করোনাজয়ী এলি মানুষের জীবন বাঁচাতে আবার ছুটবেন
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন ইউনাইটেড হাটজালাহ অব ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা ও আমেরিকাভিত্তিক সংস্থা ফ্রেন্ডস অব ইউনাইটেড হাটজালাহর সভাপতি এলি বিয়ার (৪৬)। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবার কাজ করতে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছিলেন তিনি।
ইসরায়েলের যেকোনো স্থানে জরুরি চিকিৎসা সেবার সংবাদ পেলেই এলি বিয়ারের প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড হাটজালাহ অব ইসরায়েলের সেচ্ছাসেবীরা ছুটে যান সেখানে। এটি একটি স্বাধীন এবং সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক জরুরি চিকিৎসাসেবা প্রদান করে বিনা মূল্যে। সেচ্ছাসেবীদের নিয়ে গঠিত জরুরি চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত এ প্রতিষ্ঠান সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
আমেরিকায় করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার আগেই এলি বিয়ার আমেরিকার বেশ কয়েকটি জায়গায় কনফারেন্স ও তহবিল সংগ্রহের জন্য ইসরায়েল থেকে আমেরিকায় আসেন। ফ্লোরিডায় অবস্থানকালে হঠাৎ করেই তিনি শারীরিক অসুস্থতা বোধ করেন। শুরুতে চিকিৎসক তাঁকে গলা ব্যথার ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারেন, নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না, তাঁর পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে এলিকে ফ্লোরিডার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তিনি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত বলে নিশ্চিত হওয়া যায়৷
জেরুসালেম পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এলি জানান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর চিকিৎসকেরা বুকের এক্স-রে করেছিলেন। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তৎক্ষণাৎ তাঁরা আমাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে স্থানান্তর করেন।
করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে এলির পৃথিবী কালো হয়ে আসার আগে তিনি পরিবার ও বিশ্বজুড়ে অগণিত ভক্তদের কাছে দোয়া চেয়ে একটি বার্তা দিয়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার অবস্থা গুরুতর হয়ে আসছে, আমি আর নিশ্বাস নিতে পারছি না। যেকোনো সময় আমি চলে যেতে পারি, আমি নিশ্চিত আমি আর তোমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারব না। তোমরা আমার জন্য দোয়া করো।’
এরপর প্রায় ১৮ দিন এলি কোমায় ছিলেন। ১৮ দিন পর যখন কোমা থেকে ফিরে কিছুটা বুঝতে পারেন তাঁর শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতির দিকে। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। দ্বিতীয় দফায় আবারও ১২ দিন কোমায় থাকতে হয় তাঁকে। এরপর থেকে এলির শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হতে থাকে।
এলি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, কোমা থেকে কীভাবে ফিরে আসলাম। আমি নতুন জীবন পেয়েছি। নিজেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর মতো মনে হচ্ছে। এ অনুভূতি বলে বোঝানো সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, এ ভাইরাস সাধারণ ফ্লু থেকে ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী। এ ভাইরাস সরাসরি ফুসফুসে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ করে দেয় এবং শরীরে যত রকম ধবংসযজ্ঞ চালানো যায় এর সবকিছুই এ ভাইরাস করে থাকে।
প্রায় ছয় সপ্তাহের মতো হাসপাতালে থাকার পর পরিবার, দেশ থেকে যোজন যোজন মাইল দূরে এক অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে অবশেষে এলি বিয়ার মিরিয়াম এডেলসনের ব্যক্তিগত জেটে করে ২১ এপ্রিল ইসরায়েলে ফিরে যান। দেশে ফিরে তিনি জানান, ‘বেশ কয়েক সপ্তাহ আমি নিজের জীবন নিয়ে লড়াই করেছি। এখন আমি আবার মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য আমার পরিবার, আমার কর্মী, আমার দেশে ফিরে এসেছি।’
দেশে ফেরার পর এলির প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকেরা শত শত অ্যাম্বুলেন্স সারি করে তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু এক টুইট বার্তায় জানান, ‘এলি আমাদের হিরো, আমরা সবাই খুবই খুশি যে সে মৃত্যুকে পরাজিত করে আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে৷’