হাতিরঝিলের চা-বিক্রেতা মাহবুব
রাজধানীর হাতিরঝিলের পাড়ে বউবাজার এলাকায় তাঁকে আগেও দেখেছি। চা বিক্রি করতে দেখে কৌতূহল হয়েছে কথা বলার। কৌতূহলের কারণ, তাঁর জীবনসংগ্রাম। দশটা মানুষের মতো নন তিনি। শারীরিক গঠনের কারণে চায়ের ফ্লাস্ক বয়ে বেড়ান অনেক কষ্টে। সেদিন ব্যাটে-বলে মিলে গেল কথা বলার সময়। সড়কের পাশে কৃষ্ণচূড়াগাছের ছায়ায় বসে চা-বিক্রেতা মাহবুব আলমের সঙ্গে আলাপ শুরু করি।
: আপনার সঙ্গে সেদিন পুঁচকে এক ছেলেকে দেখলাম।
: মামা, ও আমার ছেলে...। বিয়ে করছি তাও তো কয়েক বছর হয়ে গেল। একটা মেয়েও আছে।
কথায় কথায় ব্যবসা-বাণিজ্যের হালচাল থেকে ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কথাই জানা গেল ৩৫ বছর বয়সী এই চা–বিক্রেতার। এই যেমন, প্রায় ১৫ বছর আগে নদীর ভাঙনে ভিটেমাটি হারায় তাঁর পরিবার। ভাগ্যান্বেষণে ভোলার ব্যাংকের হাট এলাকা থেকে চলে আসেন ঢাকায়। প্রথমে ঢাকা মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় চা-পানের দোকান দিয়েছিলেন। সুবিধা হয়নি বলে একসময় ব্যবসাটি ছেড়ে দেন। এরই মধ্যে চালু হয় হাতিরঝিল প্রকল্প। শুরু করলেন ফেরি করে চা বিক্রি। এই ব্যবসাতেই ভাগ্যবদলের স্বপ্ন মাহবুবের।
মধুবাগ এলাকায় টিনশেড ঘরের একটি কক্ষে পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। জন্মগত পায়ের সমস্যা আছে বলে বেশি দূর হাঁটতে পারেন না। মধুবাগ ও বউবাজার-সংলগ্ন হাতিরঝিল ব্রিজ ও আশপাশ এলাকায় নিজের তৈরি করা চা ফেরি করেন।
: তাতে আয়-রোজগার কেমন হয়?
মাহবুব বলেন, ‘দিনে ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি হইলে ব্যবসা (মুনাফা) হয় ২ থেকে ৩০০ ট্যাকা।’
দৈনিক এই আয়ের টাকায় চলে তাঁর সংসার। মাস শেষে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবাকেও সাধ্যমতো কিছু টাকা পাঠান।
তাঁর সঙ্গে সাধারণ লোকজনের আচরণের বিষয়ে মাহবুব আলম বলেন, ‘শারীরিক গঠন ছোট হওয়ায় কেউ কেউ আমার সঙ্গে টিটকারি মারে।’ অবশ্য এ নিয়ে তাঁর কোনো দুঃখবোধ নেই। তাই বললেন, ‘আল্লাহ যেভাবে আমারে বানাইছে, এতেই আমি খুশি।’