সব্যসাচী হাজরার ‘প্রাইমার টু প্রেস’ প্রদর্শনীটি দেখার সুযোগ হলো। প্রদর্শনীর প্রথম দিন সব্যসাচীর নতুন বই বর্ণমালা প্রদর্শিত হয়। বইটিতে ১৮৪৯ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত বাঙালির ইতিহাসে বিদ্যালয়ে প্রথম পাঠের সবচেয়ে প্রভাবসঞ্চারী আটটি বইয়ের পর্যালোচনা রয়েছে।
সব্যসাচী হাজরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাফিক ও প্রচ্ছদশিল্পী। কিন্তু যে আবেগের সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের বিলীয়মান হরফ ও নকশার ইতিহাসের গবেষণা, নথীকরণ ও সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন; তাতে আমি বেশি অভিভূত। শিশুদের বাংলা বর্ণমালা শেখার প্রাথমিক পাঠ্যবইয়ের ব্যাপারে গত কয়েক বছরে সব্যসাচীর আগ্রহ উত্তরোত্তর বেড়েছে। এসব ক্ষীণকায় পুস্তিকার প্রভাব ছিল গভীর। শুধু হরফ বা মুদ্রণশৈলীর বিচারেই নয়; সে যুগের বিদ্যাশাস্ত্র, নকশা আর সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের নজির হিসেবেও।
কবি প্রকাশনীর আটটি পুস্তিকার এই সংকলনে সংশ্লিষ্ট তথ্যের পাশাপাশি রয়েছে সব্যসাচীর বৈশিষ্ট্যগত স্পর্শ।
প্রদর্শনীতে এই আট পুস্তিকার বিষয়াদি ছাড়াও রয়েছে বাংলা লেটারপ্রেস প্রিন্টিং দেখার প্রত্যক্ষ সুযোগ। বর্তমান মুদ্রণ ও হরফের ক্ষেত্র বিকাশে লেটারপ্রেসের ভূমিকা অমোচনীয়; তবু বাংলা মুদ্রণশিল্পের প্রযুক্তিগত ভিত্তিমূলে লেটারপ্রেসের গত দুই শতাব্দীব্যাপী অবদানের অনেকটাই এখনো অজানা। প্রদর্শনীতে সত্যিকারের লেটারপ্রেসের কার্যক্রম দেখা এবং এর প্রযুক্তি সম্পর্কে জনতে পারার অভিজ্ঞতা অসাধারণ।
লেটারপ্রেসের কারিগর হালিম হোসেনের গল্পটিও চিত্তাকর্ষক। অন্য কারিগরদের মতো তাঁরও প্রায় তিন দশক ধরে কাজ নেই। ছোট প্রেসটি বন্ধ হওয়ার জোগাড়। এই যবনিকাপাতের পরিবর্তে সব্যসাচী হাজরা চান হালিমের কাজের এক নতুন ব্র্যান্ডিং। কারুদক্ষতা আর শিল্পশৈলীর কারণে বিশ্বব্যাপী লেটারপ্রেসের প্রতি আগ্রহের যে নতুন পুনরুজ্জীবন ঘটছে, সব্যসাচীর প্রত্যাশা হালিমের কাজকে সেখানে স্থাপন করা। গ্রাফিক ডিজাইন আর বাঙালির ইতিহাসের অনুরাগী ও শিক্ষার্থীদের এ প্রদর্শনীতে যাওয়া জরুরি।
ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে প্রদর্শনীটি ৩ মে শুরু হয়েছে, চলবে ১৮ মে পর্যন্ত।
ইয়াকুব থমাস