বিক্ষোভকারীদের সমর্থনে সাবেক চার মার্কিন প্রেসিডেন্ট
পুলিশের হাতে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদ ও সামাজিক সাম্যের দাবিতে সপ্তম দিনের মতো নিউইয়র্কসহ আমেরিকার সর্বত্র বিক্ষোভ চলছে। সবখানে পুলিশের কড়া অবস্থান লক্ষ করা গেছে। এদিকে আমেরিকাজুড়ে চলমান বিক্ষোভ এবং আন্দোলনকারীদের সমর্থন জানিয়েছেন সাবেক চার মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তাঁরা হলেন বারাক ওবামা, জিমি কার্টার, বিল ক্লিনটন ও জর্জ ডব্লিউ বুশ।
বারাক ওবামা দেশজুড়ে আন্দোলনকারীদের ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ৩ জুন জুম প্রযুক্তিতে আয়োজিত এক টাউন হল সভায় ওবামা আফ্রিকান-আমেরিকানদের প্রতি ক্ষুব্ধ হলেও আশাবাদী থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার বলেছেন, নীরবতাও সহিংসতা থেকে আত্মঘাতী হয়ে উঠতে পারে। ক্ষমতা, সুবিধাজনক অবস্থা আর নৈতিক সচেতনতা ঊর্ধ্বে তুলে ধরে বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগে গত ৩০ মে সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ক্ষোভ, হতাশা ও পরিবর্তিত মানসিকতার কথা উল্লেখ করে বলেন, জর্জ ফ্লয়েডের মতো মৃত্যু কারও কাম্য নয়। সত্যি কথা হলো, সাদা চামড়ার হলে এমন মৃত্যুর সম্ভাবনা কম।
ডেমোক্রেটিক দলের সাবেক তিনজন প্রেসিডেন্টই শুধু নন, সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ও সাবেক ফার্স্ট লেডি লরা বুশ ফ্লয়েডকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধে হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে আমেরিকায় দমন-পীড়নের ব্যাপারেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জর্জ ফ্লয়েড হত্যার বেশ কয়েক দিন পর প্রতিক্রিয়া জানানোর ব্যাপারে বুশ বলেছেন, এখন বক্তৃতা দেওয়ার সময় নয়, এখন সময় কথা শোনার। যারা আফ্রিকান-আমেরিকান তরুণকে টার্গেট করে হত্যা করেছে, বুশ তাদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে যাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করছেন, তাঁদের সমর্থনও দিয়েছেন।
এদিকে আমেরিকার মিনেপোলিসে জর্জ ফ্লয়েড হত্যার সঙ্গে জড়িত পুলিশের চার কর্মকর্তার নামেই হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের এমন অভিযোগে আদালতে তাঁদের ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। জর্জ ফ্লয়েড হত্যার এক সপ্তাহের বেশি সময় পরে আমেরিকাজুড়ে উত্তাল আন্দোলনের মুখে ৩ জুন তাঁদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হলো।
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক আফ্রিকান-আমেরিকানকে গত ২৫ মে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নির্যাতন করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন। এতে সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিও ফুটেজে চাওভিন ফেঁসে যান। সেখানে দেখা যায়, গলায় হাঁটু চেপে ধরায় ফ্লয়েড নিশ্বাস না নিতে পেরে কাতরাচ্ছেন এবং বারবার চাওভিনকে বলছেন, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছি না।’ ভিডিওটি ভাইরাল হলে চাওভিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। মিনেসোটা থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ এখন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো আমেরিকায়।
আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টরা সাধারণত কোনো রাজনৈতিক কোলাহল এড়িয়ে চলেন। আমেরিকার ক্ষুব্ধ মানুষের দাবি আজ এতই বিরাট হয়ে উঠেছে, সাবেক এ রাষ্ট্রনায়কেরাও চুপ থাকতে পারেননি। সাম্প্রতিক ইতিহাসের এসব মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রত্যেকেই নিজ নিজ সময়ে আমেরিকায় পুলিশি বিদ্বেষ, সহিংসতার ক্ষোভ মোকাবিলা করেছেন। হয়তো ফিরে দেখছেন বৈষম্যের অবসানে নিজেদের ব্যর্থতার ইশতেহার।
মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। কৃষ্ণাঙ্গ এ মানবাধিকার নেতার চেতনাকে আজও ধারণ করে আমেরিকার সভ্য সমাজ। জর্জ ফ্লয়েড হত্যায় আমেরিকার মানুষ নীরব থাকেননি। প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এ প্রতিবাদের ঢেউ আজ আমেরিকার বাইরের সভ্য দুনিয়ায় ছড়িয়ে গেছে। সর্বত্র উচ্চারিত হচ্ছে বৈষম্য আর বর্ণবাদের বিরুদ্ধে মানুষের জেগে ওঠার আহ্বান। আমেরিকায় কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে আত্মাহুতি দেওয়া মার্টিন লুথার কিং উচ্চারিত হচ্ছেন দ্রোহের প্রতিটি মিছিলে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে। সেনা মোতায়েনের নির্দেশ নিয়ে সমালোচনায় পড়া ট্রাম্প জনতার ক্ষোভ প্রশমনের জন্য কিছুই করছেন না। তিনি নিজের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের জন্য অতীতের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে তিনিই বেশি কাজ করেছেন। ‘সম্ভবত’ আব্রাহাম লিংকন এর ব্যতিক্রম হতে পারেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
হোয়াইট হাউসের সামনে উত্তাল বিক্ষোভের মুখে গত ২৯ মে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাঙ্কারে রাত কাটিয়েছেন, এমন সংবাদ ভুয়া বলে তিনি উল্লেখ করেন। আমেরিকার সব প্রধান সংবাদমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, হোয়াইট হাউসের নিচে বাঙ্কারটি তিনি পরিদর্শনের জন্য গিয়েছিলেন। তাও খুব অল্প সময়ের জন্য।