অন্তর্জালের রঙিন দুনিয়ায় ঘুরে বা টেলিভিশন দেখতে বসলে সময় পার হয়ে যায় দ্রুত। যার ফলে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত দুপুর। আর সকালে ঘুম থেকে উঠতেই ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১০টা বা তারও বেশি। ফলাফল সকালের নাশতা পেটে না দিয়েই অফিস বা ক্লাসের পথে দৌড়। অথচ সকালে ওঠার অভ্যাস বদলে দিতে পারে অনেক কিছুই। বারডেম জেনারেল হাসপাতালের ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী বলেন, ‘সারা দিন উজ্জীবিত থাকতে চাইলে অবশ্যই সকালে ওঠা উচিত। ভোরে ওঠার অভ্যাস গোটা দিনটাকে আরও একটু বড় করে দেয়। সুস্থ থাকার জন্য সকালে একটু হাঁটা, ব্যায়াম করা, সময় নিয়ে আমিষসমৃদ্ধ নাশতা খাওয়া দরকার; যেটা সম্ভব হয় সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারলে। নিজের জন্যও একটু পরিচ্ছন্ন সময় পাওয়া যায় ভোরে উঠলে। যাঁরা ভাবেন ভোরে ওঠা অসম্ভব, তাঁদের জন্য বলব, অভ্যাসই মানুষের স্বভাব গঠন করে।’
রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে পরিপূর্ণ প্রাতরাশ (নাশতা) করা জরুরি। সকালে ঘুম থেকে উঠলে ঠিকমতো অফিস করে সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় ফিরে আসা সম্ভব। যে কারণে পরের পুরোটা সময় পরিবারের জন্য রাখা যায়। পরিবারসহ রাতের খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা যায়। সকালে উঠে শান্ত একটা পরিবেশে নিজের সারা দিনের পরিকল্পনা সাজিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। ফোর্বস সাময়িকীর একটি নিবন্ধ বলছে, মন ও শরীর ভালো রাখতে অধিকাংশ ব্যস্ত ও সফল লোকেরা সকালে উঠেই ব্যায়াম করেন। সকাল সকাল অফিসে এলে যানবাহনের জটলা থেকে মুক্তি মিলবে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য হাঁটা ও সকালে ঠিকমতো নাশতা করা দরকার। তাই সকাল সকাল ওঠার অভ্যাস না থাকলে কোনোটিই ঠিকমতো কাজে দেবে না।
সকালে ওঠার জন্য
যাঁরা নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠতে চান, তাঁদের জন্য কিছু পরামর্শ থাকছে এখানে—
* রাত জেগে টেলিভিশন দেখার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। এমনকি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামসহ ইন্টারনেটের রাতজাগা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
* শোয়ার ঘর থেকে কম্পিউটার বা মুঠোফোন দূরে রাখুন।
* ঠিকমতো ঘুমানোর জন্য ঘরের পরিবেশও ঠিক রাখা প্রয়োজন। ঘর অন্ধকার ও ঠান্ডা থাকলে ঠিকমতো ঘুমানো যাবে।
* রাতের খাবার আটটা থেকে নয়টার মধ্যেই শেষ করতে হবে। এরপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ঘুমাতে যান।
* একজন সুস্থ মানুষের জন্য আট ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। তাই সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়লে অনেক সকালেই ঘুম থেকে ওঠা যাবে।
* সকালে ওঠার অভ্যাস করার জন্য অ্যালার্ম ঘড়ি রাখতে পারেন শোয়ার ঘরে। তবে ঘড়িটা অবশ্যই খাট থেকে খানিকটা দূরে রাখুন, যাতে করে সেটা বাজলে উঠে গিয়ে বন্ধ করতে হয়।
* সকালে ওঠার অভ্যাসের শুরুতেই বড়সড় পরিবর্তন না করে সময় নিয়ে অভ্যাস করুন। প্রথম দিকে নিয়মিত সময়ের ৩০ মিনিট আগে ওঠার চেষ্টা করুন। এর কয়েক দিন পরে আবার ১৫ মিনিট এগিয়ে নিন। এভাবে ওঠার চেষ্টা করলে সেটা সহজেই অভ্যাসে রূপ নেবে।
* সকালে দ্রুত ওঠার জন্য আগেভাগে ঘুমিয়ে পড়া দরকার। তাহলে ঘুমের সমস্যা হবে না।
* অ্যালার্ম বাজার পর মস্তিষ্ককে ভাবার সময় না দিয়ে দ্রুত উঠে রুমের বাইরে চলে আসুন। সকালে উঠেই ব্রাশ করা বা অন্য কোনো কাজ শুরু করুন।
* সকালে নিজের জন্য একটা ভালো উপলক্ষ তৈরি রাখুন। যেমন গান শোনা, লেখার অভ্যাস ইত্যাদি; যা নিজেকে আকৃষ্ট করবে এমন কোনো বিষয় ভেবে রাখুন।
* সকালে উঠে মানসিক প্রশান্তির জন্য নিজেই একটু চা-কফি তৈরি, সূর্যোদয় দেখা, বাগান করা, নাশতা তৈরি বা বই পড়ার মতো কাজও করতে পারেন।
* বেশি রাত করে ঘুমালে চেহারায় তার ছাপ পড়ে আর দ্রুত ঘুমিয়ে সকালে উঠলে চেহারা ও মন ভালো থাকে।
সূত্র: ফোর্বস ও জেন হ্যাবিটস