করোনায় আমেরিকায় আরও ৩ জনসহ ১৫০ বাংলাদেশির মৃত্যু

কোবল হিল হেলথ সেন্টার নার্সিং হোমে ইমারজেন্সি মেডিকেল টেকনিশিয়ানদের করোনা প্রতিরোধে সহায়তা করে এসে নিজেরা জীবাণুনাশক ব্যবহার করছেন নিউইয়র্ক ফায়ার ডিপাটমেন্টের কর্মীরা। ১৭ এপ্রিল, ব্রুকলিন বরো। ছবি: রয়টার্স
কোবল হিল হেলথ সেন্টার নার্সিং হোমে ইমারজেন্সি মেডিকেল টেকনিশিয়ানদের করোনা প্রতিরোধে সহায়তা করে এসে নিজেরা জীবাণুনাশক ব্যবহার করছেন নিউইয়র্ক ফায়ার ডিপাটমেন্টের কর্মীরা। ১৭ এপ্রিল, ব্রুকলিন বরো। ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকায় মৃত্যুর তালিকায় ১৭ এপ্রিল আরও তিন বাংলাদেশির নাম যোগ হয়েছে। তাঁরা হলেন-নাহিদ সুলতানা (৫৮), আবিদুল হক মুন্সী (৫৫) ও শাহ আলম তালুকদার (৪২)। এ নিয়ে আমেরিকায় করোনাভাইরাসে মোট ১৫০ বাংলাদেশির মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সবচেয়ে বেশি বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে আমেরিকায়। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর এই রাষ্ট্রটি করোনার কাছে এখন সবচেয়ে বেশি নাজেহালের শিকার। সেখানে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের দিক দিয়ে আমেরিকার ধারে-কাছেও নেই অন্য রাষ্ট্রগুলো। একদিকে করোনাভাইরাস ঠেকানো ও অন্যদিকে পুরো দেশ লকডাউনের ফলে অর্থনৈতিক বাস্তবতা সামাল দেওয়ার সংকট দেশটিতে প্রকট হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে নাজুক নিউইয়র্ক রাজ্যের অবস্থা ধীরগতিতে হলেও উন্নতির দিকে। এমন আশাবাদের কথাই উচ্চারিত হচ্ছে এখন।

নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও জানিয়েছেন, নগরীতে এখন কোনো ধরনের সভা সমাবেশ বা প্যারেড করার অনুমতি দেওয়া হবে না। আগামী ১৫ মে পর্যন্ত রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা বলবৎ আছে। নিউইয়র্ক নগরীর তথ্য সহযোগিতার জন্য ৩১১ নম্বরে কলের আধিক্য আকাশচুম্বী। করোনার আগে দিনে ৫৫ হাজারের মতো কল সামাল দিয়েছে এ নগরীর ফোন সিস্টেম। এখন দিনে দুই লাখ ফোন আসছে নানা তথ্য সহযোগিতা চেয়ে।

মেয়র জানিয়েছেন, নগরীতে আরও ১২০টি নতুন কল সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। জরুরি খাদ্য সহযোগিতা চেয়ে বা যেকোনো তথ্য চেয়ে ফোন করা যাচ্ছে এ নম্বরে। নগরীর কোথাও সামাজিক দূরত্ব কেউ না মানলে ৩১১-৬৯২ তে ফোন করে ছবি পাঠানো যাবে। এ ছাড়া অ্যাপ ডাউনলোড করেও নগরীর জরুরি এ সেবা সংযোগকে ব্যবহার করা যাবে। নগরীর সব বরোতে করোনা পরীক্ষাকেন্দ্র খোলা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমছে। যদিও পরীক্ষা করানোর পর নতুন আক্রান্ত সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে এখনো। ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কঠোরভাবে পালনের জন্য চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত নিউইয়র্ক নগরীতেই কেবল ১১ হাজার ৪৭৭ জনের মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়েছে। এক লাখ ১৭ হাজার ৫৬৫ জন এখন চিহ্নিত আক্রান্ত করোনা রোগী।

১৭ এপ্রিল নিউইয়র্ক রাজ্যে মৃত্যুর তালিকায় নতুন ৬৩০ জনের নাম যুক্ত হয়েছে। এ রাজ্যে এখন মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৮২২ জনে। রাজ্যে দুই লাখ ২২ হাজার মানুষের করোনা পজিটিভ হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে।

গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জানিয়েছেন, অস্বীকার করার উপায় নেই এখন হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমছে। আইসিউ ইউনিটে স্থানান্তরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা কমছে। এ পরিস্থিতিকে উন্নতি হিসেবে উল্লেখ করে গভর্নর বলেছেন, মহামারী পরিস্থিতি চলে গেছে বলার সুযোগ নেই। দিনে ১৮ হাজারের পরিবর্তে এখন ১৭ হাজার করে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন করোনা নিয়ে। নিউইয়র্ক নগরীসহ রাজ্যের সবখানে দ্রুত করোনা টেস্টিং সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

গভর্নর কুমো এক নির্বাহী আদেশে সব সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিককে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতা নিয়ে করোনা টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাজ্য গভর্নর আবারও বলেছেন , এটা একা সামাল দেওয়া যাবে না। তিনি ফেডারেল সাহায্যের আবেদন জানিয়ে বলেছেন, যেখানে বেশি প্রয়োজন যেখানে দ্রুত বর্ধিত অর্থ বরাদ্দ করুন।

হোয়াইট হাউস থেকে ১৭ এপ্রিল নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, আমেরিকার ব্যবসা-বাণিজ্য প্রথম ধাপের জন্য খুলে দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত সনাক্ত করার পর্যাপ্ত টেস্ট সুবিধা রয়েছে।

এদিকে টেস্টিং এখনও অপ্রতুল হলেও আমেরিকার অন্যতম বড় অঙ্গরাজ্য টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর তাঁর রাজ্যে ব্যবসা-বণিজ্য খুলে দেয়ার প্রথম ধাপের ঘোষণা দিয়েছেন। গভর্ণর গ্রেগ অ্যাভোর্ট অবশ্য বলেছেন সবকিছুই ১ মে থেকে খোলা যাবে না। সতর্ক পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি বিশেষ পর্যবেক্ষণ টিমের মাধ্যমে রাজ্যের কর্মক্ষেত্র খুলে দিতে চান গভর্নর গ্রেগ। অ্যারিজোনা, আরকানসাস, ফ্লোরিডা, কলোরাডো, ইন্ডিয়ানা ও কানসাসসহ বেশ কয়েকটি রাজ্য ধাপে ধাপে খুলে দেওয়ার প্রস্তুতির কথাও জানানো হয়েছে।