চ্যাটিংয়ে যে ১০ ভুল আমরা প্রায়ই করে থাকি
ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট আছে, কিন্তু মেসেঞ্জার ব্যবহার করেন না—এমন মানুষের সংখ্যা হাতে গোনা। সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তার বিচারে আমাদের দেশে এই অ্যাপের অবস্থান ওপরের সারিতে। পিছিয়ে নেই হোয়াটসঅ্যাপও। যার ব্যবহার যত বেশি, তার ভুলভ্রান্তির আলোচনাও তত বেশি।
আজকে আমরা জানব সে রকম ১০টি ভুলের কথা, যা আমরা মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে প্রায়ই করে থাকি।
১. অনুমতি ছাড়া কল
অপর পাশের ব্যক্তি কথা বলার মতো অবস্থায় আছেন কি না, তা না জেনে আমরা মাঝেমধ্যে হুটহাট করে অনুমতি না নিয়েই মেসেঞ্জারে কল করে বসি। তিনি মিটিং বা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকলে আপনার এই অপ্রত্যাশিত কলে অবশ্যই বিরক্ত হবেন। তাই অনুমতি না নিয়ে যে কাউকে কল দেওয়ার অভ্যাস বদলে ফেলুন।
২. উত্তর না পেয়েও অনবরত টেক্সট পাঠানো
একবার টেক্সট পাঠালেন, উত্তর পেলেন না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার টেক্সট পাঠালেন। এবারও সাড়া পেলেন না। এবার থামুন! তাঁকে সময় দিন। ফ্রি হওয়ার পর তিনি হয়তো তাঁর সময়মতো উত্তর দেবেন। যদি আপনি অপেক্ষা না করে অবিরত টেক্সট পাঠাতে থাকেন, তবে তা আপনার অধৈর্য মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।
৩. অতিরিক্ত ইমোজির ব্যবহার
কাউকে ‘কী করছেন?’ এটা লিখে সঙ্গে ২-৩টি হাসির ইমোজি জুড়ে দিলেন। এ রকম প্রত্যেক টেক্সটের শেষে গিয়ে অনর্থক ইমোজি পাঠাতে থাকলে অপর পাশের ব্যক্তি আপনার মানসিক সুস্থতা নিয়েও মনে মনে প্রশ্ন তুলতে পারেন। কোনো একটি কথায় প্রাণ দেওয়ার জন্য এবং আপনি কোনো অর্থে কথাটি বলেছেন তা বোঝানোর জন্য ইমোজি ব্যবহার করতেই পারেন। তবে তা যেন অতিরিক্ত না হয়।
৪. ভুল বানানে টেক্সট পাঠানো
এই ভুল আমরা অনেকেই করে থাকি। একটি টেক্সট খুব দ্রুত লিখে সেন্ড বাটন চেপে দিই। পাঠানোর পর খেয়াল হয় ‘ইশ্! দুটি বানান ভুল হয়ে গেল!’ তখন বিব্রত হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এখন থেকে এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে, টেক্সট লিখে সেন্ড করার আগে একবার হলেও মেসেজে চোখ বুলিয়ে নিন।
৫. মধ্যরাতে টেক্সট পাঠানো
হুট করে কোনো ফেসবুক বন্ধুকে গভীর রাতে টেক্সট করলে তিনি ভ্রু কোঁচকাতেই পারেন। খুব জরুরি না হলে এবং খুব কাছের কেউ না হলে রাত ১১টার পর টেক্সট পাঠানো উচিত নয়। কল তো নয়-ই!
৬. বড় টেক্সট পাঠানো
কোনো একটি বিষয়কে স্পষ্ট করতে টেক্সট সামান্য বড় হতেই পারে। কিন্তু বিপত্তি বাধে তখন, যখন তা রচনার আকার নেয়। প্রয়োজন ছাড়া কোনো টেক্সট ৩ থেকে ৫ বাক্যের ওপরে নেওয়া বিরক্তিকর। অল্প কথায় কাজ হলে বেশি কথার দরকার কী!
৭. ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য পাঠানো
আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর কিংবা কোনো পাসওয়ার্ড মেসেঞ্জার/ হোয়াটসঅ্যাপ টেক্সটে কারও সঙ্গে শেয়ার করলে তা বিপদের কারণ হতে পারে। অপর পাশের ব্যক্তি এ তথ্যের নিরাপত্তা রক্ষা করবেন এবং এ তথ্য কোনো তৃতীয় পক্ষের হাতে যাবে না, তা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা মুশকিল! তাই এ ধরনের ব্যক্তিগত স্পর্শকাতর তথ্য শেয়ার করার আগে অন্তত কয়েক মিনিট ভাবুন।
৮. ফরওয়ার্ড বিভ্রাট
অনলাইনে কোনো একটি বিষয় আপনার ভালো লেগেছে। আপনি চাইছেন আপনার বন্ধুতালিকায় থাকা অন্যদের সঙ্গেও সেটি শেয়ার করতে। ফরওয়ার্ড অপশনে গিয়ে গণহারে সেটি সবাইকে পাঠাতে শুরু করলেন। কিছু মানুষ সেটিকে উপভোগ করলেও বাকিরা কিন্তু আপনার ওপর চটে যেতে পারেন। এমনকি ব্লক পর্যন্ত দিতে পারেন। তাই ফরওয়ার্ড করার আগে ভাবুন কী পাঠাচ্ছেন এবং কাকে পাঠাচ্ছেন।
৯. অনর্থক টেক্সট
কোনো প্রয়োজন নেই। তবু কাউকে হাই–হ্যালো বা ‘কী করছেন?’ টাইপের অনর্থক টেক্সট পাঠালে তার কাছে আপনি হালকা ব্যক্তিত্বের মানুষ হিসেবে পরিচিত হতে পারেন। আবার কথায় কথায় অনর্থক ‘Lol’ পাঠালেও তিনি বিরক্তির কারণ হতে পারেন।
১০. শর্ট ফর্মের ব্যবহার
আমরা অনেকেই ‘How are you?’ কে ‘How r u?’ কিংবা ‘Good Night’–এর পরিবর্তে ‘Gd n8’ লিখে থাকি। যাঁরা এভাবে শর্ট ফর্মে লিখে অভ্যস্ত, তাঁরা বার্তা গ্রাহকের কাছে নিজের অপরিপক্বতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাই সময় সামান্য বেশি নিয়ে হলেও প্রতিটি শব্দকে সম্পূর্ণ করে লেখার অভ্যাস করুন।
টেক্সটে কখনোই কারও সঙ্গে তর্কে জড়াবেন না। কারণ, আপনি কোন মেজাজে কোন কথাটি বলছেন, তা ওপাশে বসে বোঝা সম্ভব নয়। তাই মেজাজ খুব একটা ভালো না থাকলে সে মুহূর্তে টেক্সট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। পরে এ নিয়ে ঠান্ডা মাথায় কথা বলা যাবে।
সবশেষে বলব, আমরা একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব বিচারের ক্ষেত্রে যেমন তাঁর পোশাক কিংবা অঙ্গভঙ্গি আমলে নিই, ঠিক তেমনি যাপিত জীবনে তাঁর টেক্সট পাঠানোর ধরনও উপেক্ষা করি না। তাই এখন থেকে মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে চ্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে উপর্যুক্ত বিষয়গুলো মাথায় রাখব, যাতে অপর পাশের ব্যক্তি আমাদের ব্যক্তিত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারেন।
লেখক: প্রেসিডেন্ট, দ্য স্কুল ফর প্রেজেন্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। [email protected]