সব খেয়েও যেভাবে ডায়েট করবেন
ডায়েটের নামে আমরা অনেক খাবারই খাদ্যতালিকা থেকে একেবারে বাদ দিয়ে দিই। পছন্দের খাবার খেতে মন চাইলেও ওজন বাড়ার ভয়ে খেতে পারি না। এমনটা করা উচিত নয়। খাদ্যের পরিমাণের ওপর রাশ টানলেই ওজন ও স্বাস্থ্য দুই–ই ভালো রাখা সম্ভব। চলুন জেনে নিই, কীভাবে নিজের পছন্দের সব খাবার খেয়েও শরীরের ওজন, রোগ ও অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
খাবারের ক্যালরি ব্যালেন্স করা শিখুন। যেমন, সারা দিন আপনার দেহের কত ক্যালরি প্রয়োজন, সেটা নির্ধারণ করতে পারলে ব্যালেন্স করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। দুপুরে কোনো দাওয়াত থাকলে সকালে ও রাতে কম ক্যালরির হালকা খাবার গ্রহণ করুন। বিকেলে বাইরে খেতে গেলে রাতের খাবার একেবারে সাধারণ করে ফেলুন। যেমন দুপুরে বেশি খেলে রাতে নিজের জন্য শুধু এক কাপ লো–ফ্যাট দুধ রাখতে পারেন। তবে ভারসাম্য বজায় রেখে ক্যালরি গ্রহণ করা শিখতে হলে প্রথমে ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে আলোচনা করুন। তার কাছে আপনার পছন্দের খাবারগুলোর নাম বলুন। এগুলো রেখেই তিনি আপনাকে একটা তালিকা করে দেবেন।
পছন্দের খাবারগুলো বাইরে থেকে না কিনে বাড়িতে তৈরি করে খান। এতে কিছুটা হলেও ক্যালরি এবং খাদ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব। কারণ, বাইরের খাবারগুলোয় বিভিন্ন রং, টেস্টিং সল্টসহ নানা ক্ষতিকর উপকরণ মিশিয়ে আর্কষণীয় করা হয়। একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়। সেসব খাবার বাসায় টেস্টিং সল্ট বা কোনো কেমিক্যাল ব্যবহার না করে, পরিষ্কার তেল ব্যবহার করে তৈরি করলে কিছুটা ব্যালেন্স করা সম্ভব।
প্রতিদিন ব্যায়াম করার বিকল্প নেই। যেদিন অতিরিক্ত খাবার বা অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করবেন, সেদিন ব্যায়াম ও হাঁটা প্রতিদিনের তুলনায় কিছুটা বাড়িয়ে দিতে হবে। এই বাড়তি সময় হবে ততটুকু, যতটা ক্যালরি বাড়তি গ্রহণ করলেন, তা যেন ঝরিয়ে ফেলতে পারে আপনার শরীর।
অনেক রোগে অনেকেই মনে করেন যে এই খাবার, ওই খাবার একেবারে খাওয়া যাবে না। কিন্তু কোন খাবার কতটুকু গ্রহণ করবেন, তার ওপর নির্ভর করে (ব্যালেন্স করেও) রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেমন অনেকেই মিষ্টি ফল ও খাবার পছন্দ করেন। কিন্তু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে অনেকেই নির্বিচার মিষ্টি খাবার বা মিষ্টি ফল গ্রহণ করতে নিষেধ করেন, যেটা অনুচিত। কারণ, রক্তে চিনির মাত্রা বিচার করে পরিমিত ও সময়মতো মিষ্টি ফল বা মিষ্টিজাতীয় খাবার গ্রহণ করা যায়।
রান্নার পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটিয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবারকে স্বাস্থ্যকর করে তোলা যায়। সে জন্য স্বাস্থ্যকর রান্নার কৌশল শিখতে হবে। যেমন: ডুবো তেলে কিছু না ভেজে কম তেলে শ্যালো ফ্রাই বা গ্রিল করা যায়। আজকাল ডুবো তেলে ভাজা খাবার তেল ছাড়া এয়ারফ্রায়ার দিয়েও ভেজে খাওয়া যায়। মাংস বা মাছ ভেজে বা মসলা দিয়ে কষিয়ে রান্না না করে, কম তেল–মসলায় রান্না করা যেতে পারে। কিংবা একই খাবার কিছু উপকরণ ও খাবারের পদ্ধতির পরিবর্তন করে রান্না করলে ক্যালরি কমানো সম্ভব। ইউটিউবের যুগে এমন রন্ধন–পদ্ধতি আয়ত্ত করা খুব একটা কঠিন না। লাল মাংস (গরু,খাসি ইত্যাদি) অনেকেই পছন্দ করেন কিন্তু রোগের জটিলতায় খেতে পারেন না। খুব ইচ্ছা করলে তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে মাসে দুই–এক দিন সেসব গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু রান্নার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে রাঁধতে হবে। দৃশ্যমান জমানো চর্বি বাদ দিয়ে রান্না করতে হবে। সেই রান্না হবে কম তেলে। মাংস রান্নার আগে সম্ভব হলে ৫-১০ মিনিট মাংস সেদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে, তাহলে চর্বির অংশ অনেকটা কমে যাবে। উচ্চ তাপে রান্না করতে হবে। রান্নার সময় ভিনেগার, টক দই, পেঁপেবাটা বা লেবুর রস ব্যবহার করতে পারেন। এতে চর্বির ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমবে। আবার মাংসের সঙ্গে বিভিন্ন সবজি যেমন কাঁচা পেঁপে, লাউ, চালকুমড়া, টমেটো কিংবা মাশরুম দিয়ে রান্না করলে লাল মাংসের ঝুঁকি কিছুটা কমানো সম্ভব। মাংসের সঙ্গে সবজি মিশিয়ে কাটলেট বা চপ করে খেতে পারেন।
পরিমাণ মেপে খাবার গ্রহণ করুন। যে–ই খাবারই হোক, মাত্রাতিরিক্ত খাবেন না। বাইরে কোনো খাবার খেতে গেলে বা পছন্দমতো কোনো ভারী খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই সামান্য কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার বাসা থেকে খেয়ে বের হওয়ার অভ্যাস করুন। কোনো বাসার দাওয়াতে গেলেও এই অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। পেট কিছুটা ভরা থাকলে আপনি বাইরে গিয়ে কম খাবেন। হতে পারে সেটা একমুঠো বাদাম বা এক বাটি সালাদ। এতে ইচ্ছা করলেও পছন্দের বা অস্বাস্থ্যকর খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করতে পারবেন না।