সাকিব-মুশফিকের ব্যাট নিলামে তুললে সমস্যা কেন
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের খেলাধুলা আপাতত বন্ধ। আইসিসি তাদের বিভিন্ন বাছাইপর্বের খেলা আগামী জুন মাস পর্যন্ত বন্ধ রেখেছে। আইপিএল পিছিয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট বোর্ডও তাদের এই সিজনের খেলা বাতিল করে দিয়েছে। লম্বা সময় ক্রিকেট ভক্তদের জন্য থাকছে না কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ। তবে খেলা না থাকলেও খেলোয়াড়েরা বসে থাকছেন না। শুরু থেকেই সবাই বিভিন্নভাবে সাহায্য করে যাচ্ছেন দরিদ্র মানুষদের এই বিপদের সময়।
তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাশরাফি থেকে শুরু করে লিটন, অনূর্ধ্ব–১৯ দলের আকবর আলী বা নারী খেলোয়াড় জাহানারা—কেউই বাদ যাচ্ছেন না সাহায্য করা থেকে। সম্প্রতি নিজেদের কিছু প্রিয় জিনিস নিলামে তোলার মাধ্যমেও সাহায্য করছেন খেলোয়াড়েরা।
শুধু বাংলাদেশি খেলোয়াড় নন, সাহায্য করছেন বিদেশি খেলোয়াড়েরাও। নিজ নিজ দেশে নিজের প্রিয় জিনিস নিলামে তুলছেন। ইংল্যান্ডের জস বাটলার, পাকিস্তানের আজহার আলী, ভারতের লোকেশ রাহুলসহ আরও অনেকেই আছেন।
সবাই খেলোয়াড়দের এই উদ্যোগের প্রশংসা করলেও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু বিরূপ মন্তব্য দেখা যাচ্ছে খেলোয়াড়দের এই উদ্যোগ নিয়ে। কিছু কিছু ভক্ত পুরো ব্যাপারটা না বুঝেই দোষ চাপিয়ে দিচ্ছেন খেলোয়াড়দের ওপর, কেন তাঁরা এই বিপদে তাঁদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিলাম করছেন। ব্যাপারটা আসলে এমন নয়। প্রত্যেক খেলোয়াড় তাঁদের জিনিস নিলাম করছেন, তা থেকে নিজে লাভবান হওয়ার জন্য নয়; বরং অসহায়, দুস্থ ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য। এই নিলাম থেকে প্রাপ্ত সব অর্থ প্রত্যেক খেলোয়াড় সাহায্যে দান করার জন্যই ব্যবহার করছেন ও সামনে করবেন। তাঁদের এই উদ্যোগে কিছু মানুষের সাহায্য হলে কারও সমস্যা হওয়ার কথা নেই। এটি তাঁরা মানুষের জন্যই করছেন।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তাঁরা নিজের কাছ থেকে দিচ্ছেন না, কেন নিলাম করছেন। ব্যাপারটা এমন নয়, তাঁরা নিজ থেকে সাহায্য করছেন না। সবাই–ই ফান্ড গঠন করে তাঁদের বেতনের অর্ধেক দিয়ে দিয়েছেন ইতিমধ্যে। এ ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য করে যাচ্ছেন অসহায় মানুষদের। সেখানে তাঁদের আরও বেশি সাহায্য করার জন্য নিজেদের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসটি দিয়ে দিচ্ছেন। এর তুলনায় আরও বড় সাহায্যের উদাহরণ হতে পারে না। তাঁরা কোটি কোটি মানুষের মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়ে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁদের বিশেষ অর্জনের ব্যাট, বল বা গ্লাভস সবই তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাঁদের কাছেই নয়, দেশের লাখো ভক্তের কাছেও তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই নিলামের মধ্য দিয়ে কোনো ভক্তের যদি স্বপ্ন পূরণ হয় ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করার জন্য আরও বেশি অর্থের জোগান হয়, তাহলে এর থেকে ভালো কি হতে পারে?
ভারতের লোকেশ রাহুল আইপিএল খেলে এবং বিসিসিআইয়ের মোটা অঙ্কের বেতনে বছরে কয়েক কোটি রুপি আয় করেন। এরপরও তিনি তাঁর ব্যাট, জার্সি ও গ্লাভস নিলামে তুলেছেন আরও বেশি সাহায্যের জন্য এবং সেই সঙ্গে যেন কিছু ভক্তের স্বপ্নও পূরণ হয়। সেখানে কোনো নিন্দা ছিল না বা বাটলারের জার্সি নিলামেও কোনো নিন্দা ছিল না। তাহলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের নিলামেই কেন কিছু বিরূপ মন্তব্য?
জাতি হিসেবে আমাদের উচিত হবে ক্রিকেটারদের এই মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানানো। এতে কারও ক্ষতি নয়, বরং হাজারো অসহায় ব্যক্তির সহযোগিতাই হবে।