ক্ষতিকর উপাদান থাকায় বেবি পাউডার তুলে নিচ্ছে জনসন
মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি বেবি ট্যালকম পাউডারে অ্যাসবাস্টাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা ক্যানসারের ঝুঁকি তৈরি করে। আমেরিকার স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার পরীক্ষায় বিষয়টি সামনে আসার পর বেবি পাউডার বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে কোম্পানিটি।
মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) জনসন অ্যান্ড জনসনসহ কয়েকটি কোম্পানির পাউডারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালায়। এতে জনসনের বেবি পাউডারে মানবদেহের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অ্যাসবাস্টাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। জনসন অ্যান্ড জনসন কোম্পানি বিষয়টি শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে তারা তা স্বীকার করে নিজেদের একটি নির্দিষ্ট ব্যাচের পণ্য প্রত্যাহারের জন্য জনগণকে অনুরোধ জানায়। নিষিদ্ধ করা পণ্যের ব্যাচ নম্বর ২২৩১৪আরবি।
জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, নিজেদের তৈরি বেবি ট্যালকম পাউডারে অ্যাসবাস্টাসের উপস্থিতির কথা প্রথম থেকেই জানত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির কর্তাব্যক্তিরা তা অস্বীকার করে গেছেন।
শুরুতে বহুজাতিক কোম্পানিটির তরফ থেকে পাউডারে অ্যাসবাস্টাস থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে বলা হয়, ‘কঠোর মান যাচাইয়ের মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করা হয় যে, জেএনজের কসমেটিক ট্যাল্ক নিরাপদ। বছরের পর বছর নিজেদের ও ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) পরীক্ষায় আমাদের পাউডারে অ্যাসবাস্টাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এমনকি গত মাসে করা পরীক্ষাতেও এমন কিছু খুঁজে পায়নি এফডিএ। গত ৪০ বছরে একের পর এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের ট্যাল্ক পণ্যে অ্যাসবাস্টাস নেই।’
পরে বিষয়টি স্বীকার করে জনসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিষয়টি এখনো তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে তারা মনে করে, এটি পরীক্ষার সময় ক্রস-দূষণের (পরীক্ষা চলাকালে অন্য উৎস থেকে নমুনার সঙ্গে মিশ্রণের ফলে সৃষ্ট দূষণ) কারণেও হতে পারে।
এফডিএর এক মুখপাত্র বলেন, তাঁরা এখনো তথ্য সংগ্রহ করছেন। অনলাইন থেকে কেনা নমুনায় অ্যাসবাস্টাসের সামান্য উপস্থিতি টের পাওয়া গেছে, যা ০.০০০২ শতাংশের বেশি নয়। একই সঙ্গে এই প্রত্যাহারাদেশটি দেশব্যাপী নাকি কয়েকটি নির্দিষ্ট অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ক্রস-দূষণের ব্যাপারে এফডিএর মুখপাত্র লিন্সে মায়ার সিএনএনকে বলেন, ‘এফডিএ যেকোনো পরীক্ষা গুণগতমান বজায় রেখে এবং মানসম্পন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করে পরিচালনা করে। তাই ক্রস-দূষণের কোনো সম্ভাবনা নেই।
এফডিএর তথ্যমতে, অ্যাসবাস্টাস এমন এক যৌগ, যা জরায়ুসহ অন্যান্য কয়েক ধরনের ক্যানসারের জন্য দায়ী। সাম্প্রতিককালে সারা পৃথিবী থেকে জনসন অ্যান্ড জনসন সংস্থার বিরুদ্ধে প্রায় ৯ হাজার অভিযোগ এসেছে। বেশ কিছু অভিযোগ নিয়ে মামলাও চলছে। জনসনের বেবি পাউডারে অ্যাসবাস্টাসের মাত্রা অনেক কম হলেও কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না এফডিএ। কারণ, অ্যাসবাস্টাসের গুঁড়া শিশুদের ত্বকের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। তাই স্বাস্থ্য সংস্থার আদেশ জারির পরই ৩৩ হাজার বেবি পাউডারের কৌটা বাজার থেকে তুলে নিতে বাধ্য হয় কোম্পানিটি।
জনসন অ্যান্ড জনসন পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবারই প্রথম নয়। জনসনের মনোরোগ ওষুধ ‘রিসপেরডাল’ সেবনের ফলে এক যুবককে স্তন বৃদ্ধির মামলায় হেরে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৮ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার নির্দেশ দেন পেনসিলভানিয়ার একটি আদালত।
নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্যমতে, বেশ কিছু দিন আগে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রসাধন সামগ্রীর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আসক্তি ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে। এ সম্পর্কিত মামলার সমঝোতা করতে চার বিলিয়ন ডলারের সমঝোতা করতে হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটিকে। শুধু তাই নয়, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে আমেরিকার বিভিন্ন আদালতে অনিয়মের অভিযোগে বহু মামলা রয়েছে।