রিপাবলিকানদেরও ডোবাচ্ছেন ট্রাম্প
আসছে নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনকে নিয়ে দুঃসংবাদ শুধু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেই নয়, তাড়া করছে রিপাবলিকান দলকেও। সাম্প্রতিক বিভিন্ন জনমত জরিপে বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেকে সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এত দিন বিষয়টিকে শুধু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একান্ত সমস্যা হিসেবে দেখা হলেও এখন আর তা দেখার সুযোগ নেই। কারণ, নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক দলের সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের দখল নিয়ে হিসাব-নিকাশ করা হলেও ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, কংগ্রেসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে চলে আসছে। এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ধরাশায়ী হলে আমেরিকার রাজনীতিতে আবার নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হবে। আর এই ইতিহাস সৃষ্টি হওয়ার যথেষ্ট ইঙ্গিত এরই মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন জনমত জরিপে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি আমেরিকার জনগণের এখনকার নেতিবাচক মনোভাব বলে দিচ্ছে, আসছে নির্বাচনে সব ক্ষেত্রেই ডেমোক্র্যাটরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। অ্যারিজোনা, কলোরাডো, মেইন ও নর্থ ক্যারোলাইনাতে হওয়া সাম্প্রতিক জনমত জরিপের তথ্য বলছে, সিনেটে ডেমোক্রেটিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমস ও সিয়েনা কলেজের করা সাম্প্রতিক জরিপের ফলাফল বলছে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটের জোরে পপুলার ভোটে হেরেও ক্যাপিটাল হিলে বসতে পেরেছিলেন ট্রাম্প, সেখানে এরই মধ্যে ক্ষয় দেখা দিয়েছে। ওই নির্বাচনে ট্রাম্পের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ছয়টি অঙ্গরাজ্যেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। শুধু পিছিয়ে পড়া বললে ভুল হবে। মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে ট্রাম্প প্রতিদ্বন্দ্বী বাইডেন থেকে জনপ্রিয়তায় দুই অঙ্কের ব্যবধানে পিছিয়ে আছেন। অ্যালাবামায় ডেমোক্র্যাট সিনেটর ডাগ জোনস তাঁর পুনর্নির্বাচনে হেরে গেলেও সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা। মন্টানায় রিপাবলিকান সিনেটর স্টিভ ডাইনেস রাজ্যের ডেমোক্র্যাট গভর্নরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে হেরে যেতে পারেন। আইওয়া ও জর্জিয়াতেও রিপাবলিকানদের যেসব আসন নিশ্চিত মনে করা হতো, এখন জনমত জরিপে তা সমান সমান দেখাচ্ছে। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, উত্তরের যে তিন অঙ্গরাজ্যে আগেরবার ট্রাম্প হিলারির থেকে ১০ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন, সেই শ্বেতাঙ্গ অধ্যুষিত অঙ্গরাজ্যেই এখন বাইডেন থেকে তিনি ২১ শতাংশ পয়েন্ট পিছিয়ে আছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসের এই জরিপের তথ্যমতে, শুধু অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে নয়। ট্রাম্প বাইডেন থেকে পিছিয়ে পড়ছেন জাতীয় পর্যায়েও। এ ক্ষেত্রে বাইডেনের প্রতি ৫০ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন। আর ট্রাম্পের পেছনে আছেন ৩৬ শতাংশ ভোটার। এ হিসাব অক্ষুণ্ন থাকলে আসন্ন নির্বাচনে প্রয়োজনের তুলনায় ঢের বেশি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন জো বাইডেন।
মোটাদাগে বিভিন্ন জরিপকারী সংস্থার ফলকে বিবেচনায় নিলে বলতেই হবে যে, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তায় এক বিরাট ধস নেমেছে গেল কয়েক মাসে। যেকোনো জনমত জরিপে তাঁর প্রতি সমর্থনের হার এখন ৪০ শতাংশের নিচে। নির্বাচনের বছরের মাঝামাঝি এসে এমন অবস্থান আর যা-ই হোক পুনর্নির্বাচনের জন্য সহায়ক নয়। এর আগে এমন পর্যায়ে এমন সমর্থন পাওয়া দুই প্রেসিডেন্ট এইচ ডব্লিউ বুশ ও জিমি কার্টার কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।
মুশকিল হচ্ছে এটা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলেও এর সঙ্গে সঙ্গেই আইনসভার উচ্চ ও নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বদলে যেতে পারে। আর এমন এক নির্বাচনকে সামনে রেখে মূল সেনাপতির জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া মানে দলের জনপ্রিয়তার পালেই বাতাস কমে যাওয়া। ফলে ট্রাম্প জনপ্রিয়তা হারানো মানে সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যগুলোতে রিপাবলিকান দলেরও পিছিয়ে পড়া। এর প্রভাবে বিপরীত পক্ষ উজ্জীবিত হয় এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
ডেমোক্রেটিক দলের পক্ষ থেকে ব্যাপক অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের একটাই লক্ষ্য এখন, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জনউৎসাহ ধরে রাখা এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া। কানসাস, সাউথ ক্যারোলাইনা ও কেন্টাকিতে ডেমোক্রেটিক দলের চেয়ে এখনো রিপাবলিকান প্রার্থীদের ভিত্তি অনেক সবল। জনমত জরিপেও সেখানে রিপাবলিকান দলের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন। রিপাবলিকান দলের সিনেট নির্বাচনের প্রচার শিবিরের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যম ‘দ্য হিল’-কে বলেছেন, ‘আমরা এখন বেশ খারাপ অবস্থায়ই আছি। যদি পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় না নেয়, কলোরাডোতে সিনেটর কোরি গার্ডনার ও অ্যারিজোনাতে সিনেটর মার্থা ম্যাকসেলি তো হারছেনই। মেইন অঙ্গরাজ্যে সিনেটর সুজান কলিনস এবং নর্থ ক্যারোলাইনার সিনেটর টম টিলিসও রিপাবলিকান দলকে সিনেট নির্বাচনে হারাতে পারে।’
রিপাবলিকান দল থেকে অবশ্য প্রকাশ্যে বলা হচ্ছে, তারা এ বছরের নির্বাচনে আত্মরক্ষামূলক প্রচার চালাচ্ছেন। ফলে জনমত জরিপে না দেখালেও নভেম্বরের ফলাফল ততটা নাজুক হবে না। এবারের নির্বাচনে ২০ জন রিপাবলিকান সিনেটরকে পুনর্নির্বাচন মোকাবিলা করতে হচ্ছে। মার্কিন কংগ্রেসের সিনেটে এখন ৫৩- ৪৭ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রিপাবলিকান দলের। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য ডেমোক্র্যাটদের চারটি আসন দখল করাই যথেষ্ট। নির্বাচনের আর তিন মাসের কিছু বেশি বাকি। এর মধ্যেই ডেমোক্র্যাট সমর্থকেরা মনে করছেন, তাঁদের পক্ষে সিনেট দখল করা এবারে সহজই হয়ে উঠেছে।
আগামী তিন মাসে আমেরিকার রাজনৈতিক মাঠের কতটা পরিবর্তন আসবে, এ নিয়ে কেউ নিশ্চিত নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় দফা নির্বাচিত হতে না পারেন, তা যেমন ইতিহাস হয়ে থাকবে। তেমনি ক্ষমতায় থাকা রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্টের সময়ে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ হারানোটাও আরেকটি ইতিহাস হয়ে থাকবে। কংগ্রেসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলেও পরের চার বছর ওয়াশিংটনের উত্তেজনা অন্য মাত্রা পাবে বলেই মনে করছেন মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।