যেভাবে ৯৮ থেকে ৩০ কেজি ওজন কমিয়েছিলেন সোনাক্ষী
‘বডি পজিটিভিটি’ নিয়ে বলিউডে সবচেয়ে বেশি সরব কে? উত্তরটা সহজ! সোনাক্ষী সিনহা। শরীর নিয়ে তাঁকে যত কটু কথা শুনতে হয়েছে, তা সামাল দিতে গিয়ে টুইটার অ্যাকাউন্টই ডিলিট করে দিয়েছেন, ইনস্টাগ্রামের মন্তব্যের উঠানে সাময়িকভাবে তালা ঝুলিয়েছেন আর নিয়েছেন বিশেষজ্ঞের কাউন্সেলিং। বলিউডের খাতায় নাম লিখিয়ে ‘দাবাংকন্যা রাজ্জো পান্ডে’ হওয়ার আগে ৩০ কেজি ওজন ঝরিয়েছিলেন সোনাক্ষী। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই ‘লুটেরা’ তারকার বর্তমান ওজন ৭০ কেজি। কিন্তু বলিউডে পা রাখার আগে সোনাক্ষীর ওজন ছিল ৯৮ কেজি। ৩০ কেজি ওজন ঝরিয়ে ৬৮ কেজি হয়ে তবেই ‘আঙ্কেল’ (তখন সোনাক্ষী সালমানকে আঙ্কেল বলেই ডাকতেন) সালমান খানের নায়িকা হয়েছিলেন। তবুও সমালোচকদের মুখ বন্ধ রাখতে পারেননি তিনি। কেননা, তথাকথিত বলিউডের নায়িকাদের মতো শরীর তাঁর নয়। তিনি এর চেয়ে শুকাতেও চাননি। শোনা যাক, সোনাক্ষীর ফিটনেসের গল্প।
২০০৮ সাল থেকে সোনাক্ষী চিকিৎসক, ডায়েটিশিয়ান আর শরীরচর্চা বিশেষজ্ঞদের একটি দল বানিয়ে ওজন ঝরানোর যাত্রা শুরু করেন। তিনি কখনো ‘জিম ভক্ত’ ছিলেন না। সেই তিনি ভোরে উঠে ছোটা শুরু করলেন জিমে। নম্রতা পুরোহিতের অধীনে শরীরচর্চা শুরু করেন। সকালে খালি পেটে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট কার্ডিও করেন। এরপর ২০ মিনিট জোরে হাঁটা। তারপর ট্রেডমিলে দৌড়ানো। প্রথম যখন ট্রেডমিলে দৌড়ানো শুরু করেন, তখন ৩০ সেকেন্ডও টিকতেন না। ঘেমে–নেয়ে হাঁপিয়ে উঠতেন। সেই সময়ই সোনাক্ষী প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, যে করেই হোক, ওজন ঝরিয়ে ঝরঝরে হতে হবে। সোনাক্ষীর ভাষায়, ‘বলিউড তো পরের কথা, আমি যদি ওজন না ঝরাতে পারি, তাহলে তো কয়েক দিন পর মরেই যাব। আমার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য আর সুস্থ হওয়ার জন্য আমি কড়া ডায়েট আর ব্যায়াম শুরু করি।’
শুরুতেই সোনাক্ষী চিনি আর ভাজাপোড়া ছেড়ে দেন। যদিও বাইরের ভাজাপোড়া খাওয়ার পোকা ছিলেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে রুটিন ঠিক করে ফেলেন। শর্করা কমিয়ে দেন। প্রোটিনের পরিমাণ বাড়ান। রাতের খাবার খান সন্ধ্যা সাতটার ভেতর। প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর হালকা কিছু খেতেন। চিটমিলে কেবল খেতেন পিৎজা। সেটিও কমিয়ে আনেন। খুব খিদে পেলে হাত বাড়াতেন বাদাম, বুট, শস্যদানা বা কলার দিকে।
সোনাক্ষীর ডায়েট তালিকা
ভোর ৬টায়: এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চামচ মধু আর একটি লেবুর রস।
সকাল ৮টার নাশতায়: হোমমেড সিরিয়াল, ময়দার তৈরি টোস্ট, লো ফ্যাট মিল্ক আর এক গ্লাস ব্ল্যাক কফি।
সকাল ১০টায়: শুকনো ফল ও এক কাপ গ্রিন টি
দুপুরের খাবার: বাসায় বানানো রুটি, সবজি আর সালাদ
সন্ধ্যার নাশতা: এক বাটি বিভিন্ন পদের ফল আর গ্রিন টি
রাতের খাবার: ডাল, সবজি, এক পিস মুরগি বা গ্রিল করা মাছ
সন্ধ্যা ৬টার পর শর্করা জাতীয় কিছু খান না সোনাক্ষী।
সোনাক্ষীর শরীরচর্চার নিয়মাবলি:
প্রতিদিন সকালে উঠে ঘরেই সেরে ফেলেন কার্ডিও। এরপর করেন ওয়েট ট্রেনিং। সপ্তাহে এক দিন সাইকেল চালান। এক দিন স্পিনিং (দড়িলাফ) করেন। এক দিন সাঁতার কাটেন। এক দিন টেনিস খেলেন। সপ্তাহে দুই দিন জিমে যান। সপ্তাহে তিন দিন করেন যোগব্যায়াম।
ক্যারিয়ারের একেবারে শুরু থেকেই নিজের শরীর নিয়ে কত যে কটু কথা শুনতে হয়েছে সোনাক্ষী সিনহার, তার ইয়ত্তা নেই। শুরুতে সব সমালোচনা ইতিবাচকভাবেই নিয়েছেন এই দাবাংকন্যা। তবে একসময়ে ধৈর্যের বাঁধও ভেঙেছে। সমালোচনাকারীদের একহাত নিতেও সময় লাগেনি ৩৪ বছর বয়সী এই বলিউড তারকার।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সোনাক্ষী বডি শেমিং আর ওজন ঝরানোর যাত্রা নিয়ে বলেন, ‘আমি সব সময়ই মোটা বাচ্চা ছিলাম। অতিরিক্ত ওজন নিয়েই জন্মেছিলাম। তাই অতীতের কোনো ছবিতেই আমাকে ফিট দেখাবে না। যখন স্কুলে পড়ি, তখন আমার ওজন ছিল ৯৫ কেজি। আমি বড় হয়েছি “বুলিং”, “বডি শেমিং”–এর শিকার হয়ে। খুব কম বন্ধুই আমাকে আমার নিজের নামে ডেকেছে। সব সময় মোটি, মোটু, হাতি, ফ্যাটার—এগুলোই ছিল আমার নাম। কিন্তু আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি, আমি কেবল আমার ওজন আর আকৃতি নই। আমি এর বাইরে অনেক কিছু। অতিরিক্ত ওজন ঝরাতে আমি অভাবনীয় কষ্ট করেছি। আর এখন আমি নিজের শরীর নিয়ে আত্মবিশ্বাসী!’