নিউইয়র্কের নীরবতা ভাঙছে
এক দিন আগেই ছিল সারা দিন থেমে থেমে বৃষ্টি। আর ২ এপ্রিল সকাল থেকেই নিউইয়র্কের আকাশে ঝকঝকে রোদের হাসি। রোদেলা এই দিনটিকে সেলিব্রেট করতে লকডাউনের নিয়ম ভেঙে অনেকেই নেমে এসেছিলেন পথে। পোস্ট অফিস, সুপারমার্কেট, গ্রোসারি শপ ও রেস্টুরেন্টসহ সবখানেই ছিল মানুষের লম্বা লাইন। মূলত দীর্ঘ লকডাউনের একঘেয়েমি কাটাতেই বাইরে এসেছিল নিউইয়র্কের মানুষ।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে নিউইয়র্কে প্রায় দুই শ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এখনো প্রতিদিন কারও না কারও মৃত্যু হচ্ছে। কমিউনিটিতে শোকের ছায়া। তারপরও একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা। জেগে উঠছেন, নতুন করে জীবনের অঙ্ক কষছেন তাঁরা।
নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশির বাস। করোনায় সংক্রমিত হয়ে এখানে অনেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এলাকায় বাংলাদেশিদের বড় ব্যবসাকেন্দ্র ‘বাংলাবাজারে’ এত দিন ছিল সুনসান নীরবতা। করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বাংলাবাজার বিজনেস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট গিয়াস উদ্দীনের। এই শোক কাটিয়ে দোকানপাটগুলো এখন আস্তে আস্তে খুলতে শুরু করেছে। বিপণিবিতানের শুরুর দোকানটি ছিল প্রয়াত গিয়াস উদ্দীনের ‘ডাবল ডিসকাউন্ট’ স্টোর। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এখন খুলেছে দোকানটি। তাঁর বড় ছেলে আমিন উদ্দীন দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে জানালেন, বাড়িতে শোকের রেশ এখনো কাটেনি। এরপরও জীবনের তাগিদে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে দোকান খুলতে হয়েছে।
ডাবল ডিসকাউন্টের ঠিক উল্টো দিকে সৈয়দ আল ওয়াহিদ নাজিমের ফ্রেন্ডস গ্রোসারি। তিনি নিজেও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে আবার দোকান খুলেছেন। তাঁর দোকানের বাইরে অনেক ফুল ও ফলের চারাও বিক্রি হচ্ছে। মানিকগঞ্জের শেফালী বেগম অনেকগুলো সবজির চারা কিনেছেন। তিনি বলেন, সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। করোনার ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর চলবে না। যদি করোনাজয়ী হয়ে বেঁচে থাকি, সে জন্যই আগাম প্রস্তুতি।
গাছের চারা কিনতে এসেছিলেন মৌলভীবাজারের জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, লকডাউনে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গেছি। তাই বাগানের কাজে হাত দিয়েছি। এতে এক্সারসাইজও হয়ে যায়।
সাবেক স্কুলশিক্ষক মুকিত চৌধুরীর শখ বাগান করা। করোনার ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে তিনিও অনেকগুলো ফুলের চারা কিনেছেন।
ঝকঝকে রোদের দিনে মানুষ শুধু আশপাশে নয়, পার্কেও ঘুরতে গিয়েছিল। পার্কচেস্টারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ওভাল পার্ক। এখানে বাংলাদেশিরা পরিবারের বয়স্ক ও শিশুদের নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। শুধু ব্রঙ্কস নয়, এই রোদেলা দিনে বাঙালিরা ছুটে গিয়েছিলেন করোনাভীতি উপেক্ষা করে মানহাটনের সেন্ট্রাল পার্কসহ নগরীর অন্যান্য পার্কে অনেকটা মুক্তির আনন্দ নিয়েই। করোনা তাঁদের অনেক স্বজনকে নিয়ে গেলেও শোককে শক্তিতে পরিণত করে তাঁরা আবার ক্রমেই জেগে উঠছেন।