বললেন, ‘আমি এতই দয়ালু যে গরিবের দুঃখ দুই চোখে দেখতে পারি না।’

সূত্র: জিজেক’স জোকস: ডিড ইউ হিয়ার দ্য ওয়ান অ্যাবাউট হেগেল অ্যান্ড নেগেশান?