হাতের কাছে আছে 'রুমানা আপা'
গাইবান্ধার স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। খবর পেয়ে রুমানা আক্তার প্রশিক্ষণে অংশ নেন। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে এক মাসের প্রশিক্ষণ শেষে বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ শুরু করলেন রুমানা। ঘরে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিং করা, সুইচ, বৈদ্যুতিক পাখা, বাতি লাগানোসহ নানান কাজে এখন তাঁর মাসিক আয় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা।
২১ বছর বয়সী রুমানা এই মিস্ত্রির কাজ করেই লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে সংসারের প্রয়োজনেও টাকা দেন। এ বাড়ি ও বাড়ি ডাক পড়ে মিস্ত্রি ‘রুমানা আপা’র। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের নিভৃত চেংমারি ঘোষপাড়া গ্রামে রুমানার বাড়ি। বর্তমানে তিনি গাইবান্ধা সরকারি কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কলেজটির উপাধ্যক্ষ মো. খলিলুর রহমান গর্ব করেই বললেন, ‘রুমানা বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ করে। লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের খরচ চালায়। বাবাকে সহায়তা দেয়। তাঁর এই কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। আমরা তাঁকে উৎসাহ দিচ্ছি।’
রুমানার কৃষক বাবা আনোয়ার হোসেন মণ্ডল। মা তাহেরা বেগম গৃহিণী। পাঁচ শতক বসতভিটা ছাড়া সহায় সম্পদ বলতে কিছু নেই। তিন ভাইবোনের মধ্যে রুমানা সবার ছোট। বড় ভাই তরিকুল আলম মণ্ডল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাঠ কর্মকর্তা পদে চাকরি করেন। বোন রেহানা আক্তারের বিয়ে হয়েছে।
রুমানার একসময় লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তখন থেকেই তিনি নিজে কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন। বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি হিসেবে কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও রুমানার ভালোই লাগে। তবে পুরুষ মিস্ত্রির চেয়ে তিনি মজুরি কম পান। প্রথম দিকে এ কাজ করার জন্য নানান কথাও শুনতে হয়েছে। তবে রুমানা দমে যাননি।
চেংমারি ঘোষপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী মান্নান মিয়া বেশ প্রশংসা করেই বললেন, পুরুষ বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির চেয়ে রুমানার কাজ অনেক ভালো।
একই গ্রামের চাকরিজীবী মনোয়ারা বেগমসহ অন্যরা জানালেন, বাড়িতে বৈদ্যুতিক সমস্যা হলে ১৫-২০ কিলোমিটার দূর থেকে মিস্ত্রি আনতে হতো। তাও সময়মতো পাওয়া যেত না। এখন হাতের কাছে ‘রুমানা আপা’ আছেন। যখন-তখন ডাকলেই তাঁকে পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁকে ঘরের ভেতর নিয়ে কাজ করানো যায়।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরের মীরগঞ্জ এলাকার বিদ্যুৎ মিস্ত্রি উজ্জ্বল মিয়া বললেন, ‘আমাদের চেয়ে রুমানার কাজ ভালো। আমরা চাই নারীরা এ পেশায় আসুক।’
রুমানার বাবা আনোয়ার হোসেন মণ্ডল বললেন, ‘মেয়ে এ কাজ না করলে আমরা তো তার পড়ার খরচ দিতে পারতাম না।’
শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম বলেন, নারীর জন্য কাজ কোনো বাধা নয়, ইচ্ছে থাকলে যে কেউ যেকোনো কাজ করতে পারে, তার উদাহরণ রুমানা।