সেপ্টেম্বরে মানবদেহে করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষা চালাবে জে অ্যান্ড জে
করোনাভাইরাসের জন্য তৈরি ভ্যাকসিন আগামী সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ মানবদেহে পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করেছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসন বা জে অ্যান্ড জে। আগামী বছরের শুরুতে এ ভ্যাকসিন বাজারে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ছাড়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল সোমবার জনসন অ্যান্ড জনসনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা এসেছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জনসন অ্যান্ড জনসন বলেছে, জানুয়ারি মাস থেকেই ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ শুরু করেছে তারা। এ জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানবপরিষেবা বিভাগের বায়োমেডিক্যাল অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির (বিএআরডিএ) সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে গবেষণা ও পরীক্ষার জন্য জন্য তহবিল জোগাতে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে।
জনসন অ্যান্ড জনসনের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী অ্যালেক্স গোরস্কি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘বিশ্ব এখন জরুরি জনস্বাস্থ্যের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে এবং আমরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশ্বব্যাপী উপলব্ধ এবং সাশ্রয়ী করে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জনসন ও জনসনের বিশ্ব উৎপাদন ক্ষমতাও প্রসারিত করবে, যাতে এটি অনুমোদিত হলে দ্রুত এই ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারে।
বিশ্বে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে জনসন অ্যান্ড জনসন কেবল একা টিকা তৈরির দৌড়ে অংশ নিচ্ছে না; যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক প্রতিষ্ঠান মর্ডানা গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য সরকারি গবেষকদের কাছে পাঠিয়েছিল। এ মাসের শুরুর দিকে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম ডোজ স্বেচ্ছাসেবকদের দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের জেনিফার হলারের ওপর করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। সিয়াটলের কায়সার পার্মানেন্তে ওয়াশিংটন রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে প্রথম ইনজেকশনের মাধ্যমে টিকা নেন হলার।
মর্ডানাস ‘এমআরএনএ-১২৭৩’ নামের ভ্যাকসিনটিতে সার্স-সিওভি-২ করোনভাইরাস থেকে মেসেঞ্জার আরএনএর নিষ্ক্রিয় খণ্ড ব্যবহার করা হয়। এ পরীক্ষার প্রথম দফার লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের শরীরের জন্য নিরাপদ কি না, তা পরীক্ষা করা। গবেষকেরা দাবি করেন, এতে ভাইরাসের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে কায়সার পারমানেন্তের গবেষক লিসা জ্যাকসনের নেতৃত্বে একদল গবেষক এ ভ্যাকসিন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কতখানি কার্যকর, তা পরীক্ষা করে দেখবেন।
দ্রুত কর্মপরিকল্পনার জন্য দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) পক্ষ থেকে এ পরীক্ষার অর্থায়ন করা হচ্ছে। এনআইএইচ ও মডার্না ইনকরপোরেশনের যৌথ সহযোগিতায় এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্বের যেকোনো রোগের ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। অতীতে এমনটাই দেখা গেছে। কিছু ক্ষেত্রে লেগে গেছে দশকের পর দশক। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যখন ল্যাবরেটরিতে একটি ভ্যাকসিন প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়, তখন তা ওষুধের কারখানায় পাঠানো হয়। সেখানে আরেক ধাপে পরীক্ষা করে দেখা হয়, ওই ভ্যাকসিন দূষণমুক্ত ও প্রাণিদেহে প্রয়োগের উপযোগী কি না। এ জন্য কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে।
এরপর প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেলে ওই উপযুক্ত ভ্যাকসিন প্রাণিদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত এ ক্ষেত্রে তিন মাসের মতো সময় প্রয়োজন হয়।
বর্তমানে বেশ কটি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান নতুন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে শ্রম দিচ্ছে। যেমন: চীনভিত্তিক ক্লোভার বায়োফার্মাসিউটিক্যালস বলছে, অচিরেই তারা একটি ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করতে চায়। অন্যদিকে নোভাভ্যাক্স ও ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালস নিশ্চিত করেছে যে নতুন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে তারা কাজ শুরু করেছে। তবে কবে নাগাদ সেই ভ্যাকসিন বাজারে আসবে, সেই সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। আবার চীনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ শুরু করা ‘গিলিয়াড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ইবোলা ঠেকাতে তৈরি করা তাদের একটি ওষুধ নতুন করোনাভাইরাস ঠেকাতে কার্যকর হতে পারে বলে প্রমাণ মিলেছে। এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী গিলিয়াড।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন ভ্যাকসিন তৈরি হয়ে গেলেও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিরূপণের জন্য আলাদাভাবে গবেষণার প্রয়োজন হবে। কারণ, নতুন এসব ভ্যাকসিন পরীক্ষাগারে কার্যকর প্রমাণিত হলেও মানবদেহে তা কেমন প্রভাব রাখবে, তা আগে থেকে আঁচ করা সম্ভব নয়। তাই মানবদেহে প্রয়োগের জন্য একটি ভ্যাকসিনকে নিরাপদ ঘোষণার জন্য ঢের সময়ের প্রয়োজন।