রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নাটক অচলায়তন মঞ্চে এনেছে নাটকের দল প্রাচ্যনাট। এ নাটকের টেক্সট বহুমাত্রিক; কাহিনিবিন্যাস ও সংলাপে বহু স্তর ও সাবটেক্সট। এর মূল সুর রুদ্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তি। সবকিছু ছাপিয়ে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা। রবীন্দ্রনাথ এ নাটকে শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত ও শিক্ষার্থী-সমাজের পাশাপাশি শোণপাংশু ও দর্ভক-সমাজকে এবং তাদের মধ্যকার পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও বৈপরীত্যকে তুলে ধরেছেন। শিক্ষার সংকটকেও তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ইঙ্গিত করেছেন এ নাটকে।
রবীন্দ্রনাটকের মঞ্চায়নে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টেক্সটকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নাটকের মূল সুরটি তাল হারিয়ে ফেলে। প্রযোজনা হয়ে পড়ে ক্লিশে ও অনাকর্ষণীয়। নির্দেশক আজাদ আবুল কালাম এ ক্ষেত্রে সফল। কোরিওগ্রাফিতে নান্দনিকভাবে স্কেটিংয়ের ব্যবহার, কোরাসে নেকাবের ব্যবহারসহ ছোট ছোট উপাদান যে তিনি মঞ্চে উপস্থাপন করেছেন, আটপৌরে মঞ্চে তা অভূতপূর্ব।
হাজার বছর ধরে চলে আসা অন্ধ রীতিনীতি ভেঙে ফেলার নাটক অচলায়তন। প্রাচ্যনাটের প্রযোজনায় যেন অন্ধ রীতিনীতি ভাঙার ধাক্কাটি আরও প্রবল হয়েছে।
এ নাটকের মঞ্চসজ্জায় চোখে পড়ার মতো আড়ম্বর আছে, তবে মনে ধরার মতো আরও গূঢ় স্থাপত্য থাকলে ভালো হতো। আলো ও সংগীত চমৎকার। সবার অভিনয় ভালো ছিল। তবে তা গতানুগতিকতার বাইরে নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চরিত্রে অভিনয় করেছেন সানজিদা প্রীতি, শাহেদ আলী, শতাব্দী ওয়াদুদ/প্রদ্যুৎ, রেজভী, চেতনা রহমান ভাষা প্রমুখ। পঞ্চক চরিত্রে প্রীতির আরও ভালো করার সুযোগ ছিল। সংলাপ প্রক্ষেপণে আরও গভীরতাবোধের পরিচয় দেওয়ার সুযোগ ছিল। আরও দু-একটি চরিত্রের ক্ষেত্রেও কথাটি প্রযোজ্য।
প্রযোজনাটিতে অন্য সব বিষয়ে যতটা নিরীক্ষা হয়েছে, অভিনয়রীতিতে তেমনটা লক্ষ করা যায়নি। পোশাক-পরিকল্পনায় আরও উদ্ভাবনী হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কারও কারও পোশাক প্রযোজনার সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।
নাটকটি শেষে পিঙ্ক ফ্লয়েডের ‘উই ডোন্ট নিড নো এডুকেশন’ গানের ব্যবহার তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথাগত শিক্ষাই সবাইকে প্রতিষ্ঠানপন্থী হিসেবে গড়ে তোলে। এই গান তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যা এ নাটকের প্রযোজনায় যুক্ত হয়ে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
অলোক বসু