হজযাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় টিপস
রংপুরের বিশিষ্ট চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. রাশেদুল মওলা। কয়েকবার হজ পালন করেছেন। হজযাত্রীদের প্রয়োজনীয় টিপস দিয়েছেন।
মক্কাতে যত দিন থাকবেন, সব সময় মনে রাখবেন যে আপনি এক পবিত্র শহরে অবস্থান করছেন। এই শহরে অবস্থিত মসজিদুল হারামে এক রাকাত নামাজ পড়লে এক লাখ রাকাত নামাজ পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। তাই যত বেশি সময় সম্ভব এই মসজিদে অবস্থান করার চেষ্টা করবেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও বেশি বেশি নফল নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন। এই মসজিদে ফজরের নামাজের এক ঘণ্টা আগে তাহাজ্জুদ নামাজের আজান হয়। জামাত শুরু হওয়ার অনেক আগেই মসজিদে উপস্থিত হবেন। দেরি করে গেলে মসজিদে ঢোকার বেশির ভাগ গেট ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করা দেখতে পাবেন। গেটের সামনে সৌদি নিরাপত্তাকর্মীরা হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দেন যে এই গেট দিয়ে ঢোকা যাবে না। ভেতরে কোনো জায়গা নেই। তাঁরা না বোঝেন বাংলা, না বোঝেন ইংরেজি। তাই কোন গেট খোলা আছে, কোন দিকে গেলে মসজিদে জায়গা পাওয়া যাবে, এ ব্যাপারে তাঁদের কোনো সাহায্য পাওয়া যায় না। মসজিদের সামনে স্থাপিত ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ডের মাধ্যমে মসজিদ কর্তৃপক্ষ সহজেই এ তথ্যগুলো দিতে পারে। এ রকম পরিস্থিতিতে আপনি যা করতে পারেন:
• মসজিদ চত্বরের কয়েকটি জায়গায় ওপরে ওঠার জন্য চলন্ত সিঁড়ি আছে। এই সিঁড়ি দিয়ে আপনি ওপরতলায় চলে যান।
• মসজিদ চত্বরের কয়েক জায়গায় বেসমেন্টে নামার সিঁড়ি আছে। মাটির নিচে হাজার হাজার লোকের নামাজের ব্যবস্থা আছে। বেসমেন্টে খুব ঠান্ডা এবং কোনো কার্পেট বিছানো নেই। তাই যাঁদের বেশি ঠান্ডাতে সমস্যা হয়, তাঁরা সতর্ক থাকবেন।
• মসজিদের সামনের চত্বরে মসজিদের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন মূল মসজিদের বাঁয়ে বিশাল সম্প্রসারিত নতুন অংশ। সেখানে জায়গা পেতে পারেন।
• এ ছাড়াও মসজিদ চত্বরের সামনেই দেখবেন দুটি বিশাল বিল্ডিং। ক্লক টাওয়ার (জমজম টাওয়ার) ও মক্কা টাওয়ার। এই দুটি বিল্ডিং এ মহিলা ও পুরুষদের জন্য আলাদা আলাদা ফ্লোরে হাজার হাজার মুসল্লির মসজিদুল হারাম এর একই জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। এখানেও খুব আরামে নামাজ পড়তে পারবেন।
মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববী দুই জায়গাতেই পুরুষ ও নারীদের নামাজের জায়গা আলাদা। মসজিদে ঢোকার জন্য পুরুষ ও নারীদের আলাদা গেট রয়েছে। আপনি আপনার নারী সাথিকে নারীদের জন্য নির্দিষ্ট যেকোনো গেট দিয়ে ঢুকিয়ে দিন এবং গেট নম্বরটি দুজনই মনে রাখুন। নামাজ শেষে এই গেটে আসলে আপনারা আবার একত্র হতে পারবেন। এ ছাড়া যোগাযোগ রক্ষার্থে দুজনের কাছেই মোবাইল ফোন থাকা জরুরি।
অনেক হজযাত্রী যে হোটেলে অবস্থান করছেন, এর আশপাশের কোনো ছোট মসজিদে নামাজ পড়ে ফেলেন। অনেকে আবার হোটেল থেকে বের হয়ে চার-পাঁচ মিনিট হাঁটার পর রাস্তাতেই জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজের জন্য বসে পড়েন। আপনি দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করে পবিত্র মক্কা শহরে আসতে পারলেন আর ১৫-১৬ মিনিট হেঁটে মসজিদুল হারামে যেতে পারবেন না? মহান আল্লাহ তাআলা যেন সব হজযাত্রীকে মসজিদুল হারামে পরিপূর্ণভাবে নামাজ পড়ার তৌফিক দেন। আমিন।
সম্মানিত হজযাত্রীদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে হজের জন্য রওনা দেওয়া থেকে শুরু করে ফিরে আসা পর্যন্ত পুরো সময়টা আপনাকে পদে পদে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। হজ ক্যাম্প, বিমানবন্দর, খাবারের দোকান, টয়লেট—সব জায়গাতেই আপনাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে। পবিত্র কোরআন শরিফে আল্লাহ্ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ আপনাকে ধৈর্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। হজ ক্যাম্পেই ইমিগ্রেশন-সহ বিমানবন্দরের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হবে। আপনাদের মালপত্র এখানেই নিয়ে নেবে। এ জন্য এখানে আপনাকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। অনেকে লাইন ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কেউ কেউ হজ ক্যাম্পে কর্মরত কোনো পরিচিত লোকের সুবাদে আগেভাগেই কাজ সেরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। এসব করে ওখানকার শৃঙ্খলা নষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। আপনি বরং একটা কাজ করতে পারেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে না থেকে আশপাশে অনেক চেয়ার পাতা আছে, সেগুলোতে বসে অপেক্ষা করুন। যখন দেখবেন লাইন ছোট হয়ে এসেছে, তখন লাইনে দাঁড়ান। আপনাকে ছেড়ে তো আর প্লেন চলে যাচ্ছে না। জেদ্দা বিমানবন্দরেও আপনাকে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বিশেষ করে হজ শেষে ফেরার সময় অনেক বেশি সময় লাইনে দাঁড়াতে হয়। কারণ, তখন হাজিদের অনেকক্ষণ ধরে তল্লাশি করা হয়। যেন হাজিরা হজ করে ফিরছেন, না কোনো অবৈধ কাজ করে ফিরছেন। এখানেও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। যাঁরা লাইন ভেঙে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন, তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হবেন না। যাওয়ার দিন জেদ্দা থেকে মক্কা যাওয়ার বাসে ওঠার আগে বাংলাদেশের হাজিদের জন্য বিমানবন্দরের নির্ধারিত জায়গায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এখানে প্রচণ্ড গরম এবং শীতাতপনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। তবে বাথরুম ও অজুখানার সুন্দর ব্যবস্থা আছে।
মসজিদুল হারাম, মসজিদুল নববীর চত্বর, মিনা ও আরাফাতে পর্যাপ্ত টয়লেটের ব্যবস্থা আছে। তবুও এসব জায়গায় আপনাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে। টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজন হওয়ার কিছুক্ষণ আগেই টয়লেটের উদ্দেশে রওনা দিন, সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়ান এবং বৃদ্ধ, দুর্বল ও অসুস্থ লোককে অগ্রাধিকার দিন। খাবার কিনতে হলেও আপনাকে লাইনে দাঁড়াতে হবে। সাধারণত জোহর ও এশার নামাজের পর খাবারের দোকানে প্রচণ্ড ভিড় হয়। পারতপক্ষে এ দুটি সময় বাদ দিয়ে খাবার কিনতে যাবেন। এ জায়গাতেও লাইন ভাঙা লোকের দেখা পাবেন। তাঁদের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত না হয়ে ধৈর্য ধারণ করুন।
সম্মানিত হজযাত্রীদের একটা কথা মনে রাখতে হবে যে আপনি একটি ফরজ ইবাদত পালন করার জন্য যাচ্ছেন। যে ইবাদত কবুল হলে তার প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। অতএব, অত্যন্ত বিনয় ও নম্রতা সহকারে আল্লাহ তাআলার নৈকট্যলাভের আশা পোষণ করে হজযাত্রা করবেন।