আমেরিকায় করোনায় ১২১ বাংলাদেশির মৃত্যু: স্বদেশিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই

আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১২ এপ্রিল আরও ছয় বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। ওই ছয় বাংলাদেশি হলেন-মুজাহিদুর রহমান, আমিনা খাতুন, রওশন আরা ফেরদৌস, জাহানারা বেগম, হজরত আলী ও মাহমুদুর রহমান।এ নিয়ে আমেরিকায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২১ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হলো। এসব বিপর্যস্ত স্বদেশিদের পাশেও সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন

নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো বলেছেন, নাজুক পরিস্থিতির চরমে পৌঁছেও মনে হচ্ছে পরিস্থিতি অনেকটা সমান্তরাল হচ্ছে। একমাত্র সামাজিক বিচ্ছিন্নতা জোরালোভাবে অনুসরণের মধ্য দিয়েই একটা স্বস্থিকর অবস্থায় পৌঁছানো সম্ভব।

তবে মোট মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে রাজ্য গভর্নর ও নিউইয়র্কের মেয়রসংশয় প্রকাশ করেছেন। এসব মৃত্যুর হিসাব হাসপাতাল থেকে পাওয়া। হাসপাতালে আসার আগে যাদের মৃত্যু ঘটছে , তাদের হিসেবের আওতায় আনা হয়নি। এসব মৃত্যুর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিউইয়র্কসহ আমেরিকার অন্যত্র বাংলাদেশিদের মৃত্যুর তথ্যও সরকারিভাবে পাওয়া কোনো তথ্য নয় । কমিউনিটির যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের মৃত্যুর সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে।

নিউইয়র্কের ইস্ট এল্মহার্স্টে ১০ এপ্রিল রাতে মৃত্যু হওয়া আমিনা খাতুনকে ১২ এপ্রিল নিউজার্সিতে দাফন করা হয়েছে। মরহুমার মেয়ে রুবিনা শিবলি জানান, হাসপাতালে নেওয়ার আমিনা খাতুন সুস্থ ছিলেন। এক সপ্তাহ থেকে তিনি নিজেই কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। সতর্ক থাকার পরও ঘরে ভাইরাসের আগমন কীভাবে ঘটেছে, ত বোঝা যাচ্ছে না। ঢাকা কামরুন্নেসা স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা ও ইউনেসকোর সাবেক এই কর্মকর্তা মেয়ের সঙ্গে গত ১০ বছর নিউইয়র্কে থাকতেন।

এদিকে নিউইয়র্কের অনেকেই বেকার ভাতার অর্থ পেতে শুরু করেছেন। অপেক্ষা করছেন ফেডারেল সরকারের নাগরিক অর্থ সহযোগিতার জন্য। অনেকের ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সংকট শুরু হয়েছে। বিপন্ন লোকজনের সাহায্যে নগর কর্তৃপক্ষসহ নানা চ্যারিটি সংগঠন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে। স্বদেশিদের পাশেও এগিয়ে এসেছেন কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন।

জানা গেছে, ব্রঙ্কস থেকে নির্বাচিত রাজ্য সিনেটর লুইস সেপুলভিদা (৩২ সিনেট ডিস্ট্রিক্ট) ফুড সাপোর্টসহ অন্যান্য সেবা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁকে ৭১৮ ৯৯১ ৩১৬১ (সোমবার থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত) ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সোসাইটি নিউজার্সির মারবরো কবরস্থানে নিউইয়র্কে করোনায় মৃতদের জন্য বিনা মূল্যে কবরের জায়গা দিচ্ছে। প্রয়োজনে ৫০০ ডলার করে ফিউনারেল খরচের জন্য তারা সহায়তা করবে বলে জানিয়েছে। এ জন্য মোহাম্মদ আলীর (কোষাধ্যক্ষ) ৯১৭ ৩০২ ০৪৪৩ ফোন নম্বরে কল দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এ ছাড়া বাংলাদেশ সোসাইটি অব ব্রঙ্কস গ্রোসারিসহ ফুড সাপোর্ট দিচ্ছে। এ কারণে যোগাযোগের জন্য ৩৪৭ ৯৯৫ ৮৫৩৫, ৩৪৭ ৬৩৬ ৫১৫৩ বা ৭১৮ ৬৯০ ৪৫৫৬ নম্বরে ফোন করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার বিপদগ্রস্ত লোকজনকে খাবার, আর্থিক ও অন্যান্য সহযোগীতা প্রদান করছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ৭১৮ ৭৩৯ ৩১৮২ নম্বরে ফোন করা যাবে।

আসসাফা ইসলামিক সেন্টার ম্যানহাটনে মৃতদেহ দাফনে অসমর্থ পরিবারকে কবরের জায়গা দিচ্ছে। তবে ফিউনারেলের ব্যয় দিতে হবে। যোগাযোগের জন্য মুফতি লুৎফুর রহমান কাসেমিকে (২১২ ২০৩ ৮৬৯৫) ফোন বা প্রয়োজনে বার্তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। জ্যামাইকা ফ্রেন্ডস সোসাইটি থেকে হেলথ সাপোর্ট, ফুড সাপোর্ট, ফিউনারেল সহযোগিতাসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। যোগাযোগের জন্য ফখরুল ইসলাম দেলোয়ারকে (৯১৭ ৪৯৪ ৫১৬৩ বা ৩৪৭ ৬৯১ ১২১০) ফোন করা যাবে।
এসেনসিয়াল হোম কেয়ারের পক্ষ থেকে বিপন্ন লোকজনকে আর্থিক সহায়তাসহ যেকোনো সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিচয় গোপন রাখা হবে। যোগাযোগের জন্য ৩৪৭ ৬৯১ ১২১০ নম্বরে কল দেওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য সমস্যা, পরামর্শ ও অন্যান্য সহযোগিতার জন্যবাংলাদেশি চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকারকে ৭১৮ ৮৪৪ ৩৩৬০ নম্বরে কল করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিচয় প্রকাশ না করে কয়েকজন সহৃদয় বন্ধু লং আইল্যান্ড ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল পার্কে কবরের প্রয়োজনে অথবা আর্থিক সাহায্য দিতে আগ্রহী। যোগাযোগের জন্য ৭১৮ ৭৮৫ ৭৬৯২, ৬৪৬ ৯৬১ ৮৫৬৯ বা ৩৪৭ ৬০৫ ২৪৫৮ নম্বরে কল করা যাবে। প্রবাসীদের কেউ যদি অসুস্থবোধ করেন বা জরুরি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমিউনিটি হেল্প লাইনের ২১৪ ৪৪৬ ৮৮৯০ নম্বরে ফোন করতে পারেন।

মুফতি ইসমাইল (আল নূর ইসলামিক সেন্টার, সানি সাইড) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির জানাজা পড়ান। বিদেশ ফাউন্ডেশন ফুড বাস্কেট নামের প্রতিষ্ঠানটি আগামী সপ্তাহ থেকে রোজাদারদের জন্য খাদ্য সামগ্রী ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবে। যোগাযোগের জন্য সারওয়ার আলীর (ব্রঙ্কস) ৯১৭ ৫১৮ ০৪৩২ নম্বরে কল করা যাবে। মুসলিম উম্মাহ অব আমেরিকা করোনাভাইরাসে আক্রান্তসহ অন্যান্য সেবার জন্য হট লাইন চালু করেছে। হট লাইন নম্বর ৮৭৭ ৬৮৬ ২৭৭৪। আমেরিকায় বসবাসরত সিলেট বিভাগের অসহায় মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে জালালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা। এ বিষয়ে সংগঠনের পক্ষে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন সংগঠনের কর্মকর্তা রোকন হাকিম (৯১৭ ৩৬২ ২৪৪২) ও মান্না মুনতাসির (৯২৯ ৩৩২ ৯১২৫) ।

এছাড়া কবর এবং অন্যান্য যেকোনো সাহায্য সহযোগিতার জন্য সংগঠনের সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল (৮৬০ ৯৩৮ ৬৭১৮), সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী (৯১৭ ৬২২ ৭৭৭৬) ও কোষাধ্যক্ষ মইনুল ইসলামের (৯১৭ ৫৩৫ ৪১৩১) সঙ্গে অথবা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের যেকোনো কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আমেরিকা এখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের দিক দিয়ে সবার ওপরে। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ৫ লাখ ৬০ হাজারের বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে ২২ হাজার ১১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও প্রায় ১২ হাজার রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। এর মধ্যে শুধু নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে মারা গেছেন ৯ হাজার ৩৮৫ জন।