করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিউইয়র্কে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা ৫০০ জনের নিচে নেমে এসেছে। এটাই এ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন মৃত্যু সংখ্যার রেকর্ড। শিগগির রাজ্যের সব কিছু খুলে দিতে এবং ভাইরাস শনাক্ত করতে নিউইয়র্কে আগ্রাসী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ২০ এপ্রিল মৃত্যুর মিছিলে আরও ৪ বাংলাদেশির নাম যোগ হয়েছে। তাঁরা হলেন-সমীর দেবনাথ, সাইফুল খান বাবুল, শওকত হাসান সুয়েব ও মুনা নাসরিন। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় ১৭৮ বাংলাদেশির মৃত্যু হলো। তবে লকডাউনের সীমাবন্ধতার কারণে তথ্য সংগ্রহে সমস্যা হওয়ায় এ সংখ্যার কিছুটা তারতম্য হতে পারে।
রাজ্য গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, এখন ফেডারেল অর্থ সাহায্য জরুরি। তিনি ২১ এপ্রিল ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করবেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রতিদিনের করোনাভাইরাস নিয়ে ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন। ট্রাম্প বলেন, নিউইয়র্কে অনেক ভালো কিছুই ঘটছে। গভর্নর কুমো তাঁর কিছু লোক নিয়ে ২১ এপ্রিল হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসবেন। তিনি এ বৈঠকের জন্য মুখিয়ে আছেন।
এদিকে নিউইয়র্কের নার্স ইউনিয়ন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগ ও দুটি হাসপাতালের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। মহামারির এ সময়ে স্বাস্থ্য ও তাঁদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার জন্য তাঁরা এ মামলা দায়ের করেন। নগরীর মেয়র সমকামীদের প্যারেডসহ জুন মাস পর্যন্ত নগরীর সব প্যারেড সমাবেশ বাতিল করার নির্দেশ জারি করেছেন।
আমেরিকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা দেওয়ার জন্য ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে ওয়াশিংটনে আইনপ্রণেতারা একমত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ সপ্তাহের মধ্যে এমন একটি প্রণোদনা প্যাকেজ অনুমোদন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
অ্যান্ড্রু কুমো ২০ এপ্রিল জানান, নিউইয়র্কের হাসপাতালে ভর্তির হার ক্রমাগত কমছে। নতুন ১ হাজার ৩৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে এখন আছেন মোট ১৬ হাজার ১০৩ জন। ২০ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত নিউইয়র্কে ৪৭৮ জনের নাম মৃত্যুর তালিকায় যুক্ত হয়েছে।
রাজ্য গভর্নর জানিয়েছেন, হাসপাতালগুলোর ইমার্জেন্সি কক্ষে এখনো উপচে পড়া অবস্থা। যদিও আগের অবস্থা থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নগরীর সামনের সারির কর্মজীবীদের মূল মজুরির অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা দেওয়ার তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। এমটিএ, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ডেলিভারি সার্ভিস ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মতো কর্মজীবীরা এ ভাতা পাওয়ার দাবিদার বলে জানিয়েছেন তিনি।
গভর্নর আরও জানিয়েছেন, নিউইয়র্কের পাবলিক হাউজিংগুলোতে 'অন সাইট' করোনাভাইরাস টেস্টিং করা হবে। সরকারি আবাসনে থাকা লোকজনই ভাইরাস আক্রান্তের শিকার হয়েছে বেশি। সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে এসব সরকারি আবাসন কমপ্লেক্সে ব্যাপকভাবে টেস্টিং সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৮ হাজার ৯২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৯৪ জন। এদিকে নতুন প্রজেকশনে দেখা যাচ্ছে, জুনের প্রথম দিকে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি এবং কানেকটিকাটসহ অঙ্গরাজ্যের লকডাউন আদেশ শিথিল হতে পারে।
প্রবাসী বহুল মিশিগান থেকে ফারজানা চৌধুরী জানিয়েছেন, ভাইরাস মোকাবিলায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নয়, মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমারের পক্ষে রাজ্যের বেশিরভাগ বাসিন্দা। ২০ এপ্রিল প্রকাশিত ডেট্রয়েট রিজিওনাল চেম্বারের পক্ষে করা একটি জরিপে এই ফল পাওয়া গেছে।
৬০০ বাসিন্দার মধ্যে পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, শতকরা ৫৭ ভাগই কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় গভর্নরের নেওয়া সিদ্ধান্তকে সমর্থন দিয়েছেন। আর অনুমোদন দেননি ৩৭ ভাগ মানুষ। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত স্টে হোমের মেয়াদ বাড়ানোর প্রতিবাদে রাজ্যের রাজধানী ল্যান্সিংয়ে ৪ হাজারের বেশি মানুষ প্রতিবাদ জানায়। তাঁরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান। এরই মধ্যে এই জরিপের ফল পাওয়া গেল। ৪৪ শতাংশ জনগণ ট্রাম্পের কোভিড-১৯ সংকট পরিচালনায় অনুমোদন দিয়েছেন এবং ৫০ ভাগ মানুষ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতকে সমর্থন করেননি।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাসে মিশিগান স্টেটের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার এবং মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৪৬৮জনের। ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪২ হাজার ৫১৮ জনের, আক্ৰান্ত হয়েছেন ৭ লাখ ৯২ হাজার ৯৩৮জন।