মসজিদ নির্মাণে বাধা, ট্রয় নগর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগের মামলা
আমেরিকার মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ট্রয় নগর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। এই নগরে গির্জা, সিনাগগসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের উপাসনালয় থাকলেও মসজিদ নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
মুসলিম কমিউনিটির পক্ষ থেকে কয়েক দফায় আবেদন করা হলেও নানা অজুহাতে তারা আবেদন খারিজ কর দিয়েছে। মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে অনুমতি না দেওয়ায় ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে নগর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ১৯ সেপ্টেম্বর মিশিগান পূর্ব জোনের ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলাটি করা হয়। মামলাটি করেছে ফেডারেল সরকারের বিচার বিভাগ। এতে ট্রয় নগরের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটিকে মসজিদ নির্মাণে অনুমতি না দিয়ে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, গত বছর ওকল্যান্ড কাউন্টি কমিউনিটি ফেডারেল আইন অমান্য করে মুসলিম কমিউনিটির মসজিদ নির্মাণের আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে, যা রিলিজিয়াস ল্যান্ড ইউজ অ্যান্ড ইনস্টিটিউশনালাইজড অ্যাক্ট-২০০০ (আরএলইউআইপিএ) আইনের পরিপন্থী। ট্রয় নগর কর্তৃপক্ষ মসজিদ নির্মাণের অনুমোদন না দিয়ে উল্টো যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের ওপর অযাচিত বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তাঁদের চাপে রাখতে নগরী এমন করেছে বলে বিচার বিভাগের করা মামলায় বলা হয়েছে।
ইউএস সিভিল রাইটস ডিপার্টমেন্টের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এরিক ড্রেইব্যান্ড বলেন, ‘জোনিং আইন যা মসজিদ, গির্জা, সিনাগগ ও অন্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে অন্যান্য সংস্থার তুলনায় কম আনুকূল্য দেখায়। স্থানীয় সরকার যাতে যেকোনো বিশ্বাসের মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ না করে, ফেডারেল বিচার বিভাগ সেটি নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
মিশিগান পূর্বাঞ্চল জোনের ইউএস অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাথু স্নাইডার এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রয় নগর কর্তৃপক্ষ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সমান গুরুত্ব দিতে বাধ্য।
মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ট্রয় নগরে বাংলাদেশি আমেরিকান কমিউনিটির নেতা প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিনের নেতৃত্বে অ্যাডাম কমিউনিটি সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে প্রায় পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে একটি মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ট্রয় নগরের অসহযোগিতার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। এই নগরে প্রায় তিন হাজার মুসলমানের বসবাস। অসংখ্য চার্চ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ৭৩টি উপাসনালয় থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো মসজিদ প্রতিষ্ঠার কোনো অনুমোদন নগর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তারা নানা টালবাহানা করে বারবার এই আবেদন ফিরিয়ে দিচ্ছে।
গত ১৯ জুন অ্যাডাম সিসির করা মসজিদ নির্মাণের আবেদন শেষবারের মতো অগ্রাহ্য করে ট্রয়ের জোনিং বোর্ড। উপায় না পেয়ে সেখানকার মুসল্লিরা অ্যাডাম সিসি কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনস, মিশিগানের (কেয়ার-মিশিগান নামে পরিচিত) দ্বারস্থ হন। তাদের সহায়তায় ট্রয় নগরের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পরে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ট্রয় নগর কর্তৃপক্ষকে অ্যাডাম সিসির সঙ্গে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানায়।
ট্রয় কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন অগ্রাহ্য করলে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস ব্যাপারটি আমলে নেয়। প্রাথমিক তদন্তে মুসলিম কমিউনিটির ওপর ট্রয় নগর কর্তৃপক্ষের ধর্মীয় বৈষম্যমূলক আচরণের প্রমাণ পায়। তার ওপর ভিত্তি করে ১৯ সেপ্টেম্বর নগর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে বিচার বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে অ্যাডাম সিসির প্রেসিডেন্ট ও মামলার বাদীদের অন্যতম একজন প্রকৌশলী মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘ট্রয় মিশিগানের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় শহর। এখানে অন্য সব ধর্মের মানুষের মতো প্রায় তিন হাজার মুসলমান ধর্মাবলম্বী বসবাস করে। সবার উপাসনালয় আছে, কিন্তু আমাদের নেই। আমরা অন্য শহরে গিয়ে আমাদের উপাসনালয় তৈরি করে সেখানে উপাসনা করি। এটি অন্যায়, আমরা বছরের পর বছর ধরে এই শহরে বসবাস করি। কেন আমাদের অন্য কোনো শহরে গিয়ে মসজিদ নির্মাণ করতে হবে। আমরা আশা করি, আমাদের মসজিদের অনুমোদন বেআইনিভাবে অগ্রাহ্য করে নগর কর্তৃপক্ষ যে অন্যায় করেছে, মহামান্য আদালতের রায়ের মধ্যমে সেটার অবসান হবে।’
মামলার খবর প্রচারিত হলে স্থানীয় প্রায় সব গণমাধ্যমে তা ফলাও করে প্রচার করা হয়। সঙ্গে মুসলিম কমিউনিটি ট্রয় নগরে তাদের একটি উপাসনালয় প্রতিষ্ঠায় কীভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছে, কতটা সংগ্রাম তাদের করতে হয়েছে, সেসব বিষয় দেশটির গণমাধ্যমে উঠে আসে। সবার একটাই প্রশ্ন, অন্য সব ধর্মের উপাসনালয় থাকলে মুসলমানদের কেন থাকতে পারবে না? এটি ধর্মীয় বৈষম্যমূলক আচরণ, যা আইনের পরিপন্থী।
ট্রয় নগরের রচেস্টার সড়কের ওপর সাকুরা এশিয়ান রেস্টুরেন্টের লাগোয়া একটি ভবনে অ্যাডাম কমিউনিটি সেন্টার। এই শহরের প্রথম একটি মসজিদ নির্মাণের জন্য আবেদন করা হয় এবং ট্রয় নগর কর্তৃপক্ষ জোনিং আইন অমান্য করার অজুহাত দেখিয়ে তাদের সেই আবেদন ফিরিয়ে দেয়।