সর্ব রোগহারী আমলকী!

.
.

এমন কোনো ওষুধ কি আছে যা সব রোগে কাজ করবে? এর উত্তর হলো, না নেই। তবে যাঁরা এমন ওষুধ খুঁজছেন, আমলকী তাঁদের প্রয়োজন অনেকখানি মেটাতে পারে। রোগের নিদান দিতে না পারলেও আমলকী প্রায় সব রোগ দূরে রাখতে সহায়তা করে। ইদানীং সুপার ফুড বলে একটা কথা চালু হয়েছে। যে ফল বা খাবারের গুণাগুণ সাধারণ ফলের তুলনায় অনেক বেশি, সেসব ফলেরই এমন তকমা মেলে। আমলকীর গুণাগুণের কথা বিবেচনা করলে একে সুপার ফুডের চেয়েও এগিয়ে রাখা যায়।
আমলকীতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ১০০ গ্রাম আমলকীতে ভিটামিন সি আছে ৪৬৩ মিলিগ্রাম। আমলকীতে পেয়ারার তিন গুণ ও কাগজি লেবুর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। এ ছাড়া কমলার চেয়ে ১৫, আপেলের চেয়ে ১২০, আমের চেয়ে ২৪ ও কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে এতে।
২০০৭ সালে ভারতের বিজ্ঞানী ​েক তারভাদি ও ভি আগতে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকলেও এর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট গুণাগুণের পেছনে অন্য পুষ্টি উপাদানের ভূমিকাই বেশি। তাঁদের মতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টরূপে কার্যকারিতার পেছনে মূল ভূমিকা রাখে এলাজিটানিন নামক কিছু পদার্থ। এতে আরও আছে পানিক্যাফোলিন ও পলিফেনল। ফলে ডায়বেটিস, ক্যানসার, লিভারের রোগ ইত্যাদি সবই প্রতিরোধ করে এই ফল।

এক নজরে আমলকীর উপকারিতা: শরীরে ভিটামিন-সির ঘাটতি মেটাতে আমলকীর জুড়ি নেই। ভিটামিন সি–এর অভাবে যেসব রোগ হয়, যেমন: স্কার্ভি, মেয়েদের লিউকেরিয়া, অর্শ প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমলকী খেলে উপকার পাওয়া যায়। হৃদরোগীরা আমলকী খেলে ধড়ফড়ানি কমবে। টাটকা আমলকী তৃষ্ণা মেটায়, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া বন্ধ করে, পেট পরিষ্কার করে। আমলকী খেলে মুখে রুচি বাড়ে। এ ছাড়া পেটের পীড়া, সর্দি, কাশি ও রক্তহীনতার জন্যও খুবই উপকারী। পিত্তসংক্রান্ত যেকোনো রোগে সামান্য মধু মিশিয়ে আমলকী খেলে উপকার হয়। বারবার বমি হলে শুকনো আমলকী এক কাপ পানিতে ভিজিয়ে ঘণ্টা দুই বাদে সেই পানিতে একটু শ্বেত চন্দন ও চিনি মিশিয়ে খেলে বমি বন্ধ হয়। নিয়মিত কয়েক টুকরো করে আমলকী খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে। আমলকী খিদে বাড়ায়, শরীর ঠান্ডা রাখে। বিভিন্ন ধরনের তেল তৈরিতে আমলকী ব্যবহার হয়। আমলকী থেকে তৈরি তেল মাথা ঠান্ডা রাখে। কাঁচা বা শুকনো আমলকী বেটে একটু মাখন মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। কাঁচা আমলকী বেটে রস প্রতিদিন চুলে লাগিয়ে দুই তিন ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। এভাবে এক মাস মাখলে চুলের গোড়া শক্ত হবে। চুল ওঠা এবং তাড়াতাড়ি চুল পাকা বন্ধ হবে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ওষুধের মতো উপকার করে আমলকী।

লেখক, প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা

চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল