আমেরিকায় করোনায় আরও ৫ বাংলাদেশির মৃত্যু
আমেরিকায় ৩১ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চারজন নিউইয়র্ক ও একজন নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে মারা যান। এ নিয়ে আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৩৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হলো।
৩১ মার্চ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া ব্যক্তিরা হলেন বিএনপির নেতা তানভীর হাসান, মুনিম চৌধুরী, নুসরাত মজুমদার ও সুরুজ খান। নিউজার্সির প্যাটারসনে ৭২ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর নাম জানা যায়নি।
মৃত্যুসংবাদ বেশি প্রচারিত হলেও নিউইয়র্কে অন্তত পাঁচটি পরিবারের লোকজন আক্রান্ত হওয়ার পর সেরে ওঠার খবর পাওয়া গেছে। একাধিক চিকিৎসক সুস্থ হওয়ার সংবাদে চরম হতাশার মধ্যেও লোকজনের মধ্যে আশার সঞ্চার হচ্ছে।
আমেরিকায় করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন নিউইয়র্ক রাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। নিজের ভাই সাংবাদিক ক্রিস কুমো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘আমরা সম্মিলিতভাবে এ লড়াইয়ে জয়ী হব।’ গভর্নর কুমো ও নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও আশাবাদের কথাই শোনাচ্ছেন নাগরিকদের।
নিউইয়র্ক নগরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত প্রায় প্রতিটি পরিবারের কেউ না কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচারে অনেকেই আতঙ্কে ভুগছেন।
নিউইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোধ করার জন্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার সুফল পাওয়া যাচ্ছে। না হলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হতে পারত। যদিও এখনো নাজুক হতে পারে, এ নিয়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ‘লকডাউন’ আরোপের পর এবং ব্যস্ত নগরীতে সামাজিক দূরত্বের বিধিনিষেধ মেনে চললে হাসপাতালের ভিড় কমবে এবং মৃত্যুর হার হ্রাস পাবে।
আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সামাজিক দূরত্ব পালনের নির্দেশ বর্ধিত করে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘জীবনে চাঞ্চল্য ফিরে পেতে চাই।’ পরের দুই সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে আগামী ১ জুনের মধ্যে দেশ ঘুরে দাঁড়াবে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।
আমেরিকায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ১৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৫৯ জন। নিউইয়র্ক রাজ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত করোনায় নিউইয়র্কে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৩২৫। এতে মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৩৪২ জনের।
৩১ মার্চ নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় এই অঙ্গরাজ্যে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৩২ জনের। এ নিয়ে সেখানে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫০। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে অন্তত ৯ হাজার ২৯৮ জন। এ নিয়ে ওই অঞ্চলে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৭৯৫।
আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্যেই করোনাভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত নিউইয়র্ক। গত ১ মার্চ সেখানে ইরান থেকে আসা একজনের শরীরে প্রথম করোনার উপস্থিতি শনাক্ত হয়। এর দুদিন পর সেখানে দ্বিতীয়জন আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়। এরপর থেকেই সেখানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসের প্রকোপ।
করোনার ‘হটস্পট’ হিসেবে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি ও কানেকটিকাটের কথা উল্লেখ করে এ তিন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনের ঘোষণা দিয়েছে ফেডারেল সরকার।
থার্মোমিটার উৎপাদনকারী কিনসা স্বাস্থ্য গত ২২ মার্চ জ্বরের ওপর অনলাইনভিত্তিক ডেটা সংগ্রহের কাজ শুরু করে। এরপর থেকে নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন রাজ্যের স্বাস্থ্য বিভাগের পাওয়া তথ্যে পরিষ্কার করে দিয়েছে যে সামাজিক দূরত্ব সত্যি জীবন রক্ষা করছে।
কিনসার ১০ লাখেরও বেশি থার্মোমিটার রয়েছে এবং আমেরিকায় করোনাভাইরাস ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার জনের ডেটা সংগ্রহ করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী।