১৬০ কেজি থেকে ওজন এখন ৭৩ কেজি

ওজন কমানোর আগে সালেহ্‌ বায়েজীদ
ওজন কমানোর আগে সালেহ্‌ বায়েজীদ

একটা মোটা বাঘ আমার পেছনে তাড়া করেছে। আমি ভয়ে দৌড়াচ্ছি। হঠাৎ খুব তৃষ্ণা পেল। তারপর ঘুম ভেঙে গেল। আসলে এ বাঘ হচ্ছে আমার মনের বাঘ। যে আমাকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে ১৭ বছর ধরে। এ বাঘের নাম হচ্ছে মোটাত্ব।

বহু বছর ধরে আমি ১৬০ কেজি ওজন নিয়ে গ্লানিকর জীবন যাপন করেছি। আমার উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি। সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করেছি। সেটা ২০১৩। এরপর আমার মা ডায়াবেটিসের রোগী। মায়ের চিকিৎসার জন্য আমি তখন বারডেম হাসপাতালে আসি। আমি চলতাম কচ্ছপের মতো। ২০১৬ সালে মা মারা যান শুধু এই ডায়াবেটিসের জটিলতায়। মায়ের মৃত্যুতে ভেঙে পড়ি। ২০১৬ সালের শুরুতে আমার নতুন মিশন শুরু হয় ওজন কমানোর। প্রথম প্রথম বিশ্বাস করতে পারতাম না আমার এই বিপুল পরিমাণ ওজন কমবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে প্রথম আলোতে পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলোর লেখা আমার মনে ধরে এবং তাঁকে আমি দেখাই। তাঁর পরামর্শমতো বারডেমে আরও কয়েকজন বিশেষজ্ঞকে দেখাই। কিন্তু প্রিয় পাঠক, এর আগে আমার একটি গল্প আছে। আর তা হচ্ছে, প্রথম আলোর নকশা ও অধুনা পাতায় যখন যে স্বাস্থ্যবিষয়ক লেখা ছাপা হতো তা আমি সেই ২০০০ সাল থেকে পড়তাম ও যত্নসহকারে রেখে দিতাম। ছোটবেলায় ইচ্ছা ছিল মডেল হব, হতে পারিনি। আজ ৩০ বছরের জীবনে সেই অর্জন হয়েছে। এবার বলব আমার ওজন কমানোর এই যাত্রার গল্প।

আখতারুন্নাহার আলোর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বলেন, প্রতি মাসে অন্তত ৩ কেজি করে ওজন কমাবেন।

আর এদিকে বাসায় জমানো নকশা ও অধুনার বিভিন্ন লেখা আবার পড়তে শুরু করি। আমি আমার মনকে সম্পূর্ণ ফোকাস করি ওজন কমানোর জন্য। এভাবে প্রতি মাসে ৩ কেজি করে ওজন কমতে থাকে। আমি ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস ও জিম, ইয়োগা, সাইক্লিংসহ সবকিছু ভারসাম্য রেখে শুরু করি। এভাবে আমার ওজন ৯০ কেজিতে নেমে আসে। আমি আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারছিলাম না।

যখন আমি প্রথম প্রথম গ্রামের রাস্তায় সকালে হাঁটতে বের হতাম, সবাই ঠাট্টাবিদ্রূপ করত। আমি সহ্য করেছি। আমি আমার ওজন কমাতে দৃঢ় ছিলাম। কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে ডায়েট ও ব্যায়াম করেও ওজন কমছিল না। আমার জিম প্রশিক্ষক বললেন, ‘আপনি রোপ স্কিপিং শুরু করেন।’ আমি প্রতিদিন ২০০০ বার দড়ি লাফ দিয়েছি। এভাবে ওজন আবার কমতে থাকে। আমার ত্বক যাতে ঢিলা না হয়, সে জন্য যোগব্যায়ামের ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিই এবং চর্চা শুরু করি। তবে শুধু ব্যায়াম না, খাবার ওজন কমাতে সাহায্য করেছে বেশি। ওটস মিল আর নন–ফ্যাট দুধ এ ক্ষেত্রে আদর্শ খাবার। ওটস মিল কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখে। সেই সঙ্গে গ্রিন টি আর স্যুপ আর জাপানি মুগিচা (বার্লি চা)। আমি আমার এ জার্নি সম্পূর্ণ করেছি এ বছরের জুন মাসে। প্রায় ৯০ কেজি ওজন কমিয়ে আজ আমি তারুণ্যদীপ্ত ও আত্মপ্রত্যয়ী একজন মানুষ।

ব্যায়ামের একটা বিষয় হচ্ছে, উল্টাপাল্টা ব্যায়াম করা যাবে না। ব্যায়াম ও ডায়েট যেন বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না চলে যায়। বর্তমানে আমার ওজন ৭৩ কেজি। আমি ওজন এক দিনে কমাইনি, তাই আপনাদের বলব, বাড়তি ওজন ঝেড়ে আমার মতো আত্মপ্রত্যয় নিয়ে বেঁচে থাকুন। জীবনটাকে উপলব্ধি করুন প্রজাপতির ডানায় ভর করে। জীবনটা যে রসে ভরা টইটম্বুর। আসুন, আমরা আমাদের জীবনটাকে উপভোগ করি।

ওজন কমানোর পর। ছবি: খালেদ সরকার
ওজন কমানোর পর। ছবি: খালেদ সরকার

সালেহ্‌ বায়েজীদকে দেওয়া পুষ্টিবিদ আখতারুন্নাহার আলোর খাদ্যরুটিন

সকাল: ০৭-৭.৩০ মিনিট

  • ঘুম থেকে উঠে ২ গ্লাস পানি পান
  • ১টা সেদ্ধ ডিম, ২টা লাল আটার রুটি
  • ১ বাটি সেদ্ধ সবজি, মৌসুমি ফল ১টা
  • ১ গ্লাস টক দই


বেলা ১১টা

  • ১ বাটি মুড়ি
  • ১ কাপ গ্রিন টি/আস্ত ফল (যেমন আমড়া, বাঙ্গি, সফেদা, আপেল)


বেলা ১টা থেকে ১.৩০ মিনিট

  • ২ কাপ ভাত
  • ১ বাটি সবজি
  • ১ টুকরো মাছ
  • ১ বাটি ডাল ও সালাদ


বিকেল ৫টা

  • চিনাবাদাম এক মুঠো
  • পনির ১ টুকরো/স্যুপ ১ বাটি


রাত ৮টা থেকে ৯টা

  • ১ বাটি ওটস
  • ৩টি খেজুর
  • ফ্যাট ফ্রি দুধ ১ গ্লাস


রাত ১০টায় শোবার আগে

  • স্যুপ ১ বাটি


সালেহ্‌ বায়েজীদের ব্যায়ামের রুটিন


ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত

  • ১ ঘণ্টা জগিং
  • ২০০০ বার দড়ি লাফ


বিকেল ৫.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬.৩০ পর্যন্ত

  • যোগব্যায়াম/সাইক্লিং/সাঁতার/পার্কে জগিং


লেখক:
প্রভাষক, মনোহরদী, নরসিংদী।