জীবনানন্দ দাশ: চেনা-অচেনার গণ্ডি পেরিয়ে
‘আমি কবি, সেই কবি-
আকাশে কাতর আঁখি তুলি হেরি
ঝরাপালকের ছবি’
সে কবি বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি, তিমির হননের কবি, তিনি কবি জীবনানন্দ দাশ। যে ছেলেটির মা ছিলেন গৃহস্থ পরিবারের আদর্শ একজন নারী, সেই কুসুমকুমারী দাশের কবিতা-আদর্শ ছেলে,
‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে’
যখন বাঙালি সমাজের শিশুশ্রেণির অন্যতম পাঠ্য, তাঁরই সন্তান কালের ডাকে যে ‘জীবনানন্দ দাশ’ হয়ে উঠবেন সেটা সহজে অনুমেয়।
আজ জীবনানন্দের মৃত্যুদিনে কবিকে স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়। কবি জীবনানন্দকে হয়তো চেনা সম্ভব কিন্তু ব্যক্তি জীবনানন্দকে আমরা কতটা চিনি! একজন ব্যক্তি তাঁর জীবনে কতটা বোধের অধিকারী হলে কবি জীবনানন্দ হয়ে ওঠেন, হয়তো বা একজীবনে তা উপলব্ধি করা সম্ভবও নয়!
দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে শিক্ষক ও সাহিত্যপিপাসু মা–বাবার জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি। তাঁর ডাকনাম ছিল মিলু। বাবা কমবয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার বিরোধী ছিলেন বলেই ভোরে ঘুম থেকে উঠেই পিতার কণ্ঠে উপনিষদ আবৃত্তি ও মায়ের গান শুনে তাঁর বেড়ে ওঠা।
১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে আট বছরের মিলুকে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। সেখান থেকে ১৯১৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯১৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট কৃতিত্বের সঙ্গে প্রথম বিভাগে পাস করেন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ ডিগ্রি, ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর তিনি আইন নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলেও তা শেষ করেননি।
কবির ৫৬ বসন্তের ছোট্ট এক টুকরো জীবনটি কেটেছে চরম দারিদ্র্য ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। পেশা মূলত শিক্ষকতা হলেও কর্মজীবনে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে কোথাও থিতু হতে পারেননি। তিনি অধ্যাপনা করেছেন বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যার মধ্যে আছে সিটি কলেজ, কলকাতা (১৯২২-১৯২৮), বাগেরহাট কলেজ, খুলনা (১৯২৯) ; রামযশ কলেজ, দিল্লি (১৯৩০-১৯৩১), ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল (১৯৩৫-১৯৪৮), খড়গপুর কলেজ (১৯৫১-১৯৫২), বড়িশা কলেজ (অধুনা ‘বিবেকানন্দ কলেজ’, কলকাতা) (১৯৫৩) এবং হাওড়া গার্লস কলেজ, কলকাতা (১৯৫৩-১৯৫৪)। তাঁর কর্মজীবন ছিল বন্ধুর, খরস্রোতা নদীর মতো, কখনো চর জাগে তো কখনো তলিয়ে যায় গভীর অতলে।
জীবিকার প্রয়োজনে কবিকে জীবনভর যুঝতে হয়েছে। চাকরি খুঁজতে তাঁর জীবনে অনেক চটির সুখতলি ক্ষয়ে গিয়েছে। স্ত্রী লাবণ্য দাশ স্কুলে শিক্ষকতা করে দারুণভাবে আর্থিক এবং মানসিক সহযোগিতা জুগিয়েছেন কবিকে। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে অকালমৃত্যুর সময় তিনি হাওড়া গার্লস কলেজে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘ বেকার জীবনে তিনি ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবেও কাজ করেছেন এবং জীবনের অধিকাংশ সময় গৃহশিক্ষকতা করে সংসার চালিয়েছেন। বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসায়ের চেষ্টাও করেছিলেন বছরখানেক। দারিদ্র্য এবং অনটন ছিল তাঁর কর্মজীবনের নিত্যসঙ্গী।
কবি ছিলেন অসম্ভব গম্ভীর প্রকৃতির এবং চরম ধৈর্যশীল মানুষ। ভালোবাসতেন পরিবারকে, সংসারের টুকিটাকি কাজগুলো ভালোবাসতেন। দুই ছেলেমেয়ে, স্ত্রী লাবণ্যের পেনসিলের মাথা ধার করা, ফাউন্টেন কলমে কালি ভরার কাজগুলো নিয়ে কখনো ভাবতে হতো না। এমনকি ছেলেমেয়েকে রাত জেগে ঘুম পাড়ানোতে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ভালোবাসতেন গুরুত্ব পেতে, সামান্য অসুখে আশা করতেন সেবা–শুশ্রূষা পেতে। তাঁর রাশভারী স্বভাবেও মাঝেমধ্যে কৌতুক করতেন। আর খেতে ভালোবাসতেন ডিম। ডিমের যেকোনো পদ দেখলেই তিনি লোভ সামলাতে পারতেন না। ছেলের পাতের থেকে ডিমের কিছু অংশ খাওয়া নিয়ে বাপ–ছেলের খুনসুটি প্রায়ই লেগে থাকত।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৫–এর জুনে মৃত্যুবরণ করলে জীবনানন্দ তাঁর স্মরণে ‘দেশবন্ধুর প্রয়াণে’ কবিতাটি লিখেন। ‘বঙ্গবাণী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় কবিতাটি। যা পরে ১৯২৭ সালে তাঁর প্রথম কাব্যসংকলন ‘ঝরা পালক’–এ স্থান করে নেয়। সে সময় থেকে বিভিন্ন নামীদামি পত্রিকা ‘কল্লোল’, ‘কালি ও কলম’, ‘প্রগতি’সহ অন্যান্য পত্রিকায় তাঁর বিভিন্ন লেখা ছাপা হতে থাকে। সে সময় থেকেই তিনি তাঁর পারিবারিক উপাধি ‘দাশগুপ্তের’ বদলে কেবল ‘দাশ’ লিখতে শুরু করেন।
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মে জীবননন্দ দাশ লাবণ্য দেবীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ে হয়েছিল ঢাকা শহরে, পুরান ঢাকায় সদরঘাটসংলগ্ন ব্রাহ্ম সমাজের রামমোহন লাইব্রেরিতে। লাবণ্য গুপ্ত সে সময় ঢাকার ইডেন কলেজের ছাত্রী ছিলেন। জীবনানন্দ দাশের বিয়েতে কবি বুদ্ধদেব বসু, অজিতকুমার দত্ত প্রমুখ কবি উপস্থিত ছিলেন।
১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে কবির প্রথম সন্তান মঞ্জুশ্রীর জন্মের কাছাকাছি সময়ে তাঁর ‘ক্যাম্প’ কবিতাটি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত ‘পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং সাহিত্যসমাজে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হন। কবিতাটির আপাত বিষয়বস্তু ছিল জোছনা রাতে হরিণ শিকার, অনেকে কবিতাটি অশ্লীল হিসেবে চিহ্নিত করেন।
১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একগুচ্ছ গীতিকবিতা রচনা করেন, যা তাঁর ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের প্রধান অংশ। এই কবিতাগুলো জীবনানন্দ বেঁচে থাকা অবস্থায় প্রকাশ করেননি। ১৯৫৪-তে তাঁর মৃত্যুর পর কবিতাগুলো একত্র করে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন তাঁর বোন সুচরিতা দাশ এবং ‘ময়ুখ’ পত্রিকাখ্যাত কবি ভূমেন্দ্র গুহ।
১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দ তাঁর পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন কলেজে ফিরে সেখানকার ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সে সময়ে কলকাতায় বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সমর সেন একটি নতুন কবিতা পত্রিকা বের করেন, যার নাম ‘কবিতা’। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাতে জীবনানন্দের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি স্থান করে নেয়। কবিতাটি পড়ার পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেবকে লেখা একটি চিঠিতে একে ‘চিত্ররূপময়’ বলে মন্তব্য করেন। ‘কবিতা’ পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যাতে (পৌষ ১৩৪২ সংখ্যা; ডিসে ১৯৩৪ /জানু ১৯৩৫) তাঁর সেই অমর ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। ১৮ লাইনের কবিতাটি বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার এখনো অন্যতম। পরের বছর জীবনানন্দের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ প্রকাশিত হয়। জীবনানন্দ এর মধ্যেই বরিশালে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলেন।
১৯৩৬–এর নভেম্বরে তাঁর পুত্র সমরানন্দের জন্ম। ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ একটি কবিতা সংকলন সম্পাদনা করেন, যার নাম ছিল ‘বাংলা কাব্যপরিচয়’ এবং এতে জীবনানন্দের ‘মৃত্যুর আগে’ কবিতাটি স্থান পায়।
১৯৩৯ সালে কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয় আবু সয়ীদ আইয়ুব ও হিরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়, যাতে জীবনানন্দের চারটি কবিতা-পাখিরা, শকুন, বনলতা সেন এবং নগ্ন নির্জন হাত অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
১৯৪২ সালে কবির পিতৃবিয়োগ হয় এবং ওই বছরই তাঁর তৃতীয় কবিতাগ্রন্থ ‘বনলতা সেন’ প্রকাশিত হয়। বইটি বুদ্ধদেব বসুর কবিতা-ভবন হতে ‘এক পয়সায় একটি’ সিরিজের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয়। পৃষ্ঠাসংখ্যা ১৬। বুদ্ধদেব ছিলেন জীবনানন্দের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং তাঁর সম্পাদিত ‘কবিতা পত্রিকা’য় জীবনানন্দের অনেক কবিতা ছাপা হয়।
১৯৪৪ সালে তাঁর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ ‘মহাপৃথিবী’ প্রকাশিত হয়। আগের তিনটি কাব্যগ্রন্থ তাঁকে নিজের পয়সায় প্রকাশ করতে হলেও প্রথমবারের মতো তিনি তাঁর কবিতার বইয়ের জন্য প্রকাশক পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন প্রকাশিত এ কবিতগুলোতে যুদ্ধের প্রভাব দেখা যায়। চাকরির প্রয়োজনে বরিশালে প্রত্যাবর্তন করলেও তিনি কলকাতায় অভিবাসনের কথা ভাবতেন। সুযোগ হলেই স্টিমারে বরিশাল থেকে খুলনা তারপর ট্রেনে বেনাপোল হয়ে কলকাতায় পাড়ি দিতেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট দেশভাগ স্থির হওয়ায় কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে সপরিবার কলকাতায় ভাই অশোকানন্দের ল্যান্সডাউন রোডের বাড়িতে চলে যান। একান্ত প্রিয় বরিশালে আর ফিরে যাওয়া হয়নি।
কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় কবি জীবনানন্দ আহত হন। তারিখটা ছিল ১৪ অক্টোবর, ১৯৫৪ সাল। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তাঁর শরীর দুমড়েমুচড়ে গিয়েছিল। ভেঙে গিয়েছিল কণ্ঠ, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। অনেক জীবনানন্দ গবেষক মনে করেন জাগতিক নিঃসহায়তা কবিকে মানসিকভাবে কাবু করেছিল এবং তাঁর বাঁচার স্পৃহা শূন্য করে দিয়েছিল। মৃত্যুচিন্তা যেন কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল। তিনি প্রায়ই ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা ভাবতেন, যে কথা তাঁর কিছু লেখাতেও পাওয়া গেছে।
গুরুতর আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে পাশের চায়ের দোকানের মালিক চুনীলাল এবং অন্যরা তাঁকে উদ্ধার করেন। ভর্তি করা হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। এ সময় ডা. ভূমেন্দ্র গুহসহ অনেক তরুণ কবি জীবনানন্দের সুচিকিৎসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। তবে জীবনানন্দের অবস্থা ক্রমশ জটিল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও নার্সদের সব প্রচেষ্টা বিফলে দিয়ে ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর রাত ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। গত ১০০ বছরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র একটি। তিনি আর কেউ নন, কবি জীবনানন্দ দাশ।
জীবনানন্দ দাশের সব রচনা খুব সহজেই মনে রাখা যায়। আজ তা শিখিয়ে দিচ্ছি-
উপন্যাস মনে রাখার শর্ট টেকনিক:
সতীর্থ তার জলপাইহাটী নিবাসী বান্ধবী কবিতার কথায় তার ছোট বোন কল্যাণীকে মাল্যদান করল।
টেকনিক ব্যাখ্যা:
১। জলপাইহাটি ২। সতীর্থ ৩। কল্যাণী ৪। মাল্যদান
প্রবন্ধ:
কবিতার কথা
কাব্যগ্রন্থ মনে রাখার শর্ট টেকনিক:
এই মহাপৃথিবীর মাঝে বেলা অবেলা কালবেলায় সাতটি তারার তিমিরে রূপসী বাংলার মেয়ে বনলতা সেন।
কুড়িয়ে পাওয়া ঝরা পালকটি ধূসর পাণ্ডুলিপির ভেতর যত্ন করে রাখল।
টেকনিক ব্যাখ্যা:
১। রূপসী বাংলা ২। বনলতা সেন ৩। ধূসর পাণ্ডুলিপি ৪। ঝরাপালক
৫। বেলা অবেলা কালবেলা ৬। সাতটি তারার তিমির ৭। মহাপৃথিবী
পরিশেষে কবির মৃত্যুদিনে বলতে চাই, কবির মৃত্যু আজও এক রহস্য। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে দুর্ঘটনার সময় দুই হাতে দুই থোকা ডাব নিয়ে ট্রামলাইন পার হচ্ছিলেন কবি। আত্মহননের সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো মানুষ দুই হাতে দুই থোকা ডাব নিয়ে ট্রাম লাইন পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফেরার রাস্তায় উঠবেন, সেটা কোনো যুক্তিবাদী মানুষের কাছে নিশ্চয়ই আত্মহত্যার জন্য যৌক্তিক ব্যাখ্যা হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি, জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু আত্মহত্যা নয়।
লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক