বাংলা সাহিত্যে জাদুবাস্তব
১. ভূমিকা
কলম্বিয়া দেশের মাকন্দো গ্রামটা একটা কাল্পনিক জায়গা। সেই গ্রামের অধিবাসী বুয়েন্দিয়া পরিবারের তিন-চার পুরুষের ইতিবৃত্তটাও কাল্পনিক। কিন্তু আখ্যানটি যে ধরনের পরিবেশে স্থাপিত, সেটা কাল্পনিক হলেও পুরোপুরি সম্ভবপর। তার ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক আর রাজনৈতিক পটভূমি আমাদের চেনা চেনা লাগে। কখনো কখনো আখ্যানটি কিন্তু বাস্তবের নিয়ম মুচড়ে-দুমড়ে সম্ভাব্যতার সেই রাজ্যের সীমানা ডিঙিয়ে যায়। আমরা পড়ি কর্নেল বুয়েন্দিয়ার ষোলোটি ছেলের কথা, যাদের কপালে মাখা ছাইয়ের টিপ কিছুতেই মোছা যায় না। জিপসি মেলকিয়াদেস মরে গিয়েও বারবার উপন্যাসের চিত্রপটে বিচরণ করতে থাকে। ঘুমহীনতার মাসব্যাপী মহামারির কথা শুনি। লোকেদের গায়ের গন্ধ মরে গেলেও বছর-পর-বছর কবরের আশপাশে লেগেই থাকে। উপন্যাসের চরিত্ররা ম্যারির মতো সশরীর স্বর্গারোহণ করে বা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে খাওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে। পুরাণেতিহাস-সুলভ চার বছর এগারো মাস আর দুদিনের অব্যাহত বর্ষণের পরে মাকন্দোতে একটানা ১০ বছর ধরে এক ফোঁটা পানি পড়ে না। এমনকি ইঞ্জিলেরও হস্তক্ষেপ দেখি সেই পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার সময়, যেটা দিয়ে বুয়েন্দিয়াদের সুদীর্ঘ কাহিনি সমাপ্ত হয়। এমন ঘটেছে আর কোথাও নয়, গ্যাব্রিয়েল গারসিয়া মার্কেসের উনিশ শ সাতষট্টি সালের এক শ বছরের নিঃসঙ্গতা, অর্থাৎ ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিচুড উপন্যাসে, জাদুবাস্তবের অন্যতম আর অতি বিখ্যাত প্রতিভূ।
প্রথম পুরুষ-বক্তা মুখ্য চরিত্রের বেলায়ও এমন সব ব্যতিক্রম ঘটতে পারে। তিন বছরের অস্কার মাজেরাথকে উন্মাদ আশ্রমে রাখা হচ্ছে। অস্কার জন্মকালেই পাকা বুদ্ধি নিয়ে এই দুনিয়ায় এসেছে আর তিন বছর বয়সে ঠিক করল যে সে আর বাড়বে না। কুটুম্বের কুলজিনামা মনে করার তার পদ্ধতিটা হলো ঢাক পেটানো। তার বিশেষ ক্ষমতাগুলোর একটা আমরা মার্কেসের লেখায়ও পাই: ও এমনভাবে চিৎকার করতে পারে যে কাচ ভেঙে যায়। আপনারা সবাই জানেন কোন উপন্যাসের কথা বলছি: গ্যুন্টার গ্রাসের টিনের ঢাক অর্থাৎ টিন ড্রাম।
এমন কৌশল সাম্প্রতিক কালের কথাসাহিত্যে আমরা অনেক পাই। পুরাণেতিহাস, আউলিয়ার কেরামতি, ভূতের গল্প, জাদুর জগতের মতো নানা প্রসঙ্গ থেকে ঘটনা বা চিত্রকল্প ধার করে আখ্যানের ৯০ শতাংশ বাস্তবিক কাঠামোতে ভরে দেওয়া হয়। ভিত্তিটা বস্তুত জোগাড় করে দেয় গদ্যধারার বাস্তববাদী আদর্শ, সেটা উপন্যাস হোক বা ছোটগল্প। উপন্যাসের ইতিহাস সম্বন্ধে অনেকবার বলা হয়েছে যে সেই ধারাটি মূলত পাঠকদের মিথ থেকে সরিয়ে বাস্তবের দিকে নিয়ে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে দেখতে গেলে বলতে হবে যে এ রকম লেখার ক্ষেত্রে কিন্তু তার উল্টোই খাটে; এখানে আধুনিক গদ্যধারা কোণঠাসা হওয়া বা পরিত্যক্ত নানা ধরনের কল্পনা আর ইতিকথাকে জায়গা দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়।
এমন লিখনশৈলীর অভিধাটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে জাদুবাস্তব/জাদুবাস্তবতা/জাদুবাস্তববাদ। নামটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। ওই প্রতিসংজ্ঞায়ন বারবার ঝাপসা বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কিন্তু অস্পষ্টতার আলাদা একটা আকর্ষণ আছে। সেই কথা প্রমাণ করে জাদুবাস্তব এখনো বহু ব্যবহৃত। কথাটার উৎস জার্মান ভাষায়। ১৯২৫ সালে ফ্রানৎস রোহ বলে একজন শিল্পকলার আলোচক একটা প্রদর্শনীর সমালোচনায় প্রথম সেটা ব্যবহার করেন। পরবর্তীকালে কিউবার লেখক আলেহো কারপেন্তিয়ার ওটা সাহিত্যের এলাকায় আনিয়েছিলেন এবং দক্ষিণ আমেরিকার একটা বিশিষ্ট গদ্য লেখার প্রবণতা হিসেবে জাদুবাস্তব পুরো দুনিয়ায় সুখ্যাত হয়ে ওঠে। সত্তর-আশির দশকের পর তার লাতিন আমেরিকান গন্ধটাও কিছুটা মুছে যায় এবং ওটা আলাদা একটা আন্তর্জাতিক রচনাশৈলী হয়ে দাঁড়ায় বলা চলে।
দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে এর সম্পর্কটা কী, তা আরেকটি সাহিত্যিক রচনার বিবরণ দিলেই সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে যাবে। গল্পটা হচ্ছে সালিম সিনাইয়ের জীবনের প্রথম ৩০ বছরের-সালিম সিনাই, যার জন্মকাল ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ রাত বারোটায় অর্থাৎ ঠিক ওই মুহূর্তে যখন ভারতবর্ষ ব্রিটিশরাজ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। জন্ম নেওয়ার পরে হাসপাতালেই একজন খ্রিষ্টীয় আয়া তাকে আর-একজন সেই মুহূর্তে জন্মানো শিশুর সঙ্গে বদলে ফেলে। যার ফলে সালিম গরিব ঘরের হিন্দু বাচ্চা না হয়ে বনেদি একটা মুসলমান পরিবারে মানুষ হয়। সালিমের বিশেষ ক্ষমতার মধ্যে একটা হলো তার টেলিপ্যাথিক আকর্ষণশক্তি; ও চাইলে উপমহাদেশের অন্যান্য সেই মধ্যরাতে জন্মানো লোকদের একত্র করতে পারে। ১৯৮০-এর মিডনাইটস চিলড্রেন বিপুল প্রশংসা লাভ করেছিল। ক্যানেডিয়ান সমালোচক ক্লার্ক ব্লেইজ লিখেছিলেন, আ কনটিনেন্ট ফাইন্ডিং ইটস ভয়েস। সেই উপন্যাসটি সালমান রুশদির আন্তর্জাতিক খ্যাতির শিলান্যাস এবং বিশ্বের বই বাজারে উপমহাদেশের ইংরেজি লেখার দ্বারোদ্ঘাটক। রুশদি হয়ে গেলেন জাদুবাস্তবিক সাহিত্যের এবং-হোমি ভাভার সাহায্যে উত্তর-ঔপনিবেশিক বা পোস্ট কলোনিয়াল সাহিত্যেরও একজন মহাপুরুষ। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তর মতে, রুশদি প্রেরণা পেয়েছিলেন মার্কেস-বরখেস থেকে নয়; বরং গুন্টার গ্রাস থেকেই।
২. বাংলা সাহিত্যে জাদুবাস্তবের কিছু নমুনা
এই প্রবণতা উপমহাদেশের ইংরেজি লেখায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। উর্দু, হিন্দি, বাংলার মতো ভাষায়ও জাদুবাস্তবের লক্ষণবাহী গদ্য সাহিত্যের অভাব নেই। আর বাংলায় দেখছি ওটা নিয়ে তাত্ত্বিক চর্চাও হতে থাকে। বলা বাহুল্য যে এই ধারার সামগ্রিক নিরীক্ষণ আজ আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি শুধু এমন কিছু বাংলা উপন্যাসের উদাহরণ দেবো, যেগুলোতে জাদুবাস্তবের লক্ষণ দৃশ্যমান। তারপর তৎসংক্রান্ত চর্চার সংক্ষিপ্ত একটা সমালোচনা দিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করব।
একটি উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। সাংবাদিক পূরণ সহায় আজকালকার ঝাড়খন্ডের পিরথা গ্রামের আদিবাসী বাসিন্দাদের দুরবস্থা বেশ ভালোভাবে আত্মস্থ করে নিয়েছে। স্থানীয় একটা বিশ্বাস অনুসারে গ্রামটার প্রতীক হচ্ছে একটা টেরোড্যাকটিল, অর্থাৎ উড়ন্ত একটা ডাইনোসর, যার অ্যানাক্রনিজম বা ভুল সময় ভুল জায়গায় এসে পড়া আদিবাসীদের অবস্থার ওপর সংকেত হিসেবে আরোপিত হয়। আখ্যানটি কিন্তু ওই সাংকেতিক স্তরে থামে না। হঠাৎ পূরণ সহায় নিজে এবং পূরণের অবস্থানটা আপন করে নিয়ে আমরা পাঠকেরাও-টেরোড্যাকটিলটাকে দেখতে পায়, প্রথমে পূরণের ঘরের ভেতরে এবং তারপর গ্রামের ওপর আকাশে উড়তে উড়তে। পূরণের এই নিজের চোখে দেখাটা তাকে গ্রামবাসীর জন্য বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে। পক্ষান্তরে স্থানীয় সরকারি আমলারা কেউই আদিবাসীদের সেই মানসিক বিশ্বে প্রবেশ করতে সক্ষম নয়। উপন্যাসের শেষে প্রাণীটি মারা যায়। আর লেখকের অভিপ্রায় সম্ভবত এই যে আমরা এই মারা যাওয়াটা যেন আদিবাসীদের হবু ভবিষ্যৎ হিসেবে পাঠ করি। ভারতবর্ষের আদিবাসীদের সংকটবিষয়ক এই ছোট উপন্যাসটি হচ্ছে আর কিছু নয়, মহাশ্বেতা দেবীর ১৯৮৯ সালের টেরোড্যাকটিল, পূরণ সহায় ও পিরথা।
মহাশ্বেতা দেবীকে সহজে কেউ জাদুবাস্তববাদী বলে শনাক্ত করবে না। তাঁর সাহিত্যিক মতাদর্শ এমনই রাজনৈতিক আর বাস্তববাদী, অতিপ্রাকৃত কল্পনা তাঁর নানা লেখায় অন্ধবিশ্বাস বলে চিহ্নিত করা হয়। কাজেই টেরোড্যাকটিলের মতো চিত্রকল্পের প্রয়োগ তাঁর বেলায় যথেষ্ট ব্যতিক্রমী ঠেকে এবং বাস্তববাদী শৈলীর নিয়মাবলি এমনভাবে ভাঙা বেশ তাৎপর্যবাহী। টেরোড্যাকটিল সশরীর উপন্যাসে ঢুকে পড়াটার মানে এই যে কাহিনির সাধারণ বাস্তবতার পাশাপাশি আরেক রকম বিকল্প এবং বিরোধী বাস্তবতাও বর্তমান। কোনটা আসল, কোনটা নকল-এটা নির্ণয় না করেই পাঠককে আমন্ত্রণ জানানো হয় দুটোতেই ঢুকে পড়তে। এতে বোধ হয় কানাডার সাহিত্যবিদ স্টিভেন স্লীমনের বক্তব্য সার্থক হয় যে ‘the characteristic manoeuvre of magic realist fiction is that its two separate narrative modes never manage to arrange themselves int any kind of hierarchy’ অর্থাৎ জাদুবাস্তব সাহিত্যের স্বভাবগত প্রক্রিয়া এই যে তার দুটি আলাদা আখ্যানের ধরনের মধ্যে কোনো স্তরভেদ বা হাইরার্কি স্থাপিত হয় না।
অতিপ্রাকৃত চরিত্র আর ঘটনা নিজের রচনায় অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারে মহাশ্বেতা দেবীর ছেলে নবারুণ ভট্টাচার্যের প্রবণতা আর সাবলীলতা অনেক বেশি। তাঁর প্রথম উপন্যাস হারবার্ট (১৯৯২) এবং পরবর্তীকালের কাঙ্গাল মালসাট-এর মতো অন্যান্য উপন্যাস এ কথার সাক্ষ্য বহন করে। হারবার্ট-এর আখ্যায়িকা কেন্দ্রীয় কলকাতার অল্পশিক্ষিত নিম্নমধ্যবিত্ত হারবার্ট সরকারের জীবন ও আত্মহত্যা নিয়ে। নানা বিভোর অভিজ্ঞতার ফলে হারবার্ট মনে করে যে সে মৃত লোকের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে। ‘মৃতের সহিত কথোপকথন’ বলে একটা এজেন্সি খুলে সে টাকা রোজগার করতে লাগে। কিন্তু তার কারবার পশ্চিম বাংলার যুক্তিবাদী সমাজের চোখে পড়ে এবং তারা হুমকি দিয়ে তাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে। এই উপন্যাসে এবং তাঁর পরবর্তী লেখাগুলোতে জ্যান্ত আর মৃতের মধ্যবর্তী সীমারেখা শিথিল করে দেন নবারুণ। মুখ্য পাত্র হারবার্টের অনেক আগে মারা যাওয়া মা-বাবা ঘটনার বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে কথা-মঞ্চের আড়ালে এসে হাজির হয়ে তাঁদের মন্তব্য দিয়ে যান। একটা কিউরিও দোকানের জানালায় হারবার্টের আবিষ্কার করা একটি পরির মূর্তি জীবিত হয়ে ওঠে আর তার মৃত্যুর পরও হারবার্টের জানালার সামনে চক্কর কাটে। এসব ঘটনা মূল কাহিনির ওপরে আরোপিত একধরনের ব্যঙ্গ-টীকার কাজে আসে। কারণ সেই কাহিনি অনুসারে অতিপ্রাকৃত ঘটনাবলি পুরোপুরি হারবার্টের মানসিক গন্ডগোল-উদ্ভূত।
জাদুবাস্তবের আভাস বাংলাদেশের বিভিন্ন উপন্যাসেও পাওয়া যায়। তমিজ একজন মাঝির ছেলে, বগুড়ার কাৎলাহার বিলে বাস করে। সে তার ঐতিহ্যগত পেশা ছেড়ে দিয়ে চাষ করতে চায়। সময়কাল ১৯৪৭-এর একটু আগে আর পরে। তমিজ, তার বাবা আর তার সৎমার জীবনের নিবিড় চিত্রায়ণের সঙ্গে সঙ্গে পাঠকেরা দেখতে পায়, দেশভাগের আমলে বগুড়ার গ্রামীণ সমাজের পরিবর্তন, সাম্প্রদায়িক চেতনার প্রাদুর্ভাব আর স্থানীয় দল, বিশেষ করে মুসলিম লীগের নানা রাজনৈতিক খেলা। তমিজের কৃষক হয়ে যাওয়ার এবং স্থানীয় সমাজ আর জোতদারদের সঙ্গে তার সংঘর্ষের গল্পের সঙ্গে তার বাপ যেভাবে তার সাত পুরুষের স্বপ্নজগতে বিচরণ করছে তারও বিবরণ আমরা পাই। স্বপ্নের বিবরণ কথাসাহিত্যের আদিকাল থেকেই প্রচলিত, সুতরাং শুধু স্বপ্নের প্রাচুর্যকেই জাদুবাস্তবের লক্ষণ বলতে আমি দ্বিধাবোধ করি। কিন্তু এই উপন্যাসে স্বপ্নের দাপট কিছু জায়গায় এত জোরালো যে স্বপ্ন আর বাস্তবের সীমানা সুস্থির থাকে না আর এমন ঘটনা ঘটে যায়, যেগুলো সম্ভবের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তমিজের বাপ মৃত্যুর পরও নিয়মিত তমিজের সৎমা কুলসুমের সঙ্গে কথা বলতে আসে আর সেটা আসল না কুলসুমের মনের দোষ, সে প্রশ্নের সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়। তমিজদের পূর্বপুরুষ বরকতুল্লা মুন্সী ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করে মরে গিয়ে খুলি আর ধড় এই দুই ভাগে বিভক্ত তার শরীর নিয়ে গাছে বসে গিয়ে এলাকাটার মাছ আর মানুষকে কাবু করে। সেই পাকুড়গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াটাও জাদুবাস্তবসুলভ একটা ঘটনা বটে। অসাধারণ প্রতিভা হিসেবে মনে পড়ে কুলসুমের অসম্ভব তীক্ষ্ণ ঘ্রাণশক্তি আর সবকিছু শুঁকে নেওয়ার ক্ষমতা। এমন ঘন ঘন ইন্দ্রিয়ের specialization-এর আমরা যেন জাদুবাস্তবের গন্ধ পাই। তাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ১৯৯৬-এর বিখ্যাত উপন্যাস খোয়াবনামাতে জাদুবাস্তবের প্রয়োগ অল্প হলেও বেশ চোখে পড়ে।
জাদুবাস্তবের গন্ধটা আরও বেশি পাচ্ছি প্রায় একই সময় প্রকাশিত আরেকটি উপন্যাসে। বইটির বিষয় হলো সিরাজগঞ্জ জেলার একটা গ্রামের গরিব কামলার ছেলে ‘মফিজদ্দি’র মফিজুদ্দিন মিয়া হয়ে ওঠা; অর্থাৎ গ্রামীণ সমাজের প্রান্ত থেকে কেন্দ্রে উঠে আসা একটি অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জীবনী। লেখকের নিতান্ত নিজস্ব কথাশৈলীতে গল্পটা গ্রামবাসীর যৌথ স্মতিচারণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়। ৮১ বছরের মফিজুদ্দিনের তার আত্মীয়স্বজনসহ হত্যা হওয়া আর তার ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার পর হতবাক সুহাসিনী গ্রামের বাসিন্দারা আস্তে আস্তে সেই জীবনের খণ্ডচিত্র জুড়িয়ে জুড়িয়ে যেন একটা বিস্তৃত দৃশ্য বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এভাবে লোকজনের সমবেত আখ্যান যা পড়ি তাতে বাস্তব এবং পুরোপুরি বাস্তব হতে না-পারা উপাদান পাশাপাশি দেখতে পাই। মফিজুদ্দিনের মৃত্যুর রাতের আশ্চর্য চাঁদ তার হস্তরেখার সঙ্গে মিলিয়ে গ্রামের প্রাক্তন নাপিত সেই মৃত্যুতে জ্যোতিষশাস্ত্রের বিধানের প্রতিফলন দেখে। বউকে পেতে মফিজুদ্দিন এক জিনের কল্পনা কাজে লাগায়; কিন্তু পরে দেখি ওই জিনের অস্তিত্ব ও নিজেও সমর্থন করে এবং বেশ্যা নয়নতারা যেভাবে কামসূত্রের অভ্যাসে নৌকায় মফিজুদ্দিনের অপহরণকারীদের শেষ করে দেয়, সেটা এত অদ্ভুত যে মার্কেসের কিছু চরিত্রের সঙ্গে খুব সহজেই তুলনা করা চলে। ইলিয়াসের মোটামুটি সমসাময়িক লেখক শহীদুল জহিরের লেখা এবং বিশেষ করে তাঁর ১৯৯৫-তে প্রকাশিত সে রাতে পূর্ণিমা ছিল উপন্যাসটি অনেকের কাছে খুব ব্যতিক্রমী সাহিত্যকীর্তি বলে ঠেকেছে আর আমিও তা-ই মনে করি।
২০১৪ সালে প্রকাশিত আরেকটি উপন্যাসের উল্লেখ করে এই ছোট উদাহরণমালা সমাপ্ত করব। এই সংক্ষিপ্ত উপন্যাসে আমরা পাই রূপকথার চিত্রকল্প, রাজনৈতিক রূপক, অ্যাবসার্ড নাটক আর পরাবাস্তবতার এমন একটা সংমিশ্রণ, যেটা অনেক সময় আমাদের জাদুবাস্তবের দিকেও নিয়ে যায়। মুখ্য পাত্রের চে নামের ইঙ্গিত নিশ্চয় চে গুয়েভারার দিকে, যদিও এই ইঙ্গিতটা অনেকটা ঝাপসা আর অনির্দিষ্ট রয়ে যায়। এ উপন্যাসটি যত সংক্ষিপ্ত তাতে কথিত ঘটনা ততই বেশি, যার ফলে তার সারমর্ম দেওয়া ভার। চের কাজ হচ্ছে দরজায় টোকা দেওয়া, আর ও এমন একটা দরজা পায় একজন ভিখিরির চোখে। ওই চোখে ঢুকেই চে যে অদ্ভুত দেশে প্রবেশ করে তার স্বৈরাচারী রাজার সঙ্গে সে নানা কৌশলে সংগ্রাম করে। শেষ পর্যন্ত ওই দেশে একটা বিপ্লব এনে সে আবার সেই ভিখিরির চোখ দিয়ে বেরোয় এবং ওয়াশিংটনের বাস ধরে রওনা হয়। এমন ঘটেছে বর্ধমানের লেখক অংশুমান করের চে ও কলাবতী নামের উপন্যাসে।
৩. দক্ষিণ এশিয়ার প্রসঙ্গে
গদ্য সাহিত্যের সাম্প্রতিক এই প্রবৃত্তি দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখতে গেলেই গুরুত্ববাহী বলে মনে হয়। কারণ উর্দু, হিন্দি বা বাংলা সাহিত্য যা-ই বলি, মোটামুটিভাবে বিংশ শতকের সবচেয়ে প্রভাবসঞ্চারী গদ্যরীতি হলো বাস্তববাদ। কিছু ক্ষেত্রে এই বাস্তববাদের বামপন্থী প্রকরণ সোভিয়েত রাশিয়ার ‘সামাজিক বাস্তববাদ’ঘেঁষাও ছিল। বাস্তববাদের উত্থান আর আধিপত্য ঔপনিবেশিক আমল থেকে চলে এসেছে এবং সেটা উনিশ শতকে উপন্যাস ধারার আগমনের সঙ্গে অনেকটা যুক্ত। হিন্দি আর উর্দু সাহিত্যের গবেষক ফ্রানচেসকা অরসিনি দেখিয়েছেন যে প্রথম দিকের উপন্যাসের মাপকাঠি এই ছিল যে লেখকেরা বাস্তব আর বিশ্বাসযোগ্য চরিত্র চিত্রণে সক্ষম ছিলেন, নাকি শুধু চিরাচরিত লক্ষণবিশিষ্ট নায়ক-খলনায়কের সৃষ্টিতেই সীমাবদ্ধ থাকতেন। দেবকীনন্দন খত্রির তথাকথিত ‘তিলিসমি উপন্যাস’ অথবা উর্দুর দাস্তান মাঝেমধ্যে অতিপ্রাকৃত উপাদান ব্যবহার করলেও বিশ শতকে ঢুকতে-ঢুকতে সেসব ধারাও হয় নতুন বাস্তববাদী প্যারাডাইমের কাছে পরাজয় মানে, না হয় পুরোপুরি লোকসাহিত্য বা বাজারি সাহিত্যে পর্যবসিত হয়।
এর ফলে বাংলা সাহিত্যেও অতিপ্রাকৃত ঘটনার বর্ণন অনেকটা সন্দিগ্ধ হয়ে ওঠে। সমসাময়িক কিছু সমালোচকের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ-এর মহাপুরুষটি ঠিক মানানসই লাগেনি। অতিপ্রাকৃত যেখানে প্রকট হয়, সেখানে সাধারণত স্বপ্ন বা মায়ার রূপে হয় এবং তাতে তার বাস্তবিক হওয়ার দাবি ক্ষীণ হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের কঙ্কাবতীর মতো রূপকথাভিত্তিক উপন্যাসে আমরা দেখছি যে অতিপ্রাকৃত অংশটা আখ্যানের শেষে সম্পূর্ণভাবে স্বপ্ন বলে চিহ্নিত হয়, নইলে এমন সব কল্পনা তথাকথিত ‘অনুচ্চ মানের’ সাহিত্যের শাখা-প্রশাখায় ছড়িয়ে পড়ে, যেমন-শিশুসাহিত্য, রূপকথা, ভূতের গল্প, ব্যঙ্গ-কৌতুকী রচনায় ইত্যাদি।
আবার বিশ শতকের মাঝামাঝির দিকে প্রগ্রেসিভ রাইটারস অ্যাসোসিয়েশন বা প্রগতিবাদের মতো সমাজবাদী সাহিত্যিক আন্দোলনও সাহিত্যের মূল স্রোত থেকে অতিপ্রাকৃতের নির্বাসনে পৃষ্ঠপোষকতা জোগায়। পরে এই দৃশ্যটা জাদুবাস্তবের অভ্যর্থনার সূত্রে পাল্টে যায় এবং গদ্য সাহিত্যে সৌন্দর্যতাত্ত্বিক দিক দিয়ে একটা মৌলিক পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হয়। আমার বর্তমান প্রাথমিক গবেষণা অনুসারে এই অভ্যর্থনা তিনটি আলাদা রাস্তায় সাধিত হয়েছে: ১. আন্তর্জাতিক, প্রধানত লাতিন আমেরিকান লেখার ইংরেজি অনুবাদ, ২. এমন লেখার সরাসরি বাংলা অনুবাদ, ৩. রুশদির মতো উপমহাদেশের ইংরেজি লেখার মাধ্যমে। এই অভ্যর্থনার কাহিনি বলতে গেলে বাংলা বইয়ের বাজারে নানা সম্পাদনার যে ইতিহাস দেখা দরকার, সেটা আজ পাশে রেখে দিয়ে আমি আমার কথার শেষ দিকে আরেকটা প্রশ্ন নিয়ে একটু মাথা ঘামাতে চাই। এই প্রশ্ন হলো যে বাংলার লেখক আর সমালোচক বাংলা সাহিত্যে জাদুবাস্তবের আগমন কেমনভাবে দেখে? বাংলা গদ্য সাহিত্যে জাদুবাস্তবের ইতিহাস, অবস্থান আর তাৎপর্য কী? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমি সম্প্রতি বের হওয়া দুটি বাংলা প্রবন্ধ আলোচনা করতে চাই। প্রথমটি মলয় রায়চৌধুরীর গত বছরে দমদম জংশন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘আমার জাদুবাস্তব’ শিরোনামধারী প্রবন্ধ। মলয় রায়চৌধুরী (১৯৩৯) কলকাতার হাংরি জেনারেশনের লেখকগোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি এবং অনেকের মতে প্রতিষ্ঠাতাও। হাংরিরা বিটনিক সাহিত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত বলে আমরা জানি; কিন্তু এই প্রবন্ধে মলয় জাদুবাস্তবেরও প্রভাব জানিয়েছেন। পাটনায় তাঁর ছোটবেলার জীবনযাপনের বিবরণ দিয়ে তিনি পাড়ার লোকদের সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন যে, ‘এনাদের কারোর কাছেই সময় রৈখিক ছিল না [...]’: ‘ইউরোপের বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ ঢোকেনি তখনও পাড়ার জনমানসে, মন্ডল কমিশনও হয়নি। তারা যা বিশ্বাস করত তা ছিল সন্দেহের অতীত, প্রশ্নাতীত। বাস্তববাদী অথবা জাগতিক পরিবেশে তারা অবাস্তব বা ঐন্দ্রজালিক উপাদানকে মনে করত স্বাভাবিক।’ [২২৯] এক কথায়, ‘আমার শৈশব কেটেছে এমন ঐন্দ্রজালিক পরিবেশে।’ [২৩০] এই দুনিয়া লিপিবদ্ধ করতে যে ভাষা দরকার তা তখনকার বাড়ির আর স্কুলের কথকদের মৌখিক ভাষার মতো। লেখক হয়ে পরাবাস্তববাদ অর্থাৎ সুরিয়ালিজম নিয়ে নানা প্রয়োগ করেছেন; কিন্তু ওটা বেশি ব্যক্তিকেন্দ্রিক বলে এমন অভিব্যক্তির ভাষা জোগাতে পারেনি। অন্যদিকে জাদুবাস্তব দক্ষিণ আমেরিকার ঔপনিবেশিক শোষণের যৌথ অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নিয়েছে। আশির দশকের শেষে রুশদি আর তারপর মার্কেস পড়ে তিনি নাকি অনেক প্রেরণা পেয়েছিলেন। [২৩৪] নানা হাংরি লেখকের এবং তাঁর নিজের লেখায়ও জাদুবাস্তবের উপাদানের আলোচনা করে শেষে এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, ‘পশ্চিমবঙ্গের জনগণের সাংস্কৃতিক চেতনায় বাস্তববোধের ভেতরেই বাস করে ঐন্দ্রজালিক উপাদানসমূহ, তা প্রতিফলিত হয় তাদের আচরণে, বিশ্বাসে, ধারণায় এবং রাজনৈতিক প্রচার, আধুনিকতা ও শহরে ও গঞ্জের প্রতিটি মোড়ের শনিমন্দির তার নিদর্শন, যার আয়োজন করেন মোড়ের রিক্সাঅলারা এবং বড়বাবার পুজোর নামে শনির যে বাৎসরিক পুজো হয় তাতে সেই পাড়ার ভিড় চোখে পড়ার মতো।’ [২৪১-২]
দ্বিতীয় প্রবন্ধটি তরুণ গবেষক শুভশ্রী দাসের লেখা। তিনি বাংলা সাহিত্যে জাদুবাস্তব নিয়ে কাজ করেন এবং দেড় বছর আগে প্রকাশিত নবারুণ ভট্টাচার্য: মনন ও দর্শন শিরোনামধারী প্রবন্ধ-সংকলনে ‘নবারুণের উপন্যাসে জাদুবাস্তবতার খোঁজ’ শীর্ষকে এ ধরনের তর্ক আরও জোরে এগিয়ে দেন। মলয় রায়চৌধুরীর মতো তিনিও মনে করেন যে ঔপনিবেশিক শাসন এই প্রকরণের মূল অভিজ্ঞতা। তার চেয়ে বেশি জোর দেন আজকের বিশ্বের দ্বিখণ্ডিতা অর্থাৎ দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ার অবস্থার ওপর: একদিকে গ্লোবাল নর্থ, আরেকদিকে গ্লোবাল সাউথ। ভারতীয় উপমহাদেশ এই দ্বিতীয় ভাগে পড়ে যায় এবং সেদিক থেকে দেখলে জাদুবাস্তববাদ হচ্ছে একটি আদর্শ সাহিত্যিক প্রকরণ:
ভারতীয় উপমহাদেশে ছিল জাদুবাস্তবের বহু উপাদান। বহুবর্ণ, বহুজাতি, বহুলোকগাথা, পুরাণ উপকথাসমৃদ্ধ, প্রায় দুশো বছরের ইংরেজ আধিপত্য ও পাশাপাশি বিশ্ব পণ্যায়নের সেরা নমুনা হয়ে ওঠা ভারতবর্ষের বাস্তবকে কুহক বাস্তবে রূপান্তরিত করলেন রুশদী। তাঁর বহুস্তরীয় ভাষার কেন্দ্রে অবস্থান করে তীক্ষ্ণ বিদ্রূপ, যা এই বিচিত্রতম, অসংগতিময় উপমহাদেশের মূল সূর। [২৪৫]
৪. উপসংহার
এই বক্তব্যগুলোতে এমন একটা অবস্থান দেখা যায়, যার লক্ষ্য হচ্ছে পাশ্চাত্য জগতের মুখোমুখি নিজের আলাদা পরিচয় বহাল রাখা। এমন ভাবধারার সময়ের মাত্রা ধরে কিছুদূর পিছু হাঁটলে হয়তোবা বহির্মুখী এবং যান্ত্রিক পাশ্চাত্য সভ্যতা বনাম অন্তর্মুখী আর আধ্যাত্মিক প্রাচ্য সভ্যতা বলে সেই উনিশ-বিশ শতকের ধারণা অবধি পৌঁছানো যাবে। এই ধারণা বঙ্কিমচন্দ্র আর বিবেকানন্দের মতো চিন্তানায়ক জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন আর তার প্রতিফলন আমরা আজকালও লক্ষ করতে পারি। বিখ্যাত হিন্দি লেখক নির্মল বর্মা তাঁর ১৯৮৯-এর ওয়ার্ড অ্যান্ড মেমরি বইটির একটা প্রবন্ধে ওটাকে বলেছেন ভারতবর্ষের ড্রিম প্রিন্সিপাল অর্থাৎ স্বপ্নবাদী নীতি বনাম ইউরোপের রিয়ালিটি প্রিন্সিপাল বাস্তববাদী নীতি। কিন্তু এই বিষয়টা বিশাল, আরও নামলে কূল পাওয়া দায় এবং আপনাদের আরেকটা আস্ত কি-নেট শুনতে হবে। তাই এসব কথা না বাড়িয়ে এটুকুই বলি যে জাদুবাস্তবের সাংস্কৃতিক মূল্যায়ন সহজে এমন পুরোনো ধারণার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো যায় এবং বোধ হয় কিছুটা খাওয়ানো হয়েওছে।
বাংলা জাদুবাস্তবের যে ব্যাখ্যাগুলো আমি একটু আগে আলোচনা করেছি, সেগুলো নিয়ে আমার একটা খটকা আছে। আমি এক শ বার মানি যে ইউরোপের উপনিবেশবাদের সঙ্গে ভারতীয় উপমহাদেশে এবং বিশ্বজুড়েই বোঝাপড়া করার দরকার ছিল এবং এখনো আছে। কিন্তু তাই বলে যে ইউরোপকে পুরোপুরি যুক্তিবাদী, বহির্মুখী, যান্ত্রিক আর একরৈখিক হতে হবে তা মেনে নেওয়া মুশকিল। ইউরোপের এমন বিশ্লেষণ একটু ভাসা-ভাসাই লাগে, ইউরোপ এখানে যেন শুধু পূর্বপক্ষের কাজে আসে। ইতিহাসে তো বটে, বর্তমান কালেও ইউরোপের ঘাড়ে অনেক ভূত চেপে রয়েছে, যাদের বাইরে থেকে একায়তনিক আর রৈখিক দেখাতে পারে কিন্তু যাদের প্রাণসত্তা বেশ জটিল।
তা ছাড়া জাদুবাস্তববাদী সাহিত্য গ্লোবাল সাউথের সাংস্কৃতিক সম্পত্তি হয়ে গেলে কাফকা, গ্রাস, বালজাক, বুজাটিদের কী হবে?
আমার মতে, জাদুবাস্তব লিখনশৈলীর ইতিহাস এ কথা প্রতিপন্ন করে যে কোনো কোনো সাহিত্যিক আন্দোলন আন্তর্জাতিক সীমানা মানে না আর এমনকি পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণও মানে না। এমন প্রকরণের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে যাওয়াটা পণ্যায়নের ফল, না সৃজনশীল একটা বিস্ফোরণ, নাকি একাধারে দুটোই, সে কথা বলা কঠিন। শুধু এ কথাই বলা যায় যে বাংলা গদ্য সাহিত্যে জাদুবাস্তববাদ নতুন প্রেরণা ও সন্দীপন এনেছে।