ব্রুকলিনের আলোকিত নারী
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নগর নিউইয়র্কের একটি বরো ব্রুকলিন। এই এলাকা অনেক কিছুর জন্য বিখ্যাত, এখানে জন্মেছেন পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি।
সে সব ব্যক্তিত্ব আপন মহিমায় আলোকিত করে রেখেছেন এই বরোকে। ব্রুকলিনের কথা বলতে গেলে সবার আগে চলে আসে তাদের জনপ্রিয়তা এবং স্বীকৃত নামের তালিকা। এই তালিকায় আছেন লিওনার্ড রোসেনম্যান ও আর্থার পিয়ানোডোসির মতো লোক, রয়েছেন মাইক টাইসনসহ অনেক সেলিব্রেটি, লেখক।
এসব আলোকিত মানুষের জীবনী এত বিশাল যে সবার কথা এক লেখায় বলা সম্ভব নয়। এঁদের মধ্যে বেঁচে আছেন সৌন্দর্যে, সাফল্যে, আপন মহিমায় এমন একজন এবং প্রয়াত একজন নারীর কথা তুলে ধরে হচ্ছে যাঁর কাজ ছিল মানুষকে হাসানো।
অ্যান জ্যাকলিন হ্যাথওয়ে
অ্যান জন্মের পরই নিজের নামের সঙ্গে ভাগ্যগুণে জুড়ে নিয়েছিলেন বিখ্যাত এক ব্যক্তির প্রভাব। শেক্সপিয়ারের স্ত্রীর নাম ছিল অ্যান জ্যাকলিন হ্যাথওয়ে। তাঁরও একই নাম, তিনি হলিউড কাঁপানো একজন আমেরিকান অভিনেত্রী ও গায়িকা। অ্যান জ্যাকলিন হ্যাথওয়ে ১৯৮২ সালের ১২ নভেম্বর ব্রুকলিনে জন্ম নেন। তার বাবা জেরাল্ড একজন শ্রম অ্যাটর্নি ও মা কেট (নাই ম্যাককোলে) সাবেক অভিনেত্রী। কেট আইরিশ বংশোদ্ভূত। নামের সঙ্গে হ্যাথওয়েয়ে উপাধি তারা ইংল্যান্ডে জন্মসূত্রে পেয়েছেন।
ছোট বেলা থেকে অ্যানের ধর্মীয় মূল্যবোধ খুব বেশি ছিল। তাঁরা রোমান ক্যাথলিক। নিয়মিত চার্চে যেতেন, কিন্তু মাইকেল নামে সমকামী একজনের আচরণে তা বন্ধ করে দেন। তিনি ছোট বেলা নান হওয়ারও পরিকল্পনা করতেন। কিন্তু অভিনয়ে সব সময় তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল। মায়ের অভিনয় দেখেই তাঁর অভিনয়প্রীতি বাড়ে।
২০১৫ সালে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ও শীর্ষ উপার্জনকারী অভিনেত্রীদের কাতারে নাম লেখান অ্যান। তিনি একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড, ব্রিটিশ একাডেমি ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ও প্রাইমটাইম এমি অ্যাওয়ার্ডসহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর চলচ্চিত্রগুলো বিশ্বব্যাপী ৬৪০ কোটি ডলার আয় করেছে। তিনি ললিপপ থিয়েটার নেটওয়ার্কের একজন বোর্ড সদস্য, এটি একটি সংস্থা যেটি হাসপাতালে অসুস্থ শিশুদের কাছে চলচ্চিত্র বিনোদনের কাজ করে। তিনি জাতিসংঘের নারী দূত হিসেবে লিঙ্গ সমতার পক্ষে কাজ করেন। তাঁর অভিনয়ের স্বীকৃতির তালিকা এত বিশাল যে, সংক্ষেপ বলে শেষ করা যাবে না।
অ্যান নিজের সমালোচনা নিজেই করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, তার গানের উচ্চারণ নিখুঁত না করলে চলচ্চিত্রের পরীক্ষার প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে তার আবেদন বাতিল হবে। বলতেন, ‘আজ যা দরকার, তা আমি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে পারি না। কিন্তু আমার মনে হয়, আমার গানগুলো আমার হয়ে এটা করতে পারবে।’ ব্যক্তিগত জীবনে অ্যানি বিবাহিত, তাঁর এক ছেলে রয়েছে। স্বামী অ্যাডাম শুলমান ব্যবসায়ী।
জোয়ান আলেক্সান্ডার মোলিনস্কি
জোয়ান আলেক্সান্ডার মোলিনস্কি ১৯৩৩ সালের ৮ জুন ব্রুকলিনে জন্ম নেন। তিনি পেশাগত জীবনে জোয়ান রিভার্স নামে পরিচিত। রিভার্স একাধারে আমেরিকান কৌতুক অভিনেত্রী, লেখক, প্রযোজক ও টিভি উপস্থাপক ছিলেন। তিনি হাস্যরসাত্মক ব্যক্তিত্বের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। ১৯৬৮ সালে নিউইয়র্ক টাইমস–এর টেলিভিশন সমালোচক জ্যাক গল্ড রিভার্সকে সবচেয়ে মজার জীবিত মহিলা বলে ডেকেছিলেন।
২০১৭ সালে রোলিং স্টোন ম্যাগাজিনের সর্বকালের সেরা ৬০টি সেরা স্ট্যান্ড-আপ কমিকসের তালিকায় তিনি ষষ্ঠ স্থান লাভ করেন। একই বছরের অক্টোবরে তাঁকে টেলিভিশন অ্যাকাডেমি হল অফ ফেমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কর্মজীবনে তিনি অসংখ্যবার অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হন। ১৯৮৯ সালে তিনি স্টার অ্যাওয়ার্ড পান।
রিভার্স প্রথমে বিয়ে করেন ১৯৫৫ সালে। তাঁর সেই বিয়ে মাত্র ছয় মাস টিকেছিল। ১৯৬৫ সালের ১৫ জুলাই এডগার রোজেনবার্গের সঙ্গে বিয়ে হয়। ১৯৬৮ সালের ২০ জানুয়ারি জন্ম নেয় তাঁদের একমাত্র সন্তান মেলিসা রিভার্স। মহান এই অভিনেত্রী ২০১৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ম্যানহাটনের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে শ্বাস ও গলার প্রদাহ জনিত রোগে মারা যান।