ঢাবি ক্যাম্পাসে ফেরার অপেক্ষায়
ছাত্রজীবনের একদম শুরু থেকেই ছিলাম মুক্ত পাখির মতো। সব সময়ই আপন মনে উড়তেই ভালোবাসতাম। স্কুল মিস দিয়ে সারা দিন ক্রিকেট খেলা, ভয়ংকর সব জায়গায় বসে রাতের লম্বা সময় ধরে আড্ডা মারা—এসব আমার স্কুলজীবনে র অন্যতম কাজ ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর থেকে অবাধ স্বাধীনতাটা বেড়ে গেছে আরও কয়েক গুণ। সারা রাত না ঘুমিয়ে রাতের আঁধারে ক্যাম্পাসের অলিগলি ঘুরে বেড়ানো, মিনি ট্রাকে করে হাতিরঝিলে যাওয়া, সারা রাত ক্রিকেট খেলে ভোরের আলো ফোটার আগমুহূর্তে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফুটপাতে গড়ে ওঠা হোটেলে ভোরের খাবার খেয়ে হলে ফিরে মাত্র এক-দেড় ঘণ্টা ঘুম। ঘুম ঘুম চোখমুখে আধো আধো ঘুমের ভাব নিয়ে ক্লাসে যাওয়া, ক্লাসে গিয়ে স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়া, মাঝেমধ্যে স্যারের কাছে ধরা পড়ে বকুনি খাওয়া চলত।
বড় ভাইয়া, আপু, বন্ধু-বান্ধবীদের জন্মদিন উদযাপন, বিশেষভাবে উদযাপনের পর ট্রিট হিসেবে চানখাঁরপুল অথবা মামা হোটেলে খাওয়া, এক রুমে গাদাগাদি করে অনেকজন ঘুমানো, মন চাইলেই বাইরে কোথাও ট্যুরে যাওয়া, পরীক্ষার আগের রাত পড়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া, মিছিল-মিটিং, কনসার্ট, সেমিনার—সবকিছুই ছিল হুলুস্থুল কাণ্ড। স্বল্পকালের ক্যাম্পাস জীবনটাকে এ রকম বিচিত্র রঙে উদযাপন করেছি। অথচ আজ সবকিছুকেই কেন জানি অতীত মনে হচ্ছে। কখনো ভাবিনি এমন দিন আসতে পারে। যেটা ভাবিনি আজ সেটাই বাস্তব। বড্ড মিস করছি ক্যাম্পাসের সবকিছু।
ক্যাম্পাসের এত এত উদযাপন করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। পুরো ক্যাম্পাস যেন থমকে গেছে। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় গত দুই মাস ধরে বাড়িতে আছি। সময় যেন ঘড়ির কাঁটায় আটকে গেছে। সময় যেতেই চাচ্ছে না। শুয়ে-বসেই চলে যাচ্ছে দিনকাল। তবে মাঝেমধ্যে আড্ডা আর ক্রিকেট খেলাটা চলে কিন্তু ক্যাম্পাসের আড্ডা আর ক্রিকেট খেলার মতো মজাটা এখানে পাই না। এখন তো মনে হয় কত যুগ ধরে যেন ক্যাম্পাসে যাই না, ক্যাম্পাসের পথঘাট যেন ভুলেই গেছি।
ক্যাম্পাসের সঙ্গে গত দেড় বছরের এই সম্পর্কটা হয়তো ক্যালকুলেটরের হিসাবে খুব বেশি লম্বা নয়, তবুও এই সময়ের মধ্যেই ক্যাম্পাসটার সঙ্গে একটা গভীর মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেছি। কতটা মায়ায় আবদ্ধ হয়ে গেছি, তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তাইতো এখন ক্যাম্পাস ছেড়ে বাড়িতে কিংবা অন্য কোথাও থাকাটা খুব কষ্টের মনে হয়। আজকাল খুব করে মিস করছি প্রিয় ক্যাম্পাসটাকে। এখন মুখিয়ে আছি প্রিয় ক্যাম্পাসে ফেরার অপেক্ষায়।
শিক্ষার্থী: হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়