শখের ছবিতে সম্মাননা

রনি বড়ুয়া
রনি বড়ুয়া

ট্রেনের দুই বগির মাঝখানে সামান্য ফাঁকা জায়গাটুকুতে বসে আছেন পাঁচজন মানুষ। একটু এদিক-সেদিক হলেই ঘটতে পারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নানা বয়সী মানুষের ভ্রমণরত এই ছবি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী রনি বড়ুয়া। সম্প্রতি তাঁর ছবিটি জাপানে আশাহি শিম্বুন প্রতিযোগিতায় বিচারকের বিশেষ পুরস্কার জিতেছে। এই বিভাগে বাংলাদেশের রনির সঙ্গে ইরানি ও ফরাসি দুজন আলোকচিত্রীও পেয়েছেন পুরস্কারটি।

আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে মূলত জাপান আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে ছবি বাছাইয়ের জন্য। জাপানের বহুলপ্রচারিত দৈনিক আশাহি শিম্বুন এই আয়োজনের পৃষ্ঠপোষক, তাদের সঙ্গে আছে অল জাপান অ্যাসোসিয়েশন অব ফটোগ্রাফিক সোসাইটি। প্রতিযোগিতার এবারের আসর ৭৮তম। এর শুরু আশাহি শিম্বুন-এর উদ্যোগে ১৯২৭ সালে; তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বছরগুলোতে কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।

পুরস্কারের পদক নিতেই রনি বড়ুয়া গিয়েছিলেন জাপানে। ফিরেছেন ২৬ মার্চ। তাঁর সঙ্গে কথা হলো ২৭ মার্চ। তখনো পুরস্কার পাওয়ার উচ্ছ্বাস এতটুকু কমেনি। ‘ভ্রমণ’ শিরোনামের পুরস্কার বিজয়ী সেই ছবি তোলার গল্পই শোনালেন আলাপের সময়। তিনি বলছিলেন, ‘২০১৬ সালের কোনো এক সময়ের ঘটনা। ট্রেনের ছাদে চড়া যাত্রীদের ওপর প্রামাণ্যচিত্রের কাজ করছিলেন আলোকচিত্রী জাকিরুল মাজেদ ভাই। আমিও তাঁর সঙ্গেই তখন। দেখলাম একটি পরিবার হন্তদন্ত হয়ে ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু অতিরিক্ত ভিড় থাকায় বগিতে উঠতে না পেরে ঠাঁই নিল দুই বগির মাঝে সংযোগ অংশে। ট্রেন ততক্ষণে চলতে শুরু করেছে। চলন্ত ট্রেনের ছাদে হেঁটে ওই ফাঁকা অংশের দিকে এগিয়ে গেলাম। দেখলাম জড়সড় হয়ে মানুষগুলো বসে আছে। ছবি তুললাম।’ ক্যানন ৭০ডি মডেলের ক্যামেরায় তোলা সে ছবিতেই জাপানের আশাহি সিম্বুন ছাড়াসহ ছয়টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন রনি বড়ুয়া।

৩৪ বছর বয়সী এই আলোকচিত্রী ঢাকায় অস্ট্রেলীয় একটি প্রতিষ্ঠানের সফটওয়্যার প্রকৌশলী। ভ্রমণপাগল মানুষ বলে কাজের ফাঁকে ফুরসত পেলেই বেরিয়ে পড়েন। শুধু ঘুরেই বেড়ান না, শখের বশে ছবিও তোলেন। আর এই শখের ছবিতেই এসেছে সম্মাননা।

রনি বড়ুয়ার তোলা ‘ট্রাভেল’ নামের এই ছবি জাপানে পুরস্কার জিতেছে
রনি বড়ুয়ার তোলা ‘ট্রাভেল’ নামের এই ছবি জাপানে পুরস্কার জিতেছে



বাংলাদেশি আট বিজয়ী
আন্তর্জাতিক বিভাগে বিচারকের বিশেষ পুরস্কার ছাড়াও সম্মানসূচক পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশের ৭২ জন আলোকচিত্রীকে এ বছর সম্মানসূচক পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যাঁদের মধ্যে বাংলাদেশের আটজন আলোকচিত্রী এই পুরস্কার পেয়েছেন। মিথুন ঘোষের ছবিটির নাম ‘ফাইন্ডিং লাইফ ফর গারবেজ’; ‘ফর সারভাইভাল’ নামে মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের তোলা ছবিতে দেখা যাচ্ছে আবর্জনার স্তূপে দুজন শিশু; মোহাম্মদ এনামুল হকের তোলা বয়স্ক বৃদ্ধার ছবিটির নাম ‘বটবৃক্ষ’; এ এন এম জিয়ার তোলা বাংলাদেশে পাড়ি জমানো মুহূর্তে রোহিঙ্গা শরণার্থীর ছবি ‘আফটার ডেথ জার্নি’; কে এম আসাদের ছবিটি ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেনযাত্রা নিয়েই, এটির নাম ‘রিস্কি জার্নি’; আটকে থাকা মাছসুদ্ধ জাল হাতে দাঁড়ানো এক নারীর ছবিটির নাম ‘স্মাইলিং ক্যাচ’, এটার জন্য পুরস্কার পেয়েছেন মাসুদুর রহমান; নাজমুল হক খানের ‘দ্য সারভাইভার’ শিরোনামে ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে পানিতে ডুবে থাকা পথে সাইকেল নিয়ে চলছেন একজন মানুষ; বাদল চন্দ্র সরকারের ছবিটি সদ্য তোলা শাপলা ফুলের আঁটির মধ্যে শুয়ে থাকা হাস্যোজ্জ্বল শিশু। আলোকচিত্রী এর নাম দিয়েছেন ‘স্মাইল ফর স্যাটিসফ্যাকশন’।

মোহাম্মদ এনামুল হকের ছবি ‘বটবৃক্ষ’
মোহাম্মদ এনামুল হকের ছবি ‘বটবৃক্ষ’
বাদল চন্দ্র সরকারের ‘স্মাইল ফর স্যাটিসফ্যাকশন’
বাদল চন্দ্র সরকারের ‘স্মাইল ফর স্যাটিসফ্যাকশন’
মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের আলোকচিত্র ‘ফর সারভাইভাল’
মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের আলোকচিত্র ‘ফর সারভাইভাল’
মিথুন ঘোষের ‘ফাইন্ডিং লাইফ ফর গারবেজ’
মিথুন ঘোষের ‘ফাইন্ডিং লাইফ ফর গারবেজ’
এ এন এম জিয়ার ‘আফটার ডেথ জার্নি’
এ এন এম জিয়ার ‘আফটার ডেথ জার্নি’
কে এম আসাদের ‘রিস্কি জার্নি’
কে এম আসাদের ‘রিস্কি জার্নি’
মাসুদুর রহমানের ‘স্মাইলিং ক্যাচ’
মাসুদুর রহমানের ‘স্মাইলিং ক্যাচ’