করোনা: নিজেদের ওপরেই সব
করোনাভাইরাসের ব্যাপারটা এখন সবার কাছেই পরিষ্কার। করোনাভাইরাসের এখনো কোনো ওষুধ নেই। ভ্যাকসিন তৈরি হতেও লাগবে বহুদিন। কিন্তু ওষুধ বা ভ্যাকসিন তৈরি হওয়ার আগপর্যন্ত কী করবে মানুষ? ভ্যাকসিন না এলে কি মানুষ বাঁচবে না? সবাই মরে যাবে? করোনা আমাদের মেরে ফেলার কতটুকু শক্তি রাখে? এগুলো নিয়ে আমরা ভাবি না। আমরা আতঙ্কিত হওয়া নিয়েই ব্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। আমরা নিজেরাও আতঙ্কিত হচ্ছি, মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়াচ্ছি। আতঙ্ক না ছড়িয়ে বরং সাবধান থেকে কিন্তু আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারি। আমাদের নিজেদের হাতে অনেক কিছুই রয়েছে।
প্রথমত, আমরা যদি বাইরে না যাই, করোনার হেঁটে হেঁটে আমাদের ঘরে আসার ক্ষমতা নেই। আমরা যদি ঘর থেকে বাইরে না বের হই, তাহলেই তো অনেকটা সমাধান হয়ে গেল। আমাদের অনেক কাজেই বাইরে বের হতে হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বের হওয়াটা বাধ্যতামূলক। যেসব ক্ষেত্রে বের হওয়া বাধ্যতামূলক, সেসব ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক হতে পারি। যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি। বিশেষ করে মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করে আমরা বাইরে বের হতে পারি। বাইরে থেকে কোনো কিছু নিয়ে এলে আসার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
যেহেতু করোনাভাইরাস মাটিতে অবস্থান করে, সেহেতু বাড়ির বাইরে পা জীবাণুমুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। বাইরে থেকে যা যা এনেছি, সেগুলো জীবাণুমুক্ত করতে হবে, নিজে সরাসরি গোসল করে ফেলতে হবে।
আমাদের অনেকেরই কর্মক্ষেত্রে যেতে হচ্ছে। যাদের যেতেই হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একটু ঝুঁকির। এ ক্ষেত্রে নিজেকে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি দরকার। সঙ্গে সব সময় হ্যান্ড স্যানিটাইজার–জাতীয় কিছু রাখতে হবে। কোনো কিছু স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণুমুক্ত করে ফেলতে হবে। যথাসম্ভব বড় পোশাক পরিধান করা এ ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।
আর যাদের বাইরে যেতে হয় না, তাদের তো কোনো সমস্যাই রইল না। তারা বাড়িতে থাকবে, সাবধানে থাকবে, সতর্ক থাকবে। নিজেদের ঘরের সব জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। প্রয়োজনে গরম পানি দিয়ে বারবার ধৌত করা যেতে পারে জিনিসপত্র।
অনেকেই দুশ্চিন্তায় আছে যে দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে, মার্কেট খুলে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে অনেকের মনেই দুশ্চিন্তা। কিন্তু একবার আমরা ভেবে দেখি যে আমরা নিজেরা যদি না যাই, তাহলে সারা পৃথিবী খুলে দিলেও তো কোনো লাভ নেই। যদিও দোকানদারদের না গিয়ে হয়তো উপায় থাকবে না। তাদের এখন গিয়েও তেমন উপকার হবে না। কারণ, ঈদের বেচাকেনার একটা বিশেষ প্রস্তুতি থাকে। সেই প্রস্তুতি তারা তো নিতে পারেনি। এখন দোকানে গিয়ে কী বিক্রি করবে তারা? দোকান না খুললে বরং যারা ভাড়া দোকান চালায়, তারা কিছুটা ভাড়া মওকুফের জন্য বলতে পারত। কিন্তু এখন এমন অবস্থা যে গিয়েও উপায় নেই, আর না গিয়েও লাভ নেই। উভয়সংকটে পড়ে গেছে তারা।
এবার আসা যাক শারীরিক বিষয় নিয়ে। আমরা কিন্তু খাদ্যাভ্যাস দিয়ে করোনাকে মোকাবিলা করতে পারি। এখন পর্যন্ত যত গবেষণা হয়েছে, তাতে গরম পানি, কালিজিরা, মধু কিন্তু ভালোই কাজে দিয়েছে। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি উপকারে আসতে পারে গরম চা। আমরা জানি, ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভাইরাস বাঁচতে পারে না। আর আমরা চা খাই সাধারণত ৮০ থেকে ৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। আমাদের শুধু গরম পানি খেতে হয়তো সমস্যা হতে পারে, কিন্তু চা খেতে তো কোনো সমস্যা নেই। যত বেশি বেশি গরম চা খাব, ততই আমাদের জন্য উপকারী। আর করোনা যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে, সেহেতু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়—এমন সব খাবার আমরা বেশি বেশি খেলে অনেকটা রেহাই পাব।
আসলে সমাধান সব সময় নিজেদের কাছেই থাকে। আমরা নিজেরাই ডেকে আনব আমাদের বিপদ, নিজেরাই পারব সাবধান থাকতে। নিজেকে নিয়ে সন্দেহ হলে অনেকে ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না বা কাউকে বলতে চায় না। কিন্তু এই সময়ে কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকির হবে। কারণ, এটা এমন এক রোগ, যা শুধু নিজের ক্ষতি করবে না, করবে আশপাশের সবার। আর অবশ্যই ওপরওয়ালার কাছে চাইতে হবে, যাতে তিনি মুক্তি দেন এই বিপদ থেকে।